দেশ বিদেশ

গণতন্ত্র কি অস্তগামী?


রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ২৮ মে: কোভিড ১৯ এখন বিশ্বে তার বিষাক্ত থাবা বসিয়েছে। বাংলা বিধ্বস্ত উমপুন-এ। আদর করে যাকে আমরা আম্ফান বলছি। এই দুই বিপন্নতা একটা বিষম বিপদকে আড়াল করে রেখেছে আমাদের থেকে। সেই আশঙ্কা যদি বাস্তব হয়, তবে তা হবে কয়েক প্রজন্মের​ মানবসভ‍্যতা ধ্বস্ত হবার কারণ।

প্রসঙ্গে আসা যাক। সুইডেনের গোটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত এক স্বাধীন ও স্বশাসিত রাস্ট্রবিজ্ঞান ক্ষেত্রের স্বনামখ্যাত গবেষক প্রতিষ্ঠান, ‘ভি – ডেম’, সারা বিশ্বে জন-গণতন্ত্রের​ স্থিতি-স্থাপকতার চলন নিয়েই তাঁদের গবেষণা বলে জানা যায়। হালে, তাঁরা না কি এক বিষ্ফোরক সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এখন পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বস্তুতঃ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অধীনে বাস করে। এবং, তাঁরা আরও বলেছেন, বহু চর্চায় স্বীকৃত সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক স্থিতির ভারত তার সে বৈশিষ্ট্য বস্তুতঃ হারাতে চলেছে। অন‍্যদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মুক্ত গণতন্ত্রের দেশ উত্তর আমেরিকা ইতিমধ‍্যে তার গণতান্ত্রিক পথ থেকে সরে এসেছে।

ঐ সংস্থা তাদের গত মার্চের রিপোর্টে জানিয়েছে যে, বিশ্বের ৯২টি দেশ এই মুহূর্তে প্রবল স্বৈরতান্ত্রিকতার সম্মুখীন। তাদের মোট জনসংখ্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার ৫৪%। ঐ সব দেশে ২০০১ সাল থেকে শুরু করে বিশ্বে স্বৈরতন্ত্রের উত্থান ক্রমশঃ রাষ্ট্রক্ষমতা প্রভাবিত
করেছে। জি২০ গোষ্ঠীর প্রধান প্রধান দেশগুলি এবং মূলতঃ ব্রাজিল, ভারত, আমেরিকা ও তুরস্কে​ এই বিপন্নতার আশু সম্ভাবনা। এই দেশগুলির জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বের মানদন্ডের বিচারে সবিশেষ প্রভাবশালী​। লাতিন আমেরিকা ১৯৯০ এর আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পূর্ব ইউরোপ ও মধ‍্য এশিয়ার দেশ সমুহ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবমুক্ত হওয়ার পর এই স্বৈরতন্ত্রের শিকার হয়েছে।

এই রিপোর্ট নাকি বলেছে ভারত তার হিরন্ময় গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে চ‍্যূত হবার পূর্বমুহূর্তে উপস্থিত। সেখানে সংবাদ মাধ্যম ও সিভিল সোসাইটির স্বাধীনতা খর্ব হতে হতে প্রায় শূণ‍্যে পৌঁছে যাচ্ছে।

পোল্যান্ডের মিডিয়া আইনের সংশোধন (২০১৫ -১৬) এবং ব্রাজিলে বোলসেরানের জমানার মিডিয়া-অসহনীয়তা এবং অন‍্যদিকে ভারতের​ ধর্মীয় তত্ত্ব প্রভাবান্বিত স্বৈরতান্ত্রিক ভাবাপন্ন শাসন প্রণালী মিডিয়ার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ লাগু করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সিভিল সোসাইটি গুলির উপর প্রশাসন যন্ত্রের নিস্পেষণ নামিয়ে আনছে।

ঐ সমীক্ষক দল মনে করে যে এইগুলিই স্বৈরতান্ত্রিকতার প্রবণতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
কারণ, তাদের মতে কোনো দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতি নষ্ট হবার সোচ্চার চেতাবনী এই লক্ষণ গুলি। খবরে বলা হয় যে, ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী, হাঙ্গেরীর মতই পোল্যান্ড, ব্রাজিলে ও ভারতে গণতান্ত্রিক ধাঁচের নির্বাচনের প্রক্রিয়ার অন্তরালে যে মৌলবাদী শাসনব‍্যবস্থা প্রবর্তনের প্রচেষ্টা অব্যাহত, সেই মডেল বিশ্বের গণতন্ত্রের পক্ষে অত‍্যন্ত বিপজ্জনক।

স্বাভাবিক ভাবেই ভারতসহ ঐসব দেশে এই রিপোর্টের বক্তব‍্য নাকচ করে দেওয়া হয়েছে সরকারি ভাষণে। বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ব‍্যাপক গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ সব দেশে, বিশেষতঃ ভারতে, শাসন ব‍্যবস্থা পরিচালিত হয়, এবং তার জনপ্রিয়তা অনবদ‍্য ও অত‍্যন্ত গর্বের।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।