রাজনৈতিক

আতঙ্ক – হিংসা – আতঙ্ক


শুভ্রেন্দু সমাজদার, চিন্তন নিউজ, ৮ এপ্রিল: আতঙ্ক আর হিংসা, এটাই পুঁজিবাদের আধুনিক কর্মসূচি। সমস্যা হচ্ছে পুঁজিবাদের একটা অন্তর্নিহিত সত্য আছে। সেটা হলো গনতন্ত্র ও আধুনিকতা। যদিও এটা এখন মুখোশ। তাই এই মুখোশের আড়ালে আধুনিক কর্পোরেট পুঁজি সাহায্য নেয় ধর্মীয় মৌল শক্তির। সভ্যতা ও বর্বরতার ককটেল সমকালীন পুঁজির রাজনৈতিক দর্শন। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে মানুষকে এক ছাতার নীচে আনার রাষ্ট্রিয় প্রবণতা বিগত কয়েক দশক ধরেই লক্ষনীয়।

করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্করতা কে ব্যবহার করে বিশ্ব জুড়ে আতঙ্কের প্যানডেমিক সৃষ্টি সমকালের ইতিহাসে এক নয়া নজির। এর আগের পর্যায়ের আতঙ্ক গুলি দেখা যেতে পারে ভিন্ন ভিন্ন দেশে আলাদা ভাবে। বলা যায় আতঙ্কের এপিডেমিক। আমেরিকার সমাজজীবনে সন্ত্রাসের ঘটনা শতাব্দী প্রাচীন এবং অন্তহীন। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, বিভিন্ন ধরনের দক্ষিণপন্থী সন্ত্রাসবাদী বা জিহাদী মুসলিমদের দ্বারা সংগঠিত হত্যা লীলা মার্কিন সমাজে চিরস্থায়ী বিষবৃক্ষ। এই সকল ঘটনার প্রতিফলন ঘটে মার্কিন সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন সরকারের সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়া কলাপের ঘটনা অগুন্তি। তেলের দখলে পশ্চিম এসিয়ার বিভিন্ন মৌলশক্তির সাথে সর্পিল সম্পর্ক এক জটিল ও হাস্যকর ইতিহাস তৈরী করেছে। ইউরোপের প্রায় সকল দেশেও সন্ত্রাসের রাজনীতি ক্রমবর্ধমান।প্রার্থনার সময় গির্জা বা মসজিদ আক্রমন কিংবা বিদ্যালয়গুলোতে শিশু নিধন নিরীহ ও সাধারন মানুষের মনে ভীতি ও ঘৃণা উদ্রেকের আবহ তৈরিতে সচেষ্ট।

পুঁজিবাদ ও বুর্জুয়া গনতন্ত্রের পীঠস্থান এ পুঁজির নিয়ন্ত্রণ কায়েমের প্রতিযোগিতায় সুদীর্ঘ কাল ধরে ধর্মীয় মৌলবাদকে কাজে লাগানোর চর্চা ভারতীয় উপমহাদেশেও ক্রম বর্ধমান। বিশেষভাবে বিশ্বয়ানের যুগে। স্বাধীন ভারতে ২০০২ সালে প্রথম বারের জন্য রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়। অন্যদিকে গুজরাটকে নিয়ে বেজে উঠলো ঢাকের বাদ্যি সারা দেশে উন্নয়নের মডেল রূপে। ছুটতে শুরু করলো ভারতীয় কর্পোরেট বাহিনীর অশ্ব মেধের ঘোড়া, হিন্দু মৌলবাহিনীর অস্ত্রে। ভীত সন্ত্রস্ত দুর্বল সংখ্যালঘু মানুষের নির্বাচনী ক্ষমতার মালিকানা নিল সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী সঙ্ঘ পরিবার। সহযোগী কর্পোরেট পুঁজির সুনামিতে একাধিক রাজ্যের ও কেন্দ্রীয় সরকারের দখল এখন হিন্দু মৌলবাদীদের হাতে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে মৌলবাদী শক্তিকে পুঁজিপতিদের এত পছন্দ কেন? অবশ্যই এর কারণ আছে। বিজ্ঞান ও গনতন্ত্র এই দুটোই পুঁজিপতিদের কাছে বিষ বটিকা।বিজ্ঞানের বর্তমান সময়ের বিকাশ ও বিস্তার যে বিপুল উৎপাদন শক্তির, যন্ত্র ও শ্রম – মেধা দুটিই সৃষ্টি করেছে, তার সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম অনুশীলন ও প্রয়োগ ব্যক্তি পুঁজির মালিকানায় সম্ভব নয়।এই উৎপাদন শক্তি দাবি করে সমাজতান্ত্রিক কাঠামো। পাশাপাশি অধিক উৎপদনজনিত সংকট পুঁজিবাদকে ফেলেছে মন্দার চিরস্থায়ী গাড্ডায়।

এমতবস্থায় গনতন্ত্র, যুক্তি – তক্কো ও বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিলে সংকট নিরসনের একমাত্র উপায় হিসেবে ব্যক্তি মালিকানার অবসানের কথাই উঠে আসে। তাই ব্যক্তি পুঁজির অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় গনতন্ত্র ও বিজ্ঞানের অপমৃত্যু। তার জন্য প্রয়োজন এমন একটি দল, যে পাথরের মত অনড় (মনোলিথিক), যাঁদের সদস্যরা অন্ধ বিশ্বাসে ও বোধে আবিষ্ট ও একরোখা। আর এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শক্তি ধর্মীয় মৌলবাদ। কারণ এদের বিশ্বাস, সংস্কারবোধ বহু শতাব্দী ধরে সমাজের গভীরে ঐতিহাসিক ভাবে প্রোথিত। পিছিয়ে পড়া দেশে মানুষকে ভোজ বাজির আঁধারে ডুবিয়ে রাখতে এঁদের জুড়ি নেই। সেই কারনেই সমাজতন্ত্রের অভিমুখ ঘুড়িয়ে দিতে পুঁজিবাদ ধর্মীয় মৌলবাদের সাহায্য প্রার্থী।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।