কলমের খোঁচা

জীবন সঁপিয়া জীবনেশ্বর পাবো তব পরিচয়- সেই মৃত্যুঞ্জয়ী বীর শহিদ উধম সিং স্মরণে চিন্তনের শ্রদ্ধার্ঘ্য।


প্রতিবেদনে কল্পনা গুপ্ত:চিন্তন নিউজ:২৬ শে ডিসেম্বর:-  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহীদ মার্ক্সবাদী  বিপ্লবী  উধম সিংএর জন্ম পাঞ্জাবে সুনাম গ্রামে ১৮৯৯ এর ২৬ শে ডিসেম্বর।  তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং গদর পার্টি, হিন্দুস্তান সমাজতান্ত্রিক রিপাবলিকান সমিতি, ভারতীয় শ্রমিক সমিতির সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়া ছিলো তাঁর সকল কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। বিপুল পরিম্যণ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো যার নির্দেশে সেই ও ডায়ারকে হত্যা করে তিনি শহীদ হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের কারাগারে।

কালের চমকপ্রদ সময়ের মধ্যে জন্মানো নতুন প্রজন্মের ভারতের সঠিক ইতিহাস জানার যে অনাগ্রহ তা ভবিয্যতের এক বিপদজনক ঈঙ্গিতবাহী। বিস্মৃতপ্রায় হয়ে যায় বীর শহীদদের আত্মবলিদান। আজ সংক্ষেপে হ’লেও শহীদ উধম সিং এর কথা তাদের জন্যই লেখা হলো।
খুব অল্প বয়সেই উধম ও তার দাদা পিতৃ- মাতৃহীন হন এবং পাঞ্জাবের এক অনাথ আশ্রমে থাকেন। তাদের কৈশোরে সারাদেশে তখন চলছে বিরাট রাজনৈতিক অস্থিরতা। এইসব উধমের হৃদয়কে আলোড়িত করে তুলতে থাকে। সেই সময়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনী ভারতীয়দের থেকে জোর করে অর্থসংগ্রহ করতে থাকায় পাঞ্জাবে বিপুল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তার ওপর রাওলাট আইনে বিনা বিচারে যে কোন ভারতীয়কে বিপ্লবী সন্দেহে জেলে আটকে রাখতে পারে। এইভাবে ১৯১৯ এর ১০ ই এপ্রিল  সত্য পাল ও সাইফুদ্দিন  কিচলুকে গ্রেফতার করলে পাঞ্জাবে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়। এই সময়েই পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিন্যাল্ড এডওয়ার্ড হ্যারি, ডায়ারের হাতে দায়িত্ব সঁপে দিলেন নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষার। তিনি শহরে কোন ধরণের জনসভা নিষিদ্ধ করেছিলেন। এদিকে গান্ধীজি সারা ভারত ব্যাপী হরতালের ডাক দিলে পাঞ্জাবে তার ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। ফলে গভর্নর মাইকেল ও ডায়ারের নেতৃত্বাধীন  ব্রিটিশ প্রশাসন ভীত  হয়ে পড়ে। ১৩ ই এপ্রিল ১৯১৯ জেনারেল ও’ ডায়ারের নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগের জনসভায় উপস্থিত ভারতীয়ের ওপর গুলি বর্ষিত হয়।  মৃতের সংখ্যা ৩৮০ র ওপরে আর ১২০০ জনের ওপরে আহত হন।

উধম সিং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে  জড়িয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর তিনি নানাপথে,  নানাভাবে  প্রস্তুত হতে থাকেন। ১৯২০ সালে পূর্ব আফ্রিকায় গিয়ে সাধারণ শ্রমিকের কাজ করেন। তারপরে আমেরিকায় চলে যান এবং গদর পার্টির সংস্পর্শে আসেন।  পরে ১৯২৭ এ ভগৎ সিং এর নির্দেশে  ভারতগামী জাহাজে কাঠের কারিগর রূপে কাজ করতে করতে তিনি আবার পাঞ্জাবে ফেরেন। নানাকারণে তিনি অনেকবার কারাবরণ করেন। শেষে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে নাম পাল্টে জার্মানি পৌঁছান। ১৯৩৪ সালে তিনি লন্ডনে যান জেনারেল ডায়ারকে হত্যা করার সংকল্প নিয়ে কারণ ডায়ারের বক্তব্য ছিলো যে সেদিনের হত্যাকান্ডের কর্মসূচি ছিলো সঠিক।

অবশেষে ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে লন্ডনের এক সভাগৃহে অনুষ্ঠান চলাকালীন ডায়ারকে তিনি গুলি করে হত্যা করেন। তাঁকে সাথে সাথেই গ্রেফতার করা হয় ও রিক্সোটন জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সেখানে ৩৬ দিন অনশন করেন। হিন্দু- মুসলমান – শিখ সম্প্রতির  চিহ্ন রূপে তিনি নিজের নাম বলেছিলেন  মহম্মদ সিং আজাদ। তাঁর মৃত্যু দন্ড হয়।  এর দীর্ঘ সময় পরে স্বাধীনোত্তর ১৯৭৪ সালে তাঁর দেহাবশেষ সমাধিস্থ করা হয় তাঁর গ্রাম সুনামে। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উত্তরাখন্ডের একটি জেলার নাম রাখা হয় উধম সিং নগর।

এই ভারতমাতার বীর সন্তানদের  আত্মোৎসর্গে যে অগ্নিপথ রচিত হয় তাতেই ভীত ব্রিটিশরা পশ্চাৎপসরণ করে এবং ভারত স্বাধীনতা প্রাপ্ত হয়। বীর শিহীদ উধম সিং এর উদ্দেশ্যে জানাই লাল সেলাম।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।