মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:২৯শে নভেম্বর:- টানা একবছর কোরোনা অতিমারীর জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কৃষি তথা কৃষক বিরোধী তিনটি আইন পাশ করে। কেন্দ্র সরকার কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকতা আনার নামে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড কৃষকের মনোবল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলেও ভারতের কৃষক সমাজ কেন্দ্রের কৃষিবিল উত্থাপনের সূচনা থেকেই এর বিরোধিতায় সরব। দেশের বৃহত্তর কৃষক সংগঠনগুলি কৃষি বিল আইনে পরিণত হওয়া মাত্রই সক্রিয় আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে। এই আন্দোলনে প্রথম অগ্রণী ভূমিকা নেয় পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠনগুলি একজোট হয়ে। সঙ্গে সঙ্গেই পাঞ্জাবকে অনুসরণ করে হরিয়ানা, এবং রাজস্থান। এখন তারা প্রত্যক্ষ আন্দোলনে অগ্রসর হয়েছে। এই মুহূর্তে খবর, সমগ্র দেশের কৃষক সমাজ কৃষি আইনের বিরোধিতায় পথে নামতে চলেছে।
প্রথম দিকে কেন্দ্র সরকার নানা ভাবে কৃষকদের ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তা ফলপ্রসূ হয় নি। গত কয়েকদিন থেকেই এই আন্দোলন তীব্র রূপ নেয়। দিল্লি হরিয়ানা সীমান্তের কৃষকরা লং মার্চ করে দিল্লীতে জমায়েত হওয়ার পরিকল্পনা করলে দিল্লি পুলিশ নানা ভাবে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। দিল্লী পুলিশের সাথে সাথে আধা সামরিক বাহিনী কাঁদানে গ্যাস, জলকামান , লাঠি চার্জ সহ বলপ্রয়োগ এর পথ নিলে কৃষকরা তা প্রতিহত করেই এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। মরিয়া কৃষকের মনোবল ভাঙা সম্ভব নয় বুঝে শেষ পর্যন্ত সরকার দিল্লির “বুরারি ” মাঠে তাদের জমায়েত হওয়ার অনুমতি দেয়।
খবরে প্রকাশ দিল্লির কৃষক জমায়েতকে আরো শক্তিশালী করতে পঞ্জাব রাজস্থান, হরিয়ানা, থেকে অগনিত কৃষক দিল্লির ময়দানে আসার উদ্যেশে রওনা দিয়েছে । সেই আন্দোলনের ঢেউ পাশাপাশি রাজ্য গুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ থেকে কৃষকরা দিল্লির পথে। অন্যান্য রাজ্যের কৃষক রাও বড়ো সিদ্ধান্ত নেবার পথে। আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ না সরকার তাদের কথা শুনে তাদের দাবি মতো সরকার গৃহীত নতুন তিনটি কৃষি আইনই বাতিল করছে ততক্ষণ তাদের এই অবস্থান চলবে। আন্দোলন কারী কৃষক দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রাক ও ট্রাক্টর বোঝায় করে নিয়ে আসছেন, অন্তত ছয় মাসের রসদ, রেশন তারা সংগ্রামের মাঠে মজুত রাখছেন যাতে তারা তাদের আন্দোলনে অনড় থাকতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকার আন্দোলনকারী কৃষকদের সাথে আলোচনাতে বসতে রাজি হয়েছে। কৃষকদের একটাই দাবি, অবিলম্বে কেন্দ্র সরকারকে “তিন কৃষি আইন” প্রত্যাহার করতে হবে।
একথা বলাই বাহুল্য যে, কেন্দ্র প্রণীত কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ প্রবলতর হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার বিশেষ দমন পীড়ন মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আন্দোলন প্রত্যক্ষ সংগ্রামের রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা যায়। অতিমারী সঙ্কটে বিপন্ন দেশের সরকার যদি কৃষকদের প্রতি তার অনমনীয় মনোভাব পরিবর্তন না করে তবে কৃষক বিদ্রোহ নতুন কোনও ইতিহাস রচনা করতে পারে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারনা।