দেশ

তামিলনাড়ু পুলিশের নৃশংস আচরণ এবং প্রতিহিংসার বলি বাবা ও ছেলে—–


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২৮শে জুন:-তামিলনাড়ুর থুথুকুডিন জেলার সাথানকুলাম শহরে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হলেন পিতা ও পুত্র। প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভে সামিল তামিলনাড়ু ব্যবসায়ী সমিতি, বন্ধ ছিল দোকানগুলো।

গত ১৮ জুন, সাথানকুলাম শহরে নিজের মোবাইল দোকানে ৬২ বছর বয়সী জয়রাজ লকডাউনে তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করতে জোরাজুরি করার জন্য পুলিশের সম্পর্কে কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। একজন অটোচালক এ বিষয়ে পুলিশ স্টেশনে জানায় এবং পরের দিন একদল পুলিশ জয়রাজকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তাঁর পুত্র ৩২ বছর বয়সী জে বেনিক্স এক বন্ধুর সঙ্গে পুলিশদের অনুসরণ করে থানায় যান। একজন প্রবীণ পুলিশকর্তা জানান, বেনিক্স তাঁর বাবাকে একজন অফিসার দ্বারা শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে দেখে ঐ অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন। বাবাকে রক্ষা করতে ঐ অফিসারকে ধাক্কা দেন। “এটা ঐ পুলিশদের রাগ বাড়িয়ে দেয় এবং তারা কয়েক ঘন্টা ধরে বাবা ও ছেলেকে নির্যাতন করে। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন দুজন সাব ইন্সপেক্টর ও দুজন কনস্টেবল। এছাড়াও সেখানে ১৩ জন অফিসার ছিলেন যাদের মধ্যে ‘ফ্রেন্ডস অফ পুলিশ’ এর স্বেচ্ছাসেবীরাও ছিলেন।

জয়রাজের বিরুদ্ধে লকডাউন লঙ্ঘনের এমন কিছু অভিযোগ ছিল না। তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে খুব বেশি তিন মাস কারাদণ্ড পেতেন। শনিবার সকালে জয়রাজের পরিবারের লোকজন বাবা ও ছেলেকে খুব খারাপ অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাঁদের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জয়রাজের গেঞ্জি এবং বেনিক্সের প্যান্টগুলো রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। এত রক্তপাতের জন্য পোশাক পরিবর্তন করানোর জন্য পুলিশ ঐ পরিবারকে গাঢ় রঙের লুঙ্গি আনতে নির্দেশ দেন।

হাসপাতালে তিন ঘন্টা থাকার পর তাঁদের সাতানকুলাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী জয়রাজের ভায়রাভাই জোসেফ জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পুলিশ বাবা ও ছেলেকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আর্জি জানালে অদ্ভুতভাবে তিনি তাতে সায় দেন এবং কোভিলপট্টি উপ-সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু দুজনেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে পরিবারের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয়ের কোনো খবর পাওয়া যায় নি। গুরুতর আঘাত ও ধারাবাহিক রক্তক্ষরণের ফলে ঐদিন গভীর রাতে বেনিক্স ও পরদিন ভোরে পিতা জয়রাজের মৃত্যু হয়।

দক্ষিণ তামিলনাড়ুর এক রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নাদের এর প্রতিনিধি ছিলেন এই ব্যবসায়ী পিতা-পুত্র। কী এমন ঘটেছিল যে তাঁদের মৃত্যুবরণ করতে হল? তামিলনাড়ু পুলিশের থার্ড ডিগ্ৰী নির্যাতন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কুখ্যাত যা বৃটিশ আমল থেকে চলে আসছে। কিন্তু এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে? কেবলমাত্র দুটি এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে, কারোর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়নি। অনেক বিক্ষোভের পর দুজন সাব-ইন্সপেক্টরসহ চার পুলিশকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঐ থানার ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হয়েছে মাত্র। বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

রাজ্য সরকার পরিবারের জন্য কুড়ি লক্ষ টাকা এবং এম পি কানিমোঝি পঁচিশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।এই মামলার নির্দিষ্ট কোনো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থাকলেও পুলিশের অসভ্য, চরম ঘৃণিত বর্বর আচরণের বহিঃপ্রকাশ একই পরিবারের দুজন মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে যা বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়াতে বাধ‍্য করেছে।

মাদ্রাজ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেছেন,” জরুরী অবস্থার সময়েও মানুষের আদালতে যাওয়ার অধিকার ছিল। সর্বশেষ লকডাউন পরিস্থিতি পুলিশ ও আমলাতন্ত্রের হাতে প্রভূত ক্ষমতা ন্যস্ত করেছিল। যেহেতু হাইকোর্ট নিজেই মহামারীটিকে জরুরী অবস্থার সমান মনে করে সেহেতু কর্মকর্তাদের অবশ্যই পরিস্থিতি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে উচিৎ কথা না বলা একটা ভুল বার্তা প্রেরণ করে। এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে তারা নাগরিকদের সাধারণ অধিকার রক্ষায় বিচ্যুত হয়।” অযোগ্যতা ও দুর্ব‍্যবহারের জন্য ঐ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।