রঘুনাথ ভট্টাচার্য্য: চিন্তন নিউজ:৯ই জুলাই:- নমুনা সমীক্ষা সংখ্যাতত্ত্বে একটি প্রচলিত ও স্বীকৃত পদ্ধতি। সংবাদে প্রকাশ , এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে অতি সম্প্রতি আমেরিকার ম্যসাচুসেট ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি(এম আই টি )একটি সমীক্ষা চালিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সম্পর্কে এক ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে । সেটা ভারত তো বটেই, সারা পৃথিবীর পক্ষেই এক অতি শোচনীয় পরিস্থিতির পূর্বাভাস ।
সমীক্ষকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা’ এবং তদনুসারী ব্যবস্থাপনাই হ’ল এখন পর্যন্ত বিশ্বময় এই অতিমারীর মোকাবিলায় একমাত্র পথ, যত দিন না কোনও প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন) আবিস্কার হয়। কাজেই,
সমীক্ষার প্রথম বিষয় ছিল দেশে দেশে ‘নমুনা পরীক্ষার ‘ গতি-প্রকৃতি। দ্বিতীয় ভিত্তিটি ছিল’নমুনা পরীক্ষা’র সংখ্যার ন্যুনতম সম্ভাব্য দৈনিক বৃদ্ধি। এবং তৃতীয়তঃ , বর্তমান পরীক্ষার হারের প্রেক্ষিতে বর্তমান সংস্পর্শ-সক্রমণের গড় হার যদি অপরিবর্তিত থাকে( অর্থাৎ, প্রতি একজন আক্রান্ত থেকে কমপক্ষে আটজনের নতুন সংক্রমণ)। এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে ৮৪টি দেশে।
এর সাথে আরও বিবেচনা করা হয়েছে দেশে দেশে কত সংক্রমিত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যে কত। সমীক্ষা হয়েছে ২০২০র পয়লা জুলাই তারিখকে বেঞ্চমার্ক’ (গোড়া) ধরে।
এই সমীক্ষা পত্রটির নাম ‘ এস্টিমেটিঙ্ দি গ্লোবাল স্প্রেড অফ কোভিড-১৯’। এর আওতায় যে ৮৪ টি দেশকে ধরা হয়েছে তাদের মোট লোকসংখ্যা বিশ্বের মোট লোকসংখ্যার ৬০ %। সমীক্ষা চালান হয় এমআইটি -য়ের ‘ স্লোন স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট ‘-য়ের তিন গবেষক – হজির রহমন্দাদ, টি ওয়াই লিম ও জনস্টারম্যান – এর নেতৃত্বে। তাঁরা তাঁদের রিপোর্ট-য়ে স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন যে,যত তাড়াতাড়ি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা যাবে তত দ্রুত সংক্রমণের গতি রোধ করা যাবে। এ ব্যাপারে কোনো শ্লথতা পরিস্থিতি মারাত্মক করে তুলতে পারে। শঙ্কার কথা, ইতিমধ্যে তথ্য – সংগ্রাহক সংস্থা ‘ স্ট্যাটিস্টা ‘ জানিয়েছে যে, নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে ভারত বহু দেশ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। সমীক্ষায় আরও জানা যায় যে, আমেরিকাকে হারিয়ে দিয়ে ভারত অতি শীঘ্রই আক্রান্ত-এর সংখ্যায় বিশ্বে সর্বোচ্চ হতে পারে। কারণ, বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় আগামী ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হবার আগেই ভারতে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে দুই লক্ষ সাতাশি হাজার, যখন আমেরিকায় হ’তে পারে ৯৫ হাজার, দ: আফ্রিকায় ২১হাজার, ইরানে ১৭ হাজার।
সমীক্ষকরা বলছেন এই সংখ্যা বৈচিত্রের কারণ হিসাবে তাদের পর্যবেক্ষণ হ’ল, ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কিছুটা উন্নতির আভাস থাকলেও ভারতের ক্ষেত্রে তেমন কোনও ইঙ্গিত নেই। বরং ভারতের অবস্থায় ক্রমাবনতির আভাস স্পষ্ট বলে সমীক্ষায় প্রকাশ।
তাঁরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে আরও জানান যে, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে এই ৮৪ টি দেশের মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবার কথা ১৫৫ কোটিতে। যদি নমুনা সংগ্রহ ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ন্যুনতম (০.১%) বৃদ্ধি পায় তবে ঐ সংখ্যা কমে ১৩৭ কোটিতে নেমে আসতে পারে। এর ফলে, ২০২০য়ের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর-য়ের মধ্যে যে ব্যাপক সংক্রমণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে, তাতে ভারতকে শীর্ষে রেখে যথাক্রমে আমেরিকা, দ:আফ্রিকা,ইরান, ইন্দোনেশিয়া, ব্রিটেন, নাইজেরিয়া, তুরস্ক ফ্রান্স, জার্মানি, সংক্রমণের লিস্টে আগের দিকে থাকবে।
রিপোর্টে আরও বলা হয় , এখনও যারা অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করতে অবহেলা করছে, তারা বুঝতে পারছে না যে তাদের জন্য আরও কঠিন সময় এগিয়ে আসতে চলেছে। সমীক্ষকরা দেখেছেন যে, কোভিড-১৯ এ মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আড়াল করার প্রবণতা সব দেশে ক্রমশঃ বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্গে বাড়ছে একের তুলনায় অন্যের অবস্থানের গুণগান। সমীক্ষকরা এই মানসিকতার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন যে এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পূর্বাভাস মাত্র।
বুধবার রাত দশটা পর্যন্ত কোভিড-ট্র্যাকারে পাওয়া ভারতের পরিসংখ্যান প্রাসঙ্গিক বোধে নীচে দেওয়া গেল :
মোট সংক্রমিত – ৭,৬৬,২৭৩
সুস্থ হন – ৪,৭৫,৪৮০
চিকিৎসাধীন – ২,৬৯,৫৬০
মৃত – ২১,১৩৩
নমুনা পরীক্ষা – ২,৬২,৬৬৯ ( আইসিএম আর)
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, সমীক্ষকদের মতে সর্বত্রই সংক্রমণের যা সংখ্যা দেখান হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার থেকেও বারোগুণ বেশী।
এই পরিস্থিতিতে পরস্পরের সমালোচনায় সময় নষ্ট না করে সরকার, সিভিল সোসাইটি এবং জনসাধারণের সহযোগিতাপূর্ণ মিলিত প্রচেষ্টাই সম্ভব করতে পারে এই আশু অভূতপূর্ব বিপর্যয় থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা।