কলমের খোঁচা

ভয় বা ফোবিয়া– একটি মনোরোগ।


সূপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:১১ই নভেম্বর :–মানুষ এর জীবনে একটি দুঃস্বপ্ন এর নাম ভয় বা ফোবিয়া। মানুষ খুব সাধারণ জিনিসে ভয় পায় আর নিজেদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।। এই রকম কেউ যদি পরিবারে থাকে বিশেষ করে ছোট বাচ্চা তাদের কখনও ন্যাকা বোকা বলে মনের জোর কমিয়ে দেবেন না। মনে রাখবেন এই সব লোক বা বাচ্চারা অন্যদের থেকে সাহস সঞ্চয় করতে চায় জানালেন ডাঃ শর্মিলা সরকার (পাভলভ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সাইক্রিয়াটিক বিভাগ)। তিনি বলেছেন ধরুন কেউ টয়লেটে গেছে বেশ খুশি মনেই কিন্তু তার পরেই ছন্দপতন টয়লেটে টিকটিকি দেখে প্রাণঘাতী চিৎকার করে উঠল আর দৌড়ে বেরিয়ে এলো টয়লেট থেকে।। ভয়ে কাঁপতে শুরু করল। টিকটিকির অকারণে লম্ফঝম্প দেখে একটু ভয় লাগতেই পারে কিন্তু নিরীহ টিকটিকিকে কুমীরের মতো ভয়ংকর প্রাণী ভেবে বসা এবং আতঙ্কে সিটিয়ে যাওয়া নির্দেশ করে ফোবিয়া।।

কোনও জিনিস ,বস্তু, জায়গা, পরিস্থিতি ইত্যাদি থেকে অমুলক ও অতিরিক্ত ভয়কে ফোবিয়া বলে।। ফোবিয়া অনেক রকম হতে পারে।। উদাহরণ হিসেবে সামাজিক ভয়ের কারণ কথা বলা যায়। এই সমস্যাতে ভোগা মানুষটি লোকজনের সাথে মেলামেশার ভয়, কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে চায় না ভয়ের জন্য।। তাঁর ধারণা সবাই তাকে লক্ষ করছে।। তাঁর কথা বলা , খাওয়া দাওয়া, আচার আচরণ সবাই দেখছে ।। কাজেই সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে তাঁর দূরে থাকাই উচিত।। আবার অনেকে খোলা জায়গা বা ভিড় থেকে ভয়। এই ধরনের মানুষরা একা বাসে উঠতে, শপিং মলে যেতে , সিনেমা দেখতে ভয় পায়। তবে সাথে কেউ থাকলে এই ভয় কেটে যায়। আরো আছে উঁচু স্থান ,জল,রক্ত, ইনজেকশন বা রাতের অন্ধকারে ভয়।। ফোবিয়ায় ভোগা ব্যাক্তিরা যে বস্তু বা জায়গায় ভয় পায় তার মুখোমুখি হলে মারাত্মক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।।

অনেক সময় প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্যানিক অ্যাটাক অর্থাৎ বুক ধড়ফড় করা,গলা শুকিয়ে যাওয়া, হাত-পা কাঁপতে থাকে, প্রচন্ড ঘাম হয়, মাথায় – শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়।। রোগীর মনে হয় এবার তিনি মারা যাবেন।। এই ধরনের রোগীদের খুব দ্রুত চিকিৎসার দরকার।। দু রকমের চিকিৎসা হয় ওষুধ দেওয়া হয় আর কিছু ওষুধ ভয় কমাতে সাহায্য করে।। প্রতিদিন খেতে হয়। আর এক ধরনের ওষুধ দেওয়া হয় ,যা পরিস্থিতিতে পড়ার আগে খেতে হয়।। এতে প্যানিক অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব।। ওষুধ গুলো খুব কার্যকর আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।।

আরো একটি উপায় হলো রিল্যাকশেশন থেরাপি এই প্রক্রিয়াতে রোগীর যে বিষয়টিতে ভয় সেই ভয়ের মুখোমুখি করানো এবং কিভাবে ভয়কে মোকাবিলা করবে তা শেখানো।। যেমন কারো আরশোলাতে ভয় ।।। এক্ষেত্রে রোগীর কাছে প্রথমে আরশোলার ছবি দেখানো হয় এরপর ধীরে ধীরে জ্যান্ত আরশোলার সামনে আনা হয়।। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হ’ল ফ্লাডিঙ এই প্রক্রিয়াতে রোগীর ভয়ের বিষয়টি কে আচমকা সামনে আনা আর তার মোকাবিলা করতে বলা।। মোকাবিলা করতে গিয়ে রোগী বোঝে যে জিনিসটা কে ভয় পেত সেটা তত কিছু ভয়ের ব্যাপার নয়।। এছাড়া নিয়মিত যোগা করলে উপকার পাওয়া যায়।। অত এব ভয় কে জয় করা সম্ভব ।_এছাড়া রোগীর সাহায্য এর জন্য রয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদরা _


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।