মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:২৬ শে মার্চ:- করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ সাম্প্রতিক বিশ্বের সবথেকে ভয়ংকর সমস্যা! অবশ্যই প্রতিনিয়ত চর্চিত বিষয়। করোনা র প্রভাবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দেশ, বিদেশ সমস্ত একাকার! একেই হয়তো বলা চলে ভাইরাল বিশ্বায়ন!
এই মুহূর্তে পৃথিবীর কোনোও দেশই করোনার ছোবল থেকে মুক্ত নয়। পৃথিবীর ১৩৫ দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, আর সব থেকে বিপজ্জনক অবস্থা ইতালি, চীন, আমেরিকার মত বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির। প্রত্যেকটি মুহুর্ত অনিশ্চিত। আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রতিটি দেশ নিজ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী নিজ নিজ পদ্ধতিতে করোনা মোকাবিলায় বদ্ধপরিকর।
কোনো একটা সূত্র থেকে প্রচার, চীন থেকেই এই মারণ ভাইরাসের সূত্রপাত। আবার তুলনামূলক ভাবে চীনই খুব কম সময়ে করোনা অভিঘাত সামলেও উঠেছে। তাই বিভিন্ন সূত্র থেকে ভেসে আসছে চীন এই ভাইরাসের জনক এবং বিশ্ব ব্যাপী মৃত্যু জীবানু ছড়িয়ে দেওয়াতেও চীনের হাত আছে! এমন কি রয়টার সূত্রে খবর পৃথিবীর ৮৫টি দেশ নাকি চিনের বিরুদ্ধে মামলা করতে চলেছে! তাদের দাবি সাপ, বাদুড় অথবা কোনো খাদ্যাভ্যাস থেকে কোভিড ঊনিশ ছড়ায়নি। এটি চিনের নিজস্ব গবেষণাগারে সুদীর্ঘ পদ্ধতিতে প্রস্তুত একটি ভয়ংকর জৈব মারণাস্ত্র! চিন পৃথিবীর কাছে ভীতি প্রদর্শন করতেই নাকি এই ভাইরাস ছড়িয়েছে! এমন কি এর প্রতিষেধকও চিনের কাছে আছে তাই চিন সহজেই করোনা মুক্ত !!
কিন্তু আসল বিষয় হলো চিনের বিরুদ্ধে এই বিধ্বংসী অভিযোগের কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি, ব্যাখ্যা, বা সুদৃঢ় কোনো তথ্য প্রমান কারো কাছেই নেই! সমস্তটাই অনুমান আর মিথ!কিছু মানুষের অন্ধ অনুসরণ এবং আবেগ, মিডিয়া প্রোপাগান্ডা, পুরোটাই সোস্যাল মিডিয়ার রমরমা। এমন কি আমেরিকা রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্ফও প্রথমে কোভিড -ঊনিশ কে চিনের ভাইরাস বলে উল্লেখ করেন। পরে অবশ্য আর জোর না দিয়ে বিবৃতি এড়িয়ে যান।
এদিকে জানা যাচ্ছে চিনের আগে থেকেই ইতালিতে কোভিড ঊনিশ থাবা বসিয়েছিল। প্রথমাবস্থায় ইতালি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দেওয়ার ফলেই ইতালিতে করোনা ব্যাপক মহামারী আকার নিয়েছে। চিন তার দেশে মারণ ভাইরাসকে আয়ত্তে আনতে সক্ষম হলেও ইতালির মতো চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নত দেশ এখনো বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়নি। যদিও ইতালির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। চিন নিজের বিরুদ্ধে বিশ্বের এই মানহানিকর অপবাদের প্রতিকার করতেই তৎপর। এমতাবস্থায় চিন বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন রাখে, করোনার মতো মৃত্যু জীবানুর সঙ্গে চিনকে জড়ানো সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কোনো দেশ যেন চিনকে এই অনৈতিক দোষারোপ না করে।
বলা বাহুল্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ. এইচ. ও) চিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলে , করোনা একটি মারণ ব্যধি, এর সঙ্গে অযথা চিনের নাম জড়ানো উচিত নয়। চিন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতকেও অনুরোধ জানিয়েছে এবং ভারতে যাতে চিনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও আর্জি জানায়! চিনের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে ভারতও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সহমত পোষণ ক’রে জানিয়েছে, করোনা চিন সৃষ্ট এই মতবাদ বিজ্ঞান সম্মত নয়। এর পিছনে কোনো যুক্তি নেই! ভারত আন্তজার্তিক ক্ষেত্রেও চিনের বিরুদ্ধে এই অবৈজ্ঞানিক সমালোচনার বিরুদ্ধে প্রচার করতে সচেষ্ট থাকবে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, ভারতের বিদেশ মন্ত্রী জয়শংকর নিজস্ব ট্যুইটারে চিনের বিদেশ মন্ত্রককে জানিয়েছেন ভারত এই অনৈতিক অপপ্রচারের পক্ষপাতী নয়, বরং ভারত ভয়াবহ করোনা মোকাবিলায় চিনের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
সমস্ত পৃথিবী যখন চরম সংকটে তখন সেই সংকট মোকাবিলা প্রধান কর্তব্য। দেশ কালের গন্ডি অতিক্রম করে মানুষকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা যখন মূল লক্ষ্য, তখন একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে অযথা পরিস্থিতির জটিলতা সৃষ্টি করা সঠিক নয়। ভারতের মতে “পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন” ….জাতিধর্ম নির্বিশেষে কোভিড ঊনিশ এর করাল গ্রাস থেকে মানুষকে মুক্ত করাই হোক অঙ্গীকার।