মল্লিকা গাঙ্গুলি, চিন্তন নিউজ, ২৮ মে: কথায় বলে চলতি কা নাম গাড়ি। এই গাড়ি চালাতে ইন্ধন লাগে। ইন্ধন মানে পেট্রল/ ডিজেল, যার দাম মাত্র কয়েক বছরে চড়তে চড়তে একশো ছুঁয়েছে! মানুষের অতি প্রয়োজনীয় এই বস্তুটির সরকারের অবিবেচনা প্রসূত মূল্য বৃদ্ধি মেনে নিতে মানুষ বাধ্য। কিন্তু এই ভয়ংকর ঊর্দ্ধ মূল্যের পেট্রল ডিজেল কিনতে গিয়ে মানুষ কিভাবে ঠকছে এটা জেনে অবাক হবেন। এক্কেবারে চোরের উপর বাটপারি!
সম্প্রতি উত্তর প্রদেশ পুলিশ জানতে পেরেছে এক অতি সূক্ষ্ম কৌশলে পেট্রলপাম্প গুলি তেল চুরি করছে। উত্তর প্রদেশ পুলিশের এক বিশেষ টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে, রাজধানী শহর লক্ষ্ণৌ শহরের আট টি পাম্পে এমনই তেল চোর চক্রের হদিশ মিলেছে। গত ২৩শে মে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর প্রদেশ পুলিশ টাস্কফোর্স ঐ আটটি পাম্প থেকে কয়েজনকে গ্রেফতার ও করেছে।
এবার জেনে নিন কোন্ সুকৌশলে ক্রেতার চোখের সামনেই তেল চুরি হয়, এবং তার পরিমাণই বা কত?? পেট্রল/ ডিজেল ভরার জন্য ক্রেতা পাম্পের যে মেশিনের সামনে দাঁড়ান সেই মেশিনেই লাগানো হয় এক বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক চিপ। এই চিপটি ঠিক যেন ঘোড়ার লাগামের মতো, ঘোড়ার ছোটার গতিতে রাশ টানার মতোই তেল ভরার মেশিনে তেলের গতি কমানোর ব্যবস্থা অনেকটা কলের জলের তীব্রতা কমাতে যেমন একটি অতিরিক্ত সরু পাইপ লাগানো হয় সেইরকম। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চিপটি মেশিন থেকে যে গতিতে তেল বেরোনোর কথা সেই গতি কমিয়ে দেয়, অথচ ক্রেতা তা টের ও পান না! এই কম পড়া পেট্রল বা ডিজেলের পরিমাণ ও নেহাত কম নয়? প্রায় ৬% মানে প্রতি লিটারে অন্তত ৫০ মিলিলিটার তেল কম পড়ছে। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে ক্রেতা এক লিটার তেলের দাম দিয়ে পাচ্ছেন ৯৪০ মিলিলি. অর্থাৎ এক লিটারে ৬০ মিলিলিটার তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পুলিশের হিসেবে এইভাবে ঐ এক একটি অসাধু পাম্প মালিক এক মাসে অন্তত ১৪ লক্ষ টাকা লোক ঠকিয়ে বাড়তি রোজগার করছে!
মানুষের জীবন কে চীপ (সস্তা) করে দেওয়ার মূলে এই যে “ইলেকট্রনিক চিপ” এটি বানিয়েছে রবিন্দর নামে এক যুবক। এই যুবক জেরার মুখে স্বীকার করেছে একজন ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে সে এই চিপ বানাতে শিখে এক হাজার টি চিপ তৈরি করে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন পাম্পকে বিক্রি করেছে। এই চিপ ব্যবহার করে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মচারী, যারা ভিতরে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পুরো সিস্টেমটি পরিচালনা করে। লক্ষ্ণৌ এর সিতাপুর, চিনহাট, সমতা মুলক এবং কেজিএম ইউ ইত্যাদি আটটি পাম্প থেকে এই চিপ উদ্ধার করা হয়। উত্তর প্রদেশ পুলিশ ঐ পেট্রল পাম্প মালিক দের বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের ও করেছে।
উত্তর প্রদেশ ছাড়িয়ে এই অভিনব তেল চুরি চক্র দেশে আর কতটা তাদের জাল বিস্তার করেছে, বিশেষ ইলেকট্রনিক চিপের সংখ্যা এক হাজার থেকে কত লক্ষ কোটিতে উঠেছে এখন এটাও বড় প্রশ্ন!!!