রাজ্য

১লা নভেম্বর ভুলবেনা বাংলাভাষার মর্যাদার লড়াইকে।


চিন্তন নিউজ, কল্পনা গুপ্ত – ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত দিনগুলিকে মনে রেখে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উদযাপিত হয় সারা বিশ্বে। কিন্তু আমরা বিস্মৃত হয়েছি এক দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের কথা, মাতৃভাষার জন্যে মানভূমে বাঙ্গালীদের আন্দোলন। জানা প্রয়োজন যে, ১৯৪৮ থেকেই তৎকালীন বিহার সরকার ওই রাজ্যের মানুষের ওপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় স্কুলগুলিতে বাংলা বিভাগ বন্ধ করে শুধুমাত্র হিন্দিতে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে। পোস্ট অফিস সহ সমস্ত দপ্তরেই একমাত্র হিন্দি বাধ্যতামূলক ভাষা হয়ে ওঠে।

বাঙালির মানভূম ‘ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদে’ পরিণত হয়। এর বিরুদ্ধেই বাঙালি, আদিবাসী মানুষেরা মাতৃভাষা বাঙলাকে স্বীকৃতি দেবার জন্য শুরু করে আন্দোলন। কার্যত আন্দোলন শুরু হয় ১৯১২ সাল থেকে। ১৯৫৬ সালে ভারত সরকার মানভূম জেলা ভেঙে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে একটি নতুন জেলা, পুরুলিয়া জেলা সংযুক্ত করতে বাধ্য হয়। ১৯৪৮ এর ৩০ শে এপ্রিল বান্দোয়ান থানার জিতান গ্রামে অতুলচন্দ্র ঘোষের সভাপতিত্বে অধিবেশন হয় কিন্তু মানভূমের বঙ্গভূক্তির প্রস্তাব ৫৫-৪৩ ভোটে খারিজ হলে তিনি পদত্যাগ করান। ১৪ ই জুন পাকবিড়রা গ্রামে লোক সেবক সংঘ তৈরি করেন। বিহার সরকার বাংলাভাষীদের প্রতিবাদ সভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করলে মানভূম জেলায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ১৯৫৪ র ৯ ই জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি ‘টুসু সত্যাগ্রহ ‘ আন্দোলন চলে।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এই আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করে।মানভূম ভাষা আন্দোলনে নারীবাহিনীর নেত্রী লাবণ্যপ্রভা ও রেবতী ভট্টাচার্যকে বিহার পুলিশ অকথ্য নির্যাতন ও সম্ভ্রমহানী করে। ইতিমধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে ‘টুসু সত্যাগ্রহ ‘ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৬ র এপ্রিলে লোক সেবক সংঘের আন্দোলনকারীরা দশটি বাহিনীতে ভাগ হয়ে পুঞ্চার পাবিড়রা গ্রাম থেকে পদযাত্রা শুরু করে ১৬ দিনে ৩০০ কিমি পথ পেরিয়ে ৬ ই মে কলকাতায় উপস্থিত হয়। কলকাতাবাসীদের পক্ষ থেকে হেমন্ত কুমার, জ্যোতি বসু, মোহিত মৈত্রের মতন বিশিষ্ট নাগরিকসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমত প্রকাশ করেন। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার কর হয়।

পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য স্থানে প্রায় ৩৩০০ আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয় যারা প্রধানত লোক সেবক সংঘ ও বাম দলগুলির কর্মী ছিলেন। ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের ফলে ১৯৫৬ সালের ১ লা নভেম্বর মানভূমের ১৬ টি থানা অঞ্চল জুড়ে জন্ম নেয় পুরুলিয়া জেলা এবং অন্তর্ভুক্ত হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে।এই আন্দোলন ছিলো শুধুমাত্র বাংলাভাষার স্বীকৃতি ও মর্যাদার আন্দোলন । মানুষ ভুলে গেলেও এই আন্দোলনের কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।