অর্থনৈতিক দেশ

দেশের অর্থনীতির অত্যন্ত সংকটকালে সরকারের কর্পোরেট ঋণ মকুব আটষট্যিহাজার কোটি!


কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:৭ই মে :–গোটা বিশ্বজুড়ে দাপট বাড়িয়ে চলেছে কোভিড১৯, বিপর্যস্ত অর্থনীতি। উন্নত, উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আর্থিক সংকটের মুখোমুখি। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৬’৩% থেকে কমে -৩% এ দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমেরিকা, ইংলন্ড সকলেই অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের একটা অংশ আর্থিক প্যাকেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমেরিকা যেখানে জিডিপির ১০% এর প্যাকেজ দিয়েছে ভারত ঘোষণা করেছে জিডিপির১%. এই নামমাত্র অর্থে সত্যিই কি কিছু করা সম্ভব?

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার দাবি সাম্প্রতিক লকডাউনে সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ৮১% , অর্থাৎ প্রায় ২৭০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা বেশিরভাগ কাজ হারাবেন। ভারতের ৪০ কোটি শ্রমিকের ৯০% অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। এঁদের বেশীরভাগই কাজ হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হবেন। আত্মহত্যা, শিশুমৃত্যু, শিশুশ্রম, নারীপাচার আরও বৃদ্ধি পাবে। আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য সরকারের উচিৎ আর্থিক সাহায্য আরও বাড়ানো যাতে প্রত্যেকটি দরিদ্র পরিবারের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছায় সেটা নিশ্চিত করা। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বাজারে চাহিদা বাড়বে আবার সেই চাহিদার যোগান দিতে নতুন শ্রমদিবস প্রয়োজন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের শিল্পক্ষেত্রগুলোকে কম সুদে ঋনদান কিংবা এককালীন অর্থসাহায্য করে টিকিয়ে রাখতে হবে কেননা এক বিশাল অংশের শ্রমিক এখানে কর্মরত, তাহলে তাঁরা কর্মচ্যুত হবেন না। অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে জোর দিতে হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ওপর, সুনিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকের অধিকার। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ, যতদিন না কাজ চালু হয় এঁদের প্রত্যেকের একাউন্টে দেয়া হোক ৭৫০০ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল, পি এম কেয়ার্স ফান্ড, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল তাহলে কাদের জন্য। বহুদিন আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সঞ্চিত আছে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা। সেই টাকা এই দুঃসময়ে খরচ না করে আবারও কোটি কোটি টাকা সংগ্ৰহ করে ফান্ড পুষ্ট করা হচ্ছে কাদের স্বার্থে?? এই লকডাউনের ব্যস্ততায় চুপিসারে কেন্দ্রীয় সরকারের ধামাধরা ব্যবসায়ীদের ৬৮ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হল। বিজয় মালিয়া, মেহুল চোকসিদের মত ব্যাঙ্কের টাকা লুঠপাট করে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের সংস্থাগুলো রয়েছে এই তালিকায়। কালো টাকা উদ্ধার নয় কালো টাকা পাচার করতে সাহায্য করে সাধারণ মানুষ কে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। পাশাপাশি আমার রাজ্যের নির্লজ্জ সরকার রেশনের চাল চুরিতে মদত দিচ্ছে, ভোট লুঠ করা অব্যাহত রাখতে ক্লাবগুলোকে টাকা বিলোনো শুরু করেছে। ক্লাবগুলোর জন্য বরাদ্দ ২৬০ কোটি আর আর আড়াই লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য মাত্র ২৫ কোটি যদিও মোট পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা এর তিনগুনের ও বেশি।

লকডাউন পরবর্তী আগামী দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই আরও তীব্রতা পেতে বাধ্য। পুঁজিবাদ আর ধান্দার ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে অর্থনৈতিক পুর্নগঠন এবং সুষম বন্টনের অধিকার প্রতিষ্ঠা জারি থাক।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।