দেশ বিদেশ

ধর্মান্ধতার বলি হলেন আফগান সমাজকর্মী ফ্রেশতা কোহিস্তানি।


কল্পনা গুপ্ত, নিজস্ব প্রতিবেদন::চিন্তন নিউজ: ২৬/১২/২০২০ –  কোন দেশের গণতন্ত্র যখন গভীরভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তাকে বাঁচাতে সর্বদা এগিয়ে এসেছেন লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক বন্ধুরা। আক্রান্তও হয়েছেন যুগে যুগে। আমাদের দেশেও বৈদিক সভ্যতার প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ খ্রীস্টপূর্ব ১৫০০ বৎসর পূর্বে সমাজে নারীর সমানাধিকার ছিলো, জাত প্রথা ছিলো না। এক যথার্থ সামাজিক সাম্যের আদর্শ অবস্থা ছিলো। একথা আজকের প্রবল অসাম্যের নীতির ধারক কেন্দ্রের সরকারেরও অস্বীকার করার উপায় নেই,  কারণ তার প্রমাণ ইতিহাসেই মেলে।

যারা অন্ধভাবে ধর্মীয় বিভাজনে বিশ্বাসী তাদের প্রধান অস্ত্র হলো সমাজে নারীর স্বাধীনতা প্রথমেই কঠিনভাবে হরণ করে নেওয়া। তারা নীচভাবে চিহ্নিত করে নারীর স্থান অন্তঃপুরে সেবিকা আর সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসাবে। এই মতাদর্শ হিন্দু, মুসলমান ও অন্যান্য জাতির মধ্যেও আছে, এক ভয়ংকর পশ্চাৎপদ পিছুটান হিসাবে। মুসলিম দুনিয়া উলোটপালোট করে দিচ্ছে এইরকম তালিবানি দলগুলো।

আফগানিস্তানে কপিসা প্রদেশের কোহিস্তান জেলার হেস- ই- আওয়াল এলাকার দানহো গ্রামে বসবাস করতেন সমাজকর্মী ফ্রেশতা।নারীর অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব ছিলেন ফ্রেশতা। বৃহস্পতিবার  বিকেল ৫ টায় তাঁর  নিজের বাড়ির সামনে খুন হলেন ফ্রেশতা কোহিস্তানি। মোটরবাইকে চেপে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতিরা তাঁর ওপর পরপর গুলি চালায়। তাঁর ভাই সহ তিনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে মারা যান।  কোন সংগঠনই এখনও এর দায় স্বীকার করেনি।

২৯ বছরের ফ্রেশতা দীর্ঘদিন ধরে নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করে চলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবদুল্লা আবদুল্লার হয়ে প্রচার কাজও করেছিলেন। আফগানিস্তানের শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়ায় আবদুল্লার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তালিবানের সাথে আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি বৈঠক চলাকালীন সময়ের মধ্যেই সেখানকার সাংবাদিক, রাজনীতিক, সমাজকর্মীদের ওপর হামলা, খুন চালানো হচ্ছে।

ফ্রেশতার খুনের তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। আভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র তারিক আরিয়ান এই খুনের তীন্র নিন্দা করেছেন।  ফ্রেশতাকে যেভাবে খুন করা হয়েছে একেবারে একই ভাবে খুন হচ্ছেন বহু বিশিষ্ট জন। বুধবার দিনের আলোয় খুন হন মহম্মদ ইউসুফ যিনি নির্বাচনী দুর্নীতি সংক্রান্ত্র তদন্তকারী এক সংগঠন চালাতেন। খুন হন সাংবাদিক রহমতুল্লা নেকজাদ, সমাজকর্মী করিমা বালোচের।

খবরটির শুরুতেই একথা বলেছি যে ধর্মান্ধের কোন দেশ, জাত থাকেনা। তাদের একটিই পরিচয় ‘ ধর্মান্ধ’। তাই আমাদের দেশের জাতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ ধর্মমোহ’ কবিতা যাদের আঘাত করে তারা সেই কালজয়ী মানবতার পূজারীর লেখা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেবার কথা ভাবেন। যাতে দেশের মানুষের চোখে সহজে ঠুলি লাগাতে সুবিধা হয়। তাই ভারতেও বিজ্ঞানকর্মী দাভেলকরকে খুন হতে হয়। তাই সাংবাদিকের মৃত্যু ঘটে, সমাজকর্মীরা নিরাপত্তাহীন হন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মানুষ মরে, নিরাশ্রয় হয়।

মানুষের মধ্যে যদি সাম্য চেতনা না আসে তবে মানব মুক্তি ঘটবে না, সব রাজনীতিই হবে ব্যর্থ।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।