জেলা রাজ্য

চন্দননগরের ইস্পাত সংঘের মানবিক প্রচেষ্টা


শঙ্কর কুশারী, চিন্তন নিউজ, ১৫ জুন: “এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষ বলতে পারে : আমার সমগ্র জীবন, সমগ্র শক্তি আমি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আদর্শের জন্য – মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে।” নিকোলাই অস্ত্রভস্কির এই ঐতিহাসিক উচ্চারণকে নিজেদের বীজমন্ত্র করে দৃঢ়পায়ে বুকভরা প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে ইস্পাত সঙ্ঘ, চন্দননগর। ইস্পাত সঙ্ঘের সদস্যরা বারংবার প্রমাণ করেছেন মানুষের কাছে তাঁদের দায়বদ্ধতার কথা।

তাঁদের এহেন কাজের প্রমাণ শহরের মানুষ পেয়েছেন বহুবার, গোটা বছর জুড়েই। এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক জগতে একটি বহু আকাঙ্খিত ঘটনা হল বৎসরান্তের চন্দননগর বইমেলা। কেবলমাত্র এই বইমেলা আয়োজনের মধ্যেই কিন্তু নিজেদের উদ্যোগ উদ্যমকে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখেননি ইস্পাত সঙ্ঘ। তাঁদের কাজ প্রসারিত হয়েছে রক্তদান শিবির আয়োজন থেকে শুরু করে প্রতিবছর বনমহোৎসবের দিনে চারাগাছ বিতরণ কর্মসূচি পালন অবধি নানাবিধ কর্মকান্ডের মধ্যে। মেধাবী অথচ আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীদের জন্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে অবৈতনিক পাঠকেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতি বহু সমাজসেবামূলক কাজে এগিয়ে এসেছেন সঙ্ঘের সদস্য-সদস্যারা। বইমেলাকে উপলক্ষ করে “যে ধ্রুবতারা” সিরিজ প্রকাশের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বদের নিয়ে এবং মেলার থিমকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক প্রবহমানতাকে ধরে রাখার জন্য প্রামাণ্য নথি প্রস্তুতির দুরূহ কিন্তু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজও এঁরা করে চলেছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে ও দায়িত্ব সহকারে।

গতবছর লকডাউন এবং আমফানের সময়ে ইস্পাত সঙ্ঘকে শহর দেখলো এক নতুন ভূমিকায়। দিনের পর দিন তাঁরা অক্লান্তভাবে রুজি রোজগার খোয়ানো অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালেন। সঙ্ঘের কার্যালয়ে খোলা হল ত্রাণ শিবির। এই মহতী কাজে সামিল হবার বাসনায় অর্থ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এলেন শহরের সংবেদনশীল নাগরিক সমাজ। একইসাথে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে গেছিলেন ক্লাব সদস্যরা যথাসাধ্য ত্রাণসাহায্য নিয়ে।

একইভাবে এই বছর ঈয়স এর আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ উপকূলভাগ। ওখানকার মানুষ আজ বড় অসহায়। তাঁরা আজ সব হারিয়ে আক্ষরিক অর্থেই কাঁদছেন। চুপ করে বসে থাকতে পারেননি ইস্পাত সঙ্ঘের সদস্যরা। এগিয়ে এসেছেন তাঁরা। যতোখানি পেরেছেন ত্রাণসাহায্য নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত চাঁদপুরের উদ্দেশে। গত শুক্রবার ১২ই জুন তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের চাঁদমারী গ্রামে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।