দেশ রাজ্য

ধর্মঘটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে হুগলির কৃষকরা


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২৯ ডিসেম্বর: প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়ে নদীমাতৃক আরামবাগ মহকুমার পুড়শুড়া ব্লক। এটি একটি কৃষি প্রধান এলাকা। বন্যার কবল থেকে মুক্তি পেতে নদী বাঁধ সংস্কার একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু সেটা হচ্ছে না কারণ সরকারের অনীহা আর এই কারণে আগামী ৮ই জানুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটে সামিল হতে চলেছেন এই অঞ্চলের মানুষ। এই অঞ্চল আলু উৎপাদনে জেলার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। এই অঞ্চলে আগে বিপুল পরিমাণে পাট চাষ হতো। কিন্তু এখন পাটের দাম পাওয়া যায় না তাই বিকল্প হিসেবে বাদাম চাষ করা হয়। এখন আলুর পরেই বাদাম অর্থকরী ফসল।

পুড়শুড়া অঞ্চল দামোদর ও মুন্ডেশ্বরী নদীর মধ্যবর্তী এলাকা। মুন্ডেশ্বরী অত্যন্ত বন্যাপ্রবণ নদী। এই নদী আঁকা বাঁকা পথ ধরে আরামবাগের মধ্যে দিয়ে খানাকুলে প্রবেশ করে। প্রায় প্রতিটি বর্ষাতে মুন্ডেশ্বরী নদীর বাঁধ ভাঙ্গে আর বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। কৃষক সমিতির উদ্যোগে বিডিও অফিসে বার বার নদী বাঁধ সারাই এর জন্য ডেপুটেশন দিয়েও কোন লাভ হয়নি, কারণ রাজ্য সরকার প্রচন্ড উদাসীন এই ব্যাপারে।

কৃষক নেতা সন্দীপ সামন্ত জানালেন মুন্ডেশ্বরীর নাব্যতা একদম কমে গেছে ফলে গ্রীষ্মে জল প্রায় থাকে না বললেই চলে। জলহীনতায় আলু চাষ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মুন্ডেশ্বরীর নাব্যতা বাড়ানোর প্রয়োজন আর সেটা হলে তবেই জল থাকবে। এই নদীতে কিছু জল উত্তোলন প্রকল্প আছে। নদীতে জল থাকে না অনেক সময় তাই সেগুলো মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। আলু চাষের শুরুতে এর ফলে চরম সঙ্কট দেখা দেয়। নালা থেকে জল নিয়ে আসার ফলে কৃষকদের জলকর দিতে হয়।

আবার অন্যদিকে দামোদর নদীতে রয়েছে বালিখাদ। তার ফলে দামোদর নদীতে জল থাকে বেশি কারণ নাব্যতা রয়েছে বেশি। গত ২০১৭তে দামোদরের বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বাড়ি ঘর থেকে কৃষি, সব কিছুরই ব্যাপক ক্ষতি হয়। একদিকে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা আর অপরদিকে ফসলের দাম না পাওয়ায় পুড়শুড়ার কৃষকদের জীবন জীবিকা সংকটের মধ্যে পড়ে। গত বছর জমি থেকে আলু বিক্রি হয়েছে ১২০, ১৫০ ও ২০০ টাকা দরে। হিমঘরে রাখা আলুতে তেমন কোন দাম পাওয়া যায়নি। কৃষকদের হিমঘরে রাখা আলু আবার আলু চাষের আগে বিক্রি করে দিতে হয় চাষের খরচ যোগাতে।

এইবারও চাষীদের হাত থেকে বন্ড বেরিয়ে যাবার পর আলুর দাম হু হু করে বেড়ে যায়। এর ফলে ফড়েদের লাভ হয় ভালো কিন্তু কৃষকরা সেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই থাকেন। নদী পাড়ের কৃষকরা জানিয়েছেন বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় তার দাবিতে আগামী ৮ ই জানুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে জোট বাঁধছেন। চলছে গ্রামে গ্রামে প্রচার। পোস্টারিং ও দেওয়াল লিখন চলছে। মিটিং, মিছিল করে বনধের সমর্থনে প্রচার করা হচ্ছে। হতাশায় ডুবে থাকা মানুষগুলোর মুখে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।