দেশ

দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিট পেশ: অপরাধীদের আড়ালনামা


স্বাতী শীল: চিন্তন নিউজ:১১ই জুন:- নাহ! কপিল মিশ্রর নাম নেই চার্জশিটে। নেই অনুরাগ মিশ্রের নামও। দিল্লি দাঙ্গায় সরাসরি উস্কানি দেওয়া বিজেপি’র নেতা মন্ত্রীদের নাম উল্লেখ নেই মঙ্গলবার পেশ হওয়া দিল্লি পুলিশের সাম্প্রতিকতম চার্জশিটে।

জামিয়া মিলিয়ার রিসার্চ স্কলার জেল বন্দী সাফুরা জারগার, জেএনইউ’র গবেষক উমর খালিদ সহ জামিয়া জেএনইউ শাহীনবাগের প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা সাজালেও, কপিল মিশ্রদের নিয়ে নীরব চার্জশিট! প্রসঙ্গত দিল্লি পুলিশের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, মোদী মন্ত্রীসভার নম্বর ২ দোর্দন্ডপ্রতাপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সরাসরি হস্তক্ষেপেই কি চার্জশিটের বাইরে থাকলেন কপিল মিশ্ররা? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।

মঙ্গলবার দাখিল হওয়া চার্জশিটে শাহীনবাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও ২০০০ শব্দে লেখা দিল্লি সংঘর্ষের ঘটনাক্রমের, অমিত শাহের ভাষায় ‘ক্রনোলজির’ (১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০) কোথাও উল্লেখ নেই কপিল মিশ্র সহ অন্য কোন বিজেপি নেতার। বিজেপি নেতৃবৃন্দের উস্কানিমূলক মন্তব্য সংক্রান্ত বিষয়ে অদ্ভুত রকমের নীরবতা পালন করে সম্ভবত নিজের আনুগত্যের পরিচয় দিল দিল্লির পুলিশ।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সি.এ.এ’র সমর্থনে উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুর এলাকায় আয়োজিত একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। এই মৌজপুরের অনতিদূরে জাফরাবাদে তখন সিএএ বিরোধী একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলছিল। নিজের সাম্প্রদায়িক ও উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য কুখ্যাত এই বিজেপি নেতা এই মিছিল থেকেই পুলিশের উদ্দেশ্যে কার্যত হুমকি দিয়ে বলেন যে,পুলিশ যদি বিক্ষোভ না তুলতে পারে,তাহলে তাঁরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। এই ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে, যা পরবর্তী কিছুদিন স্থায়ী হয়। প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়, যাঁদের বেশির ভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের।

কপিল মিশ্রর এই ধরনের মন্তব্যে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র।পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে ভর্ৎসনা করে দিল্লি উচ্চ আদালত কপিল মিশ্র,অনুরাগ ঠাকুর ,প্রভেশ ভার্মা সহ অন্যান্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে বলে। দিল্লি উচ্চ আদালতের একটি শুনানিতে বিচারপতি এস.মুরলীধর উষ্মা প্রকাশ করে দিল্লি পুলিশের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন ,রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধন ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, বিজেপির এইসব তথাকথিত নেতামন্ত্রীদের বিরুদ্ধে, তাঁদের এই উস্কানিমূলক বা আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য অভিযোগের ভিত্তিতে কেন কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দিল্লি পুলিশ? তিনি আরও প্রশ্ন করেন যে তবে কি পুলিশের মতে এগুলো কোন অপরাধই নয়?এই শুনানির ঠিক পরেই বিচারপতি এস.মুরলীধরকে বদলি করা হলে দেশব্যাপি নিন্দার ঝড় ওঠে।

লকডাউনের মধ্যেই দিল্লি পুলিশ সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিশেষত মুসলিম ছাত্র ও নেতাদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা শুরু করে। এখনও পর্যন্ত ৭৮৩ টি এফআইআর ও ৭০ টি চার্জশিট দায়ের করা হয়েছে দিল্লি পুলিশের তরফে। আরও বেশকিছু চার্জশিট আগামীতে প্রকাশিত হ’লেও, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।