শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

লকডাউনে প্রাইভেট টিঊটরদের সংকট কাহিনী


মিঠুন ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ:২৯শে এপ্রিল:- করোনা নামক বিশ্ব মহামারী এবং পরবর্তীতে সারাদেশে লকডাউন জারি হওয়ার পরেই বহু মানুষ কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কা করার মাঝেই আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে প্রাইভেট টিউশনি করা মাস্টারমশাইরা , এমনিতেই গ্রাম বাংলায় অভিযোগ টিউশনি মাস্টারদের নাকি আট মাসে বছর হয় , তারপরে আবার অনেক ছাত্ররাই ঠিকঠাক মাস মাইনেটা দিতে পারে না অনেক ক্ষেত্রে দিতে চায়না। রাজ্য তথা দেশে প্রচুর শিক্ষিত বেকাররা রয়েছে যারা সরকারি চাকরি দুরস্ত, মাঝারি মানের বেসরকারি চাকরি পেতেও হিমশিম খেয়ে চলেছেন অনবরত , বিগত দিনে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়েরা চাকরি না পেয়ে অবসাদে নেশাগ্রস্থ হয়েছেন কেউ কেউ অপরাধ জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন আবার চরম পর্যায়ে গিয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন , একটি শিক্ষিত বেকার যখন বাড়িতে অসুস্থ বাবা – মা অথবা বিবাহ উপযুক্তা বোন কিংবা ছোট ভাইয়ের মুখে অন্ন দিতে না পেরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পরে সেই জ্বালা সেই খিদের জ্বালা অন্য একটি বেকার ছাড়া অনেকেই বুঝতে পারে না , এ তো সারা বছরের যন্ত্রনা কিন্তু এই মুহূর্তে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় যাদের টিউশনি করাটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে , বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাসের শেষে গিয়ে সামান্য কিছু রোজগারের ব্যবস্থা , যাদের জন্য নেই কোনো আলাদা সরকারি নির্দেশিকা , তারা এই মুহূর্তে ঠিক কি করবে সেটা নিয়েই আতঙ্কগ্রস্থ বহু শিক্ষক।

এমনই একজন অম্লান ব্যানার্জি , শিলিগুড়ির বাসিন্দা অভাবী সংসার থেকে বহু কষ্টে এমএ পাস করে চার বছরেও কোন চাকরি জোগাড় করতে না পেরে এই মুহূর্তে টিউশনটাই ভরসা , বাবা সুগারের পেশেন্ট , মায়ের বাতের দোষ, ছোট বোন স্কুল শেষ করে কলেজের দোরগোড়ায় , একমাত্র উপার্জনকারী অম্লান বাবু একমাস পেরিয়ে গিয়েছে রোজগার বন্ধ। আরেকজন মৌমিতা দাস ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শিখে স্বনির্ভর হবে যার জন্য উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পরে সম্বন্ধ ভেঙে দিয়ে বাড়িতে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় গ্রাজুয়েশনের পরে চাকরির চেষ্টা করবে , নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর বিয়ের চিন্তা করা যাবে , পিতৃহীনা মেয়েটার বাড়িতে আছে মা – দাদা – বৌদি , দাদা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন ২০১৬ তে নোট বন্দির পরে দাদার চাকরিটা যায়। এখন মৌমিতার দাদা একজন টোটো চালক , সংসারের যা উপার্জন তা দিয়ে বোনকে উচ্চশিক্ষিত করা প্রায় অসম্ভব , মেয়েটি নিজেই নিজের পড়াশোনার দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে কিন্তু এসময় টিউশন এর টাকা না পেলে উচ্চশিক্ষা অর্জনের চিন্তা কি করে সম্পূর্ণ হবে , এরকম হাজার হাজার অম্লান – মৌমিতারা অসহায় হয়ে দিন গুনছেন , কথা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকবছর টিউশনি করার পরে কয়েক বছর আগে একটি হাইস্কুলে চাকরি পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান যাদের সামর্থ্য নেই তাদের বিষয়টা আলাদা কিন্তু যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের উচিত বেকার ছেলে মেয়েরা যারা শুধুমাত্র টিউশনি করে কোন রকমে দিন গুজরান করে তাদের হাতে মাস মাইনেটা তুলে দেওয়া। এই অভাগা দেশে সরকার যাদের দায়িত্ব নিতে পারেনি বা নিতে চায়নি মানুষ হিসেবে মানুষের উচিত তাদের দায়িত্ব তুলে নেওয়া।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।