বিদেশ

বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ের ডাক দিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ


মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:১১ই জুন:- গত ২৫শে মে আমেরিকার মিনিয়াপোলিস শহরের বুকে ৪৬বছর বয়সি এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে সামান্য অপরাধে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে আক্ষরিক অর্থেই গলায় পা দিয়ে মেরে ফেলে ডেরেক শেভিন নামে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ এবং তাকে সাহায্য করে আরও তিন সাদা চামড়ার পুলিশ।

প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশের এই নৃশংস জঘন্য বর্বরোচিত হত্যাকান্ড মুহূর্তের মধ্যে সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও ভাইরাল হতেই আমেরিকা সহ সমগ্র বিশ্বে এই নারকীয় হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। খোদ আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ সাম্প্রতিক কোভিড উনিশ অতিমারির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে পথে নামে। বিক্ষোভ অচিরেই হিংসাত্মক রূপ নেয়। এমনকি হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভকারীদের ভয়ে ভীত রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে হয়।

আমেরিকার বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে। এবার সেই বর্ণ বাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভাবে সরব হলো বিশ্ব রাষ্ট্রসঙ্ঘ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতারেজ কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যা কান্ডের পুলিশি বর্বরতার তীব্র নিন্দা করে বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেন। আন্তেনিও রাষ্ট্রসঙ্ঘের কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠিতে জানান- বর্ণবাদ সম্পর্কে জাতিসংঘের অবস্থান যথেষ্ট পরিস্কার। আমেরিকার এই ভয়ঙ্কর ঘটনা জাতিসংঘের সনদকে লঙ্ঘন করেছে। এই ধরনের মারাত্মক ঘটনা জাতিসংঘের মূল্যবোধের পক্ষে অবমাননা কর। মহাসচিব মনে করেন, জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকান্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি নিছক আমেরিকার পুলিশের কঠোরতা বা নির্মমতা ও নয়। আসলে এখনও সমাজে কৃষ্ণাঙ্গ- শেতাঙ্গ বৈষম্য প্রবলভাবে অবস্থান করছে। বহু উচ্চ শিক্ষিত পদস্থ কর্তৃপক্ষের ও বর্ণভেদ মোকাবিলা করতে অসুবিধা হয়। তিনি আরও বলেন পুলিশি নির্দয়তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অফিসার দের ভিতরে জমে থাকা হতাশার বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া পর্যাপ্ত মানসিক ও সামাজিক সহায়তায় অভাবে ও পুলিশের মধ্যে বর্বরতা ফুটে ওঠে। মহাসচিব মনে করেন সমস্ত দেশেই আইন রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনকে মানবাধিকার ও মূল্যবোধ সম্পর্কে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

বুধবার এক ট্যুইট বার্তায় গুতারেজ জানান, জাতিসংঘ তার জন্মলগ্ন থেকেই বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে জাতিসংঘের অতীত ইতিহাস যথেষ্ট গৌরবোজ্জ্বল। জর্জ হত্যা পরবর্তী গন অভ্যুত্থানকে তিনি স্বাগত জানান। রাষ্ট্রসংঘের কর্মীদের এই বিক্ষোভে সহমত দান এবং বৈষম্যের শিকার মানুষের পাশে থাকার জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রধান নিজেকে গর্বিত বলে মনে করেন।

একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের যুগে অতি আধুনিক আমেরিকার মতো দেশে জনসমক্ষে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের “জন্মসূত্রে সব মানুষ সমান” “সকলেই মানুষ” – এই মানবতাবাদ যেন নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে। “জাস্টিস ফর জর্জ” কে কেন্দ্র করে “জাস্টিস ফর মেন” – সারা বিশ্বকে আজ নাড়িয়ে দিয়েছে। ঠিক এই সময় বিশেষ করে ফ্লয়েডের অন্তিম কর্মের দিনই রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতারেজের বিশ্ব ব্যাপী বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের ডাক নিঃসন্দেহে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ভাবনায় বিশেষ মাত্রা দেবে।

জাতিসংঘ যদি নতুন সনদ এনে যেকোনো প্রকার জাতি বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিতে পারে তাহলে যত শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে সাহস পাবে না। ফ্লয়েড হত্যা ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতি, ধর্ম, বর্ণ,চামড়া, বা অর্থ গত বৈষম্যে মানুষের প্রতি অবিচার, দমন, পীড়ন রোধ করে পৃথিবী থেকে ঘৃণা ও প্রতিহিংসার মনোভাব দূরীভূত হবে এই প্রত্যাশা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নেতৃত্বে শান্তিবাদী মানবতা বাদী এই ইতিবাচক আন্দোলনে সমগ্র বিশ্ব মানব সামিল হয়ে পৃথিবী থেকে সমস্ত ভেদাভেদ মুছে এক নতুন পৃথিবীর জন্ম হোক। বর্ণবিদ্বেষী আন্দোলনে বিশ্ব সংস্থা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সক্রিয় ভূমিকা শোষণ মুক্ত বিশ্ব গঠনের দৃঢ় পদক্ষেপ বলেই বুদ্ধিজীবী মহলের অভিমত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।