চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ২২ নভেম্বর: লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পাশ করাতে উদ্যোগী হয়েছে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী শ্রম আইন। যে শ্রমবিল প্রস্তাবিত হয়েছে তা বিতর্কিত এবং তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এতে কাজের সময়সীমা বাড়িয়ে ৮ ঘন্টার পরিবর্তে ১২ ঘন্টা করা হয়েছে। যদি বেশী সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করাই সরকারের উদ্দেশ্য হোতো তাহলে রাজ্যগুলিতে কাজের সময় বাড়িয়ে ১২ ঘন্টার দুটির পরিবর্তে, ৮ ঘন্টার তিনটি শিফ্ট চালু হতে পারতো।
আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টার বেশি কোনো শ্রমিককে কাজ করানো যাবেনা। ভারতে এই আইনটিকে অগ্রাহ্য করার ফলে সেটি হয়ে উঠেছে মালিকপক্ষের হাতের তুরুপের তাস। এটি একজন শ্রমিকের শ্রমের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দেবে এবং তার জন্যে তারা ওভারটাইম পাবে কিনা, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা বিলে দেওয়া হয়নি।
কেন্দ্রীয় ৪৪টি শ্রম আইনকে কেটে ছেঁটে একসাথে করে নতুন যে চারটি আইনে পরিণত করা হতে চলেছে তাতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষকে দেওয়া হয়েছে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। স্থায়ী কাজকে তুলে দিয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ‘ক্যাজুয়াল’বা মেয়াদী কাজকে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংস্থাকে নিয়ে আসা হচ্ছে শ্রম আইনের সুরক্ষার বাইরে।
নতুন শিল্পআইনে তুলে দেওয়া হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের ন্যুনতম সুরক্ষাবিধি। শ্রমিকদের তথ্যভান্ডার রাখার কোনো ব্যাবস্থা মানা হয়নি। পূর্বে ঠিকাদারদের তালিকা রাখা বাধ্যতামুলক ছিল। ফলে আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকর গলে বেড়িয়ে যাচ্ছে শ্রমিক সুরক্ষার দূর্বল অস্ত্রগুলোও। প্রতিমূহুর্তে কাজ হারানোর আশঙ্কায় ঠিকাদারের হাতের পুতুলে পরিণত হচ্ছে তারা।
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক সুরক্ষা বিধিতে রয়েছে মালিকপক্ষের অবাধ ক্ষমতা। অবিপজ্জনক ক্ষেত্রে ৫০০, বিপজ্জনক ক্ষেত্রে ২৫০ জন শ্রমিক থাকলে ‘সুরক্ষাকমিটি’ তৈরী করার নিয়মটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই না মেনে শ্রমিকদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। নতুন বিলে ৩০০র নীচে শ্রমিক রয়েছে এমন সংস্থায় অবাধ ছাঁটাই, ক্লোজারের ক্ষমতা রয়েছে মালিকপক্ষের। উপরন্তু নয়া আইনে এইসমস্ত সংস্থায় কর্যকরী হবেনা শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী স্ট্যান্ডিং অর্ডার এ্যাক্ট, যা ছিল শ্রমিকদের সুরক্ষাকবচ। এবার ৯০% শিল্প সংস্থা এই আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এইসব ক্ষেত্রে মালিকের সঙ্গে সঠিক লিখিত চুক্তির অভাবে ক্রমেই দাসত্বের ফাঁস গলায় এঁটে বসছে শ্রমিকদের।
ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, যা আমাদের সংবিধান স্বীকৃত, আঘাত আসতে চলেছে তার উপরেও। পরিস্থিতি এমন যে শ্রমিক হারাতে চলেছে তার শেষ অস্ত্র, প্রতিরোধের একমাত্র উপায় ধর্মঘট। সারা ভারত জুড়ে ৭দফা দাবিতে ১০টি শ্রমিক সংগঠনের ডাকে আগামী ২৬শে নভেম্বর ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।