জেলা রাজ্য

করোনার বিষয় আশয়(১০)


রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ’: ৬ই জুন:- লকডাউন তুলে দেওয়া নিয়ে ক্রমশঃ মতভেদ বাড়ছে। মাত্র কয়েকদিন আগেও লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিয়ে আলোচনা প্রবল ছিল জন সাধারণের মধ্যে। কিন্তু করোনার আক্রমণের গতিপ্রকৃতি​ দেখে এখন অনেকের মতে লকডাউন তুলে দেওয়া নিয়ে তাড়াহুড়া করাটাকে বিপজ্জনক মনে হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে,এর আগে খবর ছিল, অর্থনৈতিক অবস্থার​ ক্রমাবনতি এবং করোনা- সংক্রমণের অনিবার্য অবস্থান সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলায় কতৃপক্ষের একাংশে​ লকডাউন তোলা ত্বরান্বিত করার কথা প্রাধান‍্য পায়। যেমন, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা লকডাউন শিথিল না করার কথা বললেও অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের মতে লকডাউন ধাপে ধাপে ক্রমশঃ না তুললে দেশের অবনমিত অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি আরও​ অবিনার্য হয়ে বিপদসীমার​ নীচে চলে যেতে পারে। অতএব সিদ্ধান্ত ‘ লকডাউন শিথিল করা হোক’।

করোনার চলন-রেখার উর্ধ্বগতি যে জুনের ২য় সপ্তাহের শেষ থেকে ভারতে বাড়বে এ ঘোষণা ছিল। সেই প্রেক্ষিতে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত ঝুঁকি হবে একথাও আলোচনায় এসেছে। বিরোধী দলগুলির একাংশ বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন যে, স্পেন, জার্মানি, ইতালি, ব্রিটেনের মত দেশগুলি সংক্রমণের হার নিচের দিকে নামলেই মাত্র লকডাউন শিথিল করে। ভারতে করোনারি গতিপ্রকৃতি কিঞ্চিৎ ভিন্ন ছিল। সংক্রমণের রেখাচিত্র আমাদের দেশে এখন প্রবলগতিতে উর্দ্ধমুখী। এই সময়ে কোনো কারণেই করোনার বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্রটি দুর্বল করে ফেলা হঠকারিতা বৈ কিছু নয়। মানুষের প্রাণরক্ষা সবার উপরে।

‘যাঁরা লকডাউন না তোলা বা পুনরায়​ জারীর পক্ষে তাদের যুক্তি – অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছিল করোনার আবির্ভাব বা ফলত লকডাউন জারীর আগেই। রিপোর্ট অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি,২০২০ তেই বৃদ্ধির হার কমে কমে ৪% -এ এসে পৌঁছে ছিল। কাজেই , লকডাউনের জন‍্য কতটা কী অবনমন হয়েছে না হয়েছে সে তথ‍্য এখনও ভবিষ‍্যতের গর্ভে।

এই বিতর্কের মাঝেই একবার ভারতে কোভিড-১৯ এর বাড়বাড়ন্ত অবস্থাটা একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বের অনুপাতে ভারত এখন ইতালিকে পিছনে ফেলে ষষ্ঠ । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া , স্পেন, ও ব্রিটেনের পরেই। শুক্রবার পর্যন্ত ভারতে আক্রান্তের​ সংখ্যা ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু ক্রমশঃ আগের দিনের সংখ্যাকে হারিয়ে দিচ্ছে। ১২ই মার্চে ভিত্তি করে মৃত‍্যু হাজার ছাড়াতে সময় নেয় প্রায় দেড় মাস। সময় ক্রমশঃ কমতে থাকে। মৃত্যু ২ হাজার ছাড়িয়ে যায় পরের ১১ দিনে। পরের হাজার আটদিনে। পরের হাজার সাত দিনে মাত্র। তারপর ছদিন। শেষ চার দিনেই মৃত্যু প্রায় হাজার ছুঁয়ে ফেলল।

সংক্রমণও পিছিয়ে নেই। আগের সপ্তাহে সংক্রমণের গড় হার ছিল দিন ৬০০০ এর মত।গত দু’ দিনের হার পাওয়া গেছে সাড়ে আট- এর কাছাকাছি। তারপরেই হার পৌঁছে গেছে দশ হাজারের ধারেকাছে। অর্থাৎ গোটা ব‍্যাপারটায় এখনো​ কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। এই অবস্থায় দেশকে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করা কতটা জনকল‍্যানমুখী তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা তো অস্বাভাবিক নয়।

খবরে প্রকাশ, দিল্লির চিকিৎসক বিকাশ মৌর্য‍্য বলছেন ধাপে ধাপে লকডাউন তোলার সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে, কিন্তু সেই সময়েই সবচেয়ে বেশি সাবধানতা নেওয়া দরকার যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা যায়।এমনকি সঠিক পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে যথাসত্বর আবার লকডাউন জারী করার দরকার হতে পারে। ফুসফুসের শল‍্যচিকিৎসক অরবিন্দ কুমার একই কথা বলেছেন ‌।

গতকাল সকালের খবর , দেশে আক্রান্তের​ সংখ্যা ২,২৬,৭৭০। এর মধ্যে ১,০৯,০০০ সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসাধীন ১,১০,৯৬০ জন। মৃত ৬,৩৪৮ জন। ঐদিন রাত সাড়ে নটা অবধি কোভিড-ট্রাকার বলছে মৃত ৬,৬৩৭/সুস্থ হন ১,১২,৭৫৭/ চিকিৎসাধীন ১,১৬,৫৪০ জন। মৃত‍্যু হয়েছে ৬,৬৩৭ জনের।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।