চৈতালী নন্দী:চিন্তন নিউজ:২১শে অক্টোবর:-প্রতিবছর কৃষিজমি হারাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ , বাড়ছে ক্ষেতমজুর।।
এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারি হিসাবের যে তালিকা প্রকাশ করেন ,তার অধিকাংশই প্রকৃত হিসাবের সঙ্গে মেলেনা। চাকরি হোক বা কৃষি,শিল্প হোক বা শিক্ষা সব ক্ষেত্রে ই পরিসংখ্যান গত ত্রুটি থেকে যায় । এরাজ্যে যে কি বিপুল পরিমাণে উন্নয়ন ঘটে গেছে বিগত কয়েকবছরে তা তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে তা গল্প বলে মনে হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বার বার দাবি করেন যে তাঁর আমলে কৃষকরা খুব ভালো আছে ,সুখে আছে। তারা ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছে, তারা প্রচুর কৃষিঋণ পাচ্ছে, পাচ্ছে সার, কৃষিবীজ ও সেচের জল। কৃষকদের আয় বহুগুন বেড়ে গেছে। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি মতো বামফ্রন্টের আমলে কৃষকদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল ৯৫ লক্ষ টাকা যা বর্তমানে তৃনমূল সরকারের আমলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২লক্ষ৯১ হাজারে।
কিন্তু বাস্তব অবস্থা তা বলেনা। কারন তা হলে কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়তো , তারা বেশী শিল্প সামগ্রী কিনতো বেশী খাদ্যদ্রব্য কিনতো এবং এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হোতো । গ্রামীন শিল্পে জোয়ার আসতো। কিন্তু ব্যাঙ্কেগুলির সর্বশেষ হিসাব বলছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প পিএমইজিপি তারা একজনকেও ঋন দিতে পারেনি। ব্যাঙ্কার্সদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের শেষ বৈঠকে দেখানো হয়, গত আর্থিক বছরে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পের প্রভূত বিকাশ হয়েছে।
বিগত বামফ্রন্ট সরকারের নীতি ছিল কৃষির গুনগত মানোন্নয়ন ও শিল্পের বিকাশ।কিন্তু সেইসময় বিরোধীরা বামফ্রন্ট সরকার জমি নিয়ে নিচ্ছে বলে অপপ্রচার শুরু করেছিল।কিন্তু ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্ক ও রাজ্য সরকারের যৌথ বৈঠকের নথিভুক্ত কৃষিজমি র হিসাব ছিল ৯৬ লক্ষ চৌত্রিশ হাজার হেক্টর যা বর্তমান বছরে দাঁড়িয়েছে ৯৪লক্ষ৫৯ হাজার হেক্টরে।তাহলে এই ১ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর জমি গেল কোথায়? এর হিসেব কিন্তু সরকারের নথিতে নেই।
২০১৫ সালের একটি হিসাব জানাচ্ছে তখন কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪৫ লক্ষ২৩ হাজার যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১ লক্ষ.৮৯ হাজার।অতএব এই চারবছরে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ লক্ষের ও বেশী।আরো স্পষ্ট করতে বললে বলতে হয় রাজ্যে গত চার বছরে ক্ষেতমজুর এর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ এর ও বেশী।
প্রকৃতপক্ষে কৃষি কাজের উন্নয়ন হয়নি,উৎপাদন ঘাটতি, মূলধনের অভাবে বহু কৃষক জমি বেচে দিতে বাধ্য হয়েছে, অপরদিকে কৃষি ছাড়া অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে।এদের একাংশ যে ক্ষেতমজুরে পরিনত হয়নি সেকথা জোর দিয়ে বলা যায় না।এই তথ্য জানিয়েছেন রাজ্যের পরিসংখ্যান বিষয়ক দপ্তরের এক আধিকারিক।তবে গ্রামিন অর্থনীতির নিম্নগতি,অনুন্নয়ন সকলেই দেখতে পাচ্ছেন।একশ্রেণির হাতে প্রচুর অর্থ অন্য শ্রেণির দূরবস্থা প্রকট হচ্ছে।অর্থনৈতিক ফারাক ক্রমেই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।