দেশ

ডেমোক্রেটিক আউটরীচ ফর সেক্যুলার ট্রান্সফরমেশন অফ ইন্ডিয়া ( DOSTI)” -র ঐতিহাসিক সভা


নিউজ ডেস্ক: চিন্তন নিউজ:১৫/১০/২০২৩:–গতকাল শনিবার ১৪ ই অক্টোবর দিল্লী সংসদ ভবন থেকে প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে জওহর ভবনে স্বল্প প্রচারে এক ঐতিহাসিক সভা অনুষ্ঠিত হলো। স্বল্প প্রচার – কারণ দেশ জুড়ে এক অস্থির সময়, একটা চাপা সন্ত্রাসের মধ্যে যেখানে প্রতি মুহূর্তে রাষ্ট্র তার নখ দাঁত বার করে যে কোনও প্রতিবাদকে দমন করতে চাইছে, তার মধ্যে দাঁড়িয়ে দিল্লীর কিছু মুক্তমনা সাংবাদিক, স্বাধীনচেতা আইনজীবী, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী, দেশপ্রেমী মানুষ একত্রিত হলেন একটি প্লাটফর্মে, যার নাম ” ডেমোক্রেটিক আউটরীচ ফর সেক্যুলার ট্রান্সফরমেশন অফ ইন্ডিয়া ( DOSTI)” ।
এই প্ল্যাটফর্মের কাজ হবে ঘৃনা এবং ভয়মুক্ত সমাজ কে ফিরিয়ে আনা।
সভার শুরুতেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী মেহমুনা মোল্লা প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন।
মূল আলোচনা তিন পর্বে বিভক্ত ছিল।
প্রথম : অ্যাটাক অন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড কনস্টিটিউশন।


দ্বিতীয়: অ্যাটাক অন মিডিয়া
তৃতীয়: অ্যাটাক অন এডুকেশন সিস্টেম।
বক্তা হিসাবে ছিলেন সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ। ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, শারুখ আলম, সাংবাদিক আরফা খান্না শেরওয়ানি, মনদীপ পুনিয়া, অধ্যাপক সুরজিৎ মজুমদার, অধ্যাপিকা মধু প্রমুখ।
সভার শুরুতেই নির্ভীক মহিলা সাংবাদিক শারুখ আলম রবীন্দ্রনাথের গান ” আমি চিনি গো চিনি তোমারে…. আমি অতিথি তোমার দ্বারে …” গান বাজিয়ে শুনিয়ে , গানের প্রতিটি লাইনের অর্থ ব্যাখ্যা করে বোঝানোর চেষ্টা করেন ভারতের আত্মা ও অন্তরের কথা এবং সেই অন্তর আজ কিভাবে এই সরকারের দ্বারা মথিত, নিষ্পেষিত হচ্ছে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে। তিনি বলেন আমাদের দেশে বিদেশ থেকে আসা আগত ছাত্র বা অন্য কোনো মানুষ তারা যেমন আমাদের দেশের অতিথি, তেমনি দেশের অভ্যন্তরে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া ছাত্র বা পরিযায়ী শ্রমিকরাও সেই রাজ্যের অতিথি। অতিথির প্রতি দেশের যে ঐতিহ্যপুর্ণ হসপিট্যালিটি ছিল আজ তা উধাও। কভিদ পরিস্থিতি তার সব চেয়ে বড় উদাহরণ।তার বদলে চলছে রাষ্ট্র স্পন্সরড্ ঘৃনা ভাষণ, তৈরি করা হয়েছে এক আতঙ্কের পরিবেশ, যেখানে মানুষ নিজের মত প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে।
আলোচনায় উঠে আসে- দেশের মিডিয়া কিভাবে সরকারের প্রচার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
সরকারের কোনো কাজের সমালোচনা করা মানেই সেটা আজ দেশদ্রোহিতা। সেক্যুলার শব্দকে আজ অ্যান্টি হিন্দুর তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভাতৃত্ববোধকে আজ বিষিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নির্ভীক সংবাদ মাধ্যমের অস্তিত্ব আজ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সমস্ত সংবাদ মাধ্যম কে হয় কিনে নেওয়া হয়েছে অথবা তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখা হচ্ছে। আলোচনায় উঠে এলো সাম্প্রতিক নিউজ ক্লিক এর উপর আক্রমণের ঘটনা।
আলোচনায় উঠে এলো শিক্ষা ক্ষেত্রকে কিভাবে ধীরে ধীরে গৈরিকীকরণ করা হচ্ছে। পুরনো ইতিহাসকে মুছে ফেলে আরএসএস এর নির্দেশমতো নতুন করে সনাতনী ইতিহাস লেখা হচ্ছে। বিজ্ঞান চর্চা কমিয়ে ধর্মীয় বিষয় এর অন্তর্ভুক্তি ঘটছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনা হচ্ছে। পাঠ্যসূচি তৈরির কাজ শিক্ষাবিদদের হাত থেকে প্রশাসকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষা অর্থাৎ শিক্ষক – ছাত্র কমিউনিকেশন মাধ্যম এর অবলুপ্তি ঘটানো হচ্ছে। মেধার পরিবর্তে অর্থবান ছাত্রতে ভরে উঠছে শিক্ষা প্রাঙ্গণ। শিক্ষক নিয়োগ এর ক্ষেত্রেও দেখা হচ্ছে গৈরিক আনুগত্য।


সভা শেষ হয় এক শপথ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। শপথ নেওয়া হয় দেশের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং ভাতৃত্ববোধ রক্ষা করার।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।