রাজ্য

শুধুই কেলেঙ্কারি মহানগরে


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ৩ জুলাই: গার্ড পদটি  তুলে দেওয়া হয়েছে সেই ২০১১ সালেই। ২০১১ সাল থেকে গার্ড এর কাজ করে স্থানীয়  থানা। এর ফলে পুলিশ হল কর্পোরেশনের চৌকিদার। কিন্তু চৌকিদারটা কিসের? চৌকিদারটা হল বেআইনি বাড়ীর চৌকিদার।

যখন এই গার্ড পদটি তুলে দেওয়া হয় ও এই পদে নিয়োগ বন্ধ হয়ে  যায় তখন তৃনমূলের পরিকল্পনা টা বোঝা যায় নি। তখন ছিল পরিবর্তনের ঝড়, কত উৎসব, ভাল ভাল কাজের প্রচার চলছে। এই সময় গার্ড পদটি তুলে দেওয়াকে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি কর্পোরেশনের তাবড়  অফিসাররা।

কিন্তু এখন সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে ব্যাপারটা। গত আট বছরে বেশ কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়ে গেছে। এখন বোঝা যাচ্ছে  কেন পুলিশকে গার্ড বানানো  হয়েছিল। বেআইনি নির্মান থেকে টাকা তোলার একটা চক্র গড়ে উঠেছে  তৃনমূল কংগ্রেস নেতা, দলের কাউন্সিলর  আর পুলিশের মধ্যে। এমনই অভিযোগ  করেছেন তৃনমূল কংগ্রেসেরই এক কাউন্সিলর। তার আক্ষেপ  এক বিশাল প্রহসন হয়ে গিয়েছে। তিনি বললেন “এখন দিদি বলছেন পুলিশের উপর সবসময়  নির্ভর করবে না। সেটা বললে হয়? আমরা এখন জড়িয়ে গেছি। এই বোঝাপড়া ভাঙ্গলে অন্য কেউ সুযোগ  নেবে। পুলিশ তো আর  তৃনমূলের মেম্বারশিপ নিয়ে বসে নেই।” সোজাসুজি  ইঙ্গিত রয়েছে বিজেপির দিকে। তৃনমূলের জন্য আজ বিজেপির এত বাড়বাড়ন্ত।  থানা, নেতা, প্রমোটার, সিণ্ডিকেট  চক্রের নকশা তো তৃনমূলেরই তৈরী। জলাজমি  বুজিয়ে বাড়ী  নির্মান, জলের বেআইনি  সংযোগ দেওয়া, সিণ্ডিকেটের মাল  বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা পকেটে পুরেছে দু’দল-ই বলে অভিযোগ। নির্মান কাজে কোথাও ধাপে ধাপে  আবার কোথাও থোক টাকা আদায় আবার কোথাও বর্গফুটের উপর নির্ভর  করেছে।

অবাক করা কথা, কোথাও কোন কাজ বেআইনি হওয়ার অভিযোগ  থাকলে  সেটা কেউ কর্পোরেশনকে জানিয়ে দিলেই হল। সঙ্গে সঙ্গে কর্পোরেশন থেকে নির্মান কাজের গেটে নির্মান কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এই নির্দেশিকা টাঙিয়ে দেওয়া হলেই শাসক ও পুলিশের  তোলাবাজির নকশা তৈরী হয়ে  যায়। যদি কোন বিরোধী  দলের  কাউন্সিলর  এলাকায় এমন নির্মান কাজ হয় সেখানে শাসক দলের থেকে থানাই বড় ভূমিকা পালন করে। নির্মান কাজ  বন্ধ হলে যতদিন না জরিমানা করে কাজটা বৈধ করা হচ্ছে ততদিন কাজ বন্ধ থাকে। কাজ বন্ধ আছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব  এই গার্ডের।

কিন্তু তৃনৃমূল আসার পর এই গার্ড পদটাই তুলে দেওয়া হয়েছে। আর এখন এই কাজটাই পুলিশ করে দায়িত্ব  নিয়ে। পুলিশ এবার এই কাজের নজরদারী  করে। আর এখানে শুরু শাসক পুলিশ বোঝাপড়ার খেলা। ডেকে পাঠিয়ে নির্মান কাজের বহর   দেখে সেই অনুসারে টাকার রফা হয়। এবার আর আইন মানার দরকার হয় না নির্মানকারী দের। বেআইনি বলে যে নোটিশ জারী  হয়েছিল তা ধামাচাপা পড়ে যায় টেবিলের তলায়। যাদবপুর – বেহালা – একবালপুর -খিদিরপুর – রাজাবাজার সবজায়গাতে এই একই পদ্ধতিতে কাজ হয়। এরপর আসে সিণ্ডিকেট। সেখানেও মাথা “মা মাটি মানুষ”। নির্মান শুরু হতেই চাপ আসে যে এলাকা তে কাজ সেই এলাকার সিণ্ডিকেট  থেকে ইট, বালি, সিমেন্ট, বড় বড় রড  ইত্যাদি সব বেশী  দামে  নিতে হবে।

“টক টু মেয়র”- সরাসরি কথা বলা যাবে এমন এক প্রোগ্রামের উদ্বোধন  হয় সোমবার।  এখানে পরিষেবা  সংক্রান্ত সব অভিযোগ  জানাতে পারবে সরাসরি  মেয়রকে। এদিন মেয়র যত অভিযোগ  শুনলেন তার বেশীর ভাগটাই এই নির্মান কাজ সংক্রান্ত। সিপিআইএম কাউন্সিলর  মৃত্যঞ্জয় চক্রবর্তীর অভিযোগ, “বেআইনি নির্মান  বা জলা ভরাট আটকাতে  প্রথমে   শাসক দলের নেতা, কাউন্সিলর ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তোলাবাজি, টাকা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তৃনমূলের সদিচ্ছা সবথেকে বড় প্রয়োজন। তাহলে বন্ধ হবে এমন কাজ। কিন্তু তৃৃনমূলের পক্ষে একাজ করা সম্ভব না। তারা লোভ সামলাতেই পারবে না।”


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।