দেশ

এক বিশাল সংখ্যক রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত


মল্লিকা গাঙ্গুলী:চিন্তন নিউজ:২৯শে জুলাই:- গত সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেন, দেশের ২৩টি সরকারী সংস্থা বেসরকারি বিলগ্নিকরণের যে আলোচনা এতদিন চলছিল তা চূড়ান্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে এবং খুব শীঘ্রই তা কার্যকরী হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পটির অংশ হিসেবে কেন্দ্র সরকার সমস্ত ক্ষেত্রেই বেসরকারি সংস্থাকে শেয়ার বিক্রি করে লাভবান হতে চায়। অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি অনুযায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবর্ষে বিজেপি সরকারের লক্ষ্য মাত্রা ২.১০ ট্রিলিয়ন টাকা লগ্নিকরণ। যার ১.২০ কোটি আসবে সরকারি সংস্থা থেকে বাকি ৯০ ট্রিলিয়ন আসবে বেসরকারি সংস্থা থেকে। কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন তারা ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকেই এই পদ্ধতিতে অর্থ আগমের পথ সুগম করেছে, এই নীতি মেনে বিগত পাঁচ বছরে ২৭৯৬২২ কোটি টাকার বিলগ্নিকরণ হয় যা সরকারের লক্ষ্য মাত্রা থেকে অনেক বেশি। গত দুবছরে বিজেপি সরকার এইচ পি সি, আই আর সি, ডিসিআইএল, এনপিসিসি প্রভৃতি সংস্থায় লগ্নি করে প্রভূত লাভবান হয়েছে বলে জানায়।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী- ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে ২৪৩৪৯কোটি ১৫-১৬ সালে ২৩৯৯৭কোটি, ১৬-১৭ সালে ৪৬২৪৭কোটি, ১৭-১৮ সালে ১০০০০৫৭কোটি এবং ১৮-১৯ সালে ৮৪৯৭২ কোটি টাকা। আর বর্তমান বর্ষে সরকারের লক্ষ্য তার দ্বিগুণ। এই লক্ষ্য মাত্রা পূরণ করতে সরকার দেশের বহু লাভজনক সংস্থা কেও বেসরকারি করণের তালিকায় যুক্ত করে মোট তেইশ টি পাবলিক সেক্টর কে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পর্যায়ে যে বিশেষ বিশেষ সংস্থা গুলি বেহাত হতে চলেছে সেগুলি হলো- এয়ার ইন্ডিয়া ও তার পাঁচটি সহযোগী সংস্থা, হিন্দুস্থান নিউজ প্রিন্ট, ভারত আর্থ মুভার্স, ব্রীজ এন্ড রুফ, পবন সিংহ, ফেরোস্কোপ, সিমেন্ট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া, স্কুটার ইন্ডিয়া লিমিটেড, হিন্দুস্থান, ফ্লুরো কার্বন, অ্যালয় স্টীল দুর্গাপুর প্রভৃতি নাম করা কোম্পানি গুলি। মোদি সরকারের নতুন শ্লোগান “আত্মনির্ভর ভারত”- বিজেপির মতে ভারতের আত্ম নির্ভরতা বেসরকারি করণের দ্বারায় সম্ভব, এই যুক্তি দেখিয়ে বর্তমান দেশের অতিমারি সংক্রমণের কালে যখন দেশের মানুষের পেটে ভাত নাই, লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি, যারা পেরেছে তাদের কর্ম সংস্থান নাই, রোজগার নাই, শিক্ষার চরম সংকট, বিশেষ করে প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে অকালে মারা যাচ্ছে, তখন দেশবাসীর প্রাথমিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো প্রস্তুত না করে শিল্পপতি ধনিক শ্রেণীর মুনাফা বিস্তারে উদ্যোগী।

প্রায় সমস্ত বিরোধী দল মোদি সরকারের এই অগণতান্ত্রিক শিল্পনীতির বিরোধী। তাদের মতে দেশের গুরুতর সংকট কালে দেশি বিদেশি কর্পোরেট সংস্থার কাছে বিজেপি সরকার যে আত্মসমর্পণের নীতি গ্রহণ করেছে তা দেশের জন্য এক অশুভ ইঙ্গিত। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, করোনা আবহে এবং সীমান্ত সমস্যায় মানুষ যখন জীবন জীবিকা রক্ষায় জর্জরিত তখন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোদি সরকার আত্মনির্ভরতার নামে ভারতকে পর নির্ভর করে তুলতে বদ্ধপরিকর। এই বিলগ্নিকরণ নীতি ভারতের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এক অশনি সংকেত।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।