চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ২৯ ডিসেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে তার পায়ের তলার পুরোনো শক্তপোক্ত জমিটা। এতোদিন বহু যত্নে তিনি যেটা তৈরী করেছিলেন। তার নিজস্ব বাহিনীর দ্বারা তিনি যে জমির দখল রেখেছিলেন। তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন অসত্য ভাষন, তাঁকে ঘিরে রাখা পারিষদ মন্ডলী, এই ভীড়কে অনেক পাতলা করে দিচ্ছে। এই সত্যটা তিনি বুঝতে পারছেন। তাই তো তাকে বিভিন্ন মিটিংয়ে গিয়ে অসত্য কথা বলতে হচ্ছে, মানুষ কে সত্যমিথ্যা বোঝাতে হচ্ছে।
গত শুক্রবার তিনি হেলিকপ্টারে গিয়েছিলেন নৈহাটী সফরে। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি দাবী করেন যে যাদবপুরের সাংসদ থাকাকালীন তিনিই উদ্বাস্তুদের নিঃশর্তভাবে জমির দলিল দেওয়া শুরু করেছিলেন। তিনি নিজেও জানেন এবং জেনেশুনেই মানুষকে ভূল বোঝাচ্ছেন। কিন্তু তারই হেফাজতে থাকা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের নথি জানাচ্ছে ১৯৭৮ সাল থেকেই রাজ্যে উদ্বাস্তুদের নিঃশর্ত দলিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার কোনো সাহায্য না করা সত্বেও বাম আমলে শুরু হয়েছিল এই কাজ। নথিতে পাওয়া যায় ২০০৬র ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত ২,৩৯,৪৭৯টি নিঃশর্ত দলিল দেওয়া হয়েছে। আইনী জটিলতার কারনে আরও ১৭,৮৩৮টি দলিল হস্তান্তর করার লক্ষ্যমাত্রা পূরন করা যায়নি। যদিও সেই সময় কাজ চলছিল দ্রুত গতিতে।
পরবর্তী কালে সেসময়ের কেন্দ্রীয় সরকার গুলির কাছে বাম সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনের জন্যে প্রয়োজনীয় জমির পাট্টার ব্যবস্থা করার জন্যে দাবী জানানো সত্বেও তা মেলেনি। ঐ সময় কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মমতা ব্যানার্জী। এদিন তিনি আরও বলেন, সব কলোনিকে রেজিস্টার্ড করে দিয়েছেন এবং তারা অফিসিয়ালি রেকগনাইজ্ড ও জেনুইন ভোটার। ১৯৭৭ থেকে যে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন একটি আলাদা দপ্তর ছিল। সেই দপ্তরের গুরুত্ব কমিয়ে তিনি সেটা যোগ করে দেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সঙ্গে।
তিনি বলেন যে, রেল ব্যাক্তিগত জমি বা কেন্দ্রীয় জমিতে দলিল দেবার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা সত্বেও তারা করছেনা। সেই জন্যে তিনি নিজেই বাঙলার সব উদ্বাস্তু কলোনিগুলি অনুমোদন করে দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। এইসব জমির দলিল দেওয়া একটা আইনী ও সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি। প্রকৃতপক্ষে জমি অধিগ্রহণ না করে নিঃশর্ত দলিল দেওয়া যায়না।একবছর আগে ঘোষণা করা ৯৪টি কলোনি, যারা দলিল পেয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করছেন তার কাজ ৫০% ও হয়নি।
ছাত্রযুবদের আশ্বস্ত করার যে প্রচেষ্টায় পড়াশোনার খরচ বাড়িয়েছেন বলে দাবি করলেও চিঁড়ে ভেজেনি। তাঁর আমলে শিক্ষক, অধ্যাপকদের তৃনমূল ছাত্র ও পুলিশের হাতে নিগৃহীত হতে মানুষ দেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে পুলিশি অত্যাচারের সাক্ষী মানুষ। ভর্তির সময়ে ছাত্র-অভিভাবকদের থেকে তৃনমূলী দুষ্কৃতীদের দেদার টাকা তোলা মানুষ দেখেছে। ন্যায্য পাওনার দাবিতে অনশনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জেরও সদ্য সাক্ষী সাধারণ মানুষ। তাই তো তিনি ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ভয় পান। যুব সমাজ বুঝতে পারছে এই সরকার থাকলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
২০০৫ সালে বাংলায় এনআরসি তাঁর নিজেরই দাবী করা, যে দাবীতে তিনি ডেপুটি স্পিকারের মুখে কাগজ ছুড়ে মেরেছেন। এখন তিনি বসে আছেন শাঁখের করাতের উপর। ক্ষমতা বাঁচাবেন না প্রাণ(সারদা) বাঁচাবেন? এখন তাঁকে মিথ্যাকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যা করতে হচ্ছে। যে জুবিলী ব্রীজ তিনি করেননি, শুধুমাত্র তার শিলান্যাস করেছেন, সেই নিয়েও অসত্য বলতে হচ্ছে।এনআরসি নিয়ে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা বোঝাচ্ছেন তিনি, কারণ তাঁর পায়ের তলার মাটি সরছে, আলগা হচ্ছে দ্রুত।