দেশ বিদেশ

করোনা বিষয়ক কিছু কথা


শ্যামল চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:১২ই এপ্রিল:-
আবার ফিরে আসা যাক, সেই পুরোনা কথায়। পুঁজিপতিদের লক্ষ্য মুনাফা। এই মুনাফা নির্ভর করে বাজারের উপর। প্রায় সবার জানা যে, বিশ্ব অর্থনীতি এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে চলছে। পুঁজিবাদীরা নিজেদের মুনাফা বজায় রাখতে তাদের লক্ষ্য হবে ‘ছাঁটাই’। অর্থাৎ উৎপাদনে মজুরী কমবে। আর এর মধ্যেই ছাঁটাই পর্বের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এরপরে আসবেই মজুরী হ্রাস। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রক্রিয়া এই মজুরী হ্রাস লাগু করা হবে। ভারতবর্ষে তা আনা হবে দেশপ্রেমের মুচমুচে মোড়কে।

বর্তমানে বুর্জোয়া অর্থনীতি চরম সঙ্কটের মুখে। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই সঙ্কটের চিত্র মানুষের কাছে এসেছে। যার দায়ভার বইতে হয়েছে সারা পৃথিবীর শ্রমজীবি মানুষকে। ভবিষ্যতেও এই বোঝা বইতে হবে শ্রমজীবি মানুষকে। শ্রমজীবিদের শ্রম লুঠ করেই বুর্জোয়ারা মুনাফা গড়ে তুলেছে। পুঁজিবাদীরা মুনাফা আরো মুনাফার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষকে ভোগবাদী করে তোলার নানা প্রক্রিয়া বরাবরই নিয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট এরমধ্যে অন্যতম উপায়। এরপর প্রয়োজন ক্রেতার। ক্রেতার প্রয়োজন টাকা। আর সেইজন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপায়ে এই টাকার জোগান করেছে ওই পুঁজিবাদীরাই। বর্তমানে যে উপায়ে ক্রেতাকে ক্রয় সক্ষম করার উপায় হাজির করা হয়েছে ক্রেডিট কার্ড। যা মারাত্মক, যা আপনারা সবাই জানি। এরপর আছে সহজ ই এম আই। এটা সেই অনেকটা ‘হীরকরাজা দেশ’-এর মতো। ‘ভর পেট না খাও, রাজকর দেওয়া চাই’।

সাম্প্রতিক ই এম আই মকুবের ধোকাবাজী প্রায় সবার জানা। কোন মকুব হয়নি। বরঞ্চ মেয়াদ বাড়িয়ে বকেয়া ই এম আই-কে আসলের খাতায় জুড়ে সুদের কোটায় ধরে নেওয়া হবে। অর্থাৎ যারা পরে দেবার সুযোগ গ্রহন করবেন তাদের আসলের থেকে বেশি দিতে হবে। বিত্তবানদের কোন অসুবিধে হবে না। ফল ভুগতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের। যারা একটু ভালো থাকার আশায় কিংবা লোক দেখানোর প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চেয়েছিলেন।

এবার একটু দেখা যাক দেশের করোনা চিত্র।
সারা পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখের উপর। মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ছুঁই ছুঁই। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৭৬১। মৃতের সংখ্যা খবরে প্রকাশ ২০৬। ৫১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গিয়েছে। তাহলে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে চিকিৎসাধীন, সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন আর মৃতের যোগফল ৭৪৮৩। ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। আমাদের রাজ্যের চিত্র কী? আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৬ জন। করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫। আরো ৫ জন মারা গেছেন অন্য রোগে মারা গেলেও তাদের দেহে কোভিড১৯ ভাইরাস ছিল। তাহলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২১। রাজ্যে লোকসংখ্যা সাড়ে ৯ কোটি। এই চিত্রটা ভবিষ্যতের কী চিত্র আসবে তার ব্যাখায় না যাওয়ায় ভালো। কারণ এইভাবে কতটা সঠিক বলা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু যা প্রয়োজন ছিল তা কিছুই হয়নি। তা হ’ল ICMR-এর নির্দেশ অনুযায়ী র‍্যাপিড টেস্ট। যা এখনো শুরু হয় নি। এখনো ডাক্তার , নার্স , স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। কিন্তু পাঁচ-ছয় রকমের রেখা চিত্রের মাধ্যমে কত দিন লক ডাউন চললে কত জন মরবে দেখানো হচ্ছে। একটা মৃত্যু ভয় সৃষ্টি করা হচ্ছে। এইসব বলে জুন মাস পর্যন্ত লক ডাউন চালু রাখার নিদান দিচ্ছে সরকার। কোটিপতি অভিনেতা, খেলোয়াড়দের দিয়ে ঘরে থাকার কথা বলা হচ্ছে। সমস্যাটা তাদের নয়। তৃতীয় স্টেজে ভারত প্রবেশ করছে কিনা এই নিয়ে নানা ধরণের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।

এই সময়ে র‍্যানডোম পদ্ধতিতে পরীক্ষাই না করা হয় তাহলে লক ডাউন করে কোনো লাভ নেই। মানুষক বাড়িতেই আটকে রেখে দিচ্ছি, যদি অসুস্থতার লক্ষ্মণগুলো দেখা যায় তবেই হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু ৬৫% লোকের তো কোনো রোগলক্ষণই দেখা দেবে না। লকডাউন শেষ হলে এই লোকগুলোই বয়স্ক এবং অন্যান্য রোগে ধুঁকতে থাকা মানুষদের সংক্রামিত করবে আর ভাইরাসটি আবার মাথা চাড়া দেবে। আমাদের রাজ্যে ৯ এপ্রিল,২০ পর্যন্ত ২০৯৫ মাত্র।

একথা সবাই জেনে গেছে ১৯৩০ সালের আর্থিক মহামন্দার পর ২০২০তে আবার আসতে চলেছে নতুন করে আর্থিক মহামন্দা। আর এর ফল ভোগ করতে হবে সারা বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষকে।

আজ একথা স্পষ্ট যে বুর্জোয়ারা নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়েছে। বুর্জোয়াদের মধ্যে বর্তমানে একটা বিরোধ চলছে। বুর্জোয়ারা একটা সঙ্কটে রয়েছে। কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব রাখতে বুর্জোয়ারা নিজেদের মধ্যে একটা সমঝোতা করে নেবেই। আর যাতে শ্রমজীবি মানুষেরা যাতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তাদের লক্ষ্য হবে কমিউনিস্টরা। যদিও কমিউনিস্টদের প্রতি বুর্জোয়াদের আক্রমনটা নতুন নয়। আর বিগত কয়েক বছর ধরে বুর্জোয়াদের মন্দাবস্থার জেরে সেই আক্রমণের ধারাও বদলেছে। আমাদের দেশের চিত্রও এক। সারা বিশ্ব জুড়ে যে মন্দাবস্থা দেখা যাচ্ছে। সেটা স্বাভাবিক। এই কয়েক দিনের লক ডাউনে এই ধরণের মন্দা হওয়া অসম্ভব। গৃহবন্দী করে করোনা বটিকা গিলিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে বুর্জোয়ারা নিজেদের পুনঃরোদ্ধার করতে চাইছে। এইসময় রাজনীতি নয়, এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশের গরীব আর শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণী। বামপন্থীদের এই সময়ে রাজনৈতিক দাবী তুলতেই হবে। প্রয়োজনে লক ডাউন ভেঙ্গেই।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।