রাজ্য

ফিরে আসুক সেই হার্মাদ,যারা রেড ভলেন্টিয়ার হয়


নিজস্ব প্রতিবেদন:- শান্তনু বোস: চিন্তন নিউজ:-২০শে মে:– আজ থেকে ঠিক এগারো বছর আগের ইতিহাসটা একবার মনে করুন। প্রচলিত সংবাদ মাধ্যম গুলোতে সব থেকে ঘৃণিত শব্দ হিসেবে যেটাকে প্রচার করা হয়েছিল সেই শব্দটা হল হার্মাদ। এবং সেই শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিল, তৎকালীন শাসকদলের জন্য। সুশান্ত ঘোষ, মজিদ মাস্টার, তপন ঘোষ, সুকুর আলি, তরিৎ বরণ তোপদার, অনিল বসু, এই নাম গুলো ছিল সেই হার্মাদ শব্দের জুতসই উদাহরণ। সেই সাথে সালকু সোরেনদের হত্যাকে দেখানো হয়েছিল জনরোষের প্রতিফলন হিসেবে। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল যে শব্দটা, সেটা হল সততার প্রতীক। টালির চালের বাড়িতে বসবাস করা, হাওয়াই চটি পা’য়ে সাধারণ মানুষের সাজে সজ্জিতা এক দেবীমূর্তি। এগারো বছর আগে ওরা সফল হয়েছিল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে। এগারো বছর আগে ওরা সফল হয়েছিল, সাধারণ মানুষের মতাধিকার নিয়ে নিজেদের প্রতিনিধিকে ক্ষমতার অলিন্দে নিয়ে যেতে। এবার আজকের দিনের পরিস্থিতিটা একবার ভাবুন। ওদের তৈরি করা সততা শব্দটা এখন এমন একটা মিথ্যা এবং ব্যঙ্গাত্মক শব্দে পরিনত হয়েছে যে, নিজেরাই সেই শব্দ আর ব্যবহার করতে পারছে না। সেদিনের সব থেকে ঘৃণিত শব্দ হার্মাদ আবার নতুন করে ফিরে এসেছে রেড ভলেন্টিয়ার নামক গর্বের শব্দ হয়ে।
সেদিনের সেই হার্মাদদের দীর্ঘ দিন পুলিশ হেপাজতে রেখেও জেল হেপাজতে পাঠাতে পারলেন না হাওয়াই চটিতে সজ্জিতা, বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসা বঙ্গেশ্বরী। বরং তার লোকজনই এখন জেল হেপাজতের ভয়ে কেউ উডবার্ন ওয়ার্ডে আশ্রয় নিচ্ছে, তো কেউ ট্রেন থেকে ভ্যনিস হয়ে যাচ্ছে। এগারোটা বছরে দু’টো প্রজন্ম শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েও অন্ধকার ভবিষ্যত নিয়ে রাস্তায় ধর্ণা দিচ্ছে। তিল তিল করে গড়ে তোলা সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা বিলোপের পথে। এটা ভাববেন না যে পরিকল্পনা হীনতার জন্যে সার্বজনীন শিক্ষা বিলোপ পেতে চলেছে। বরং পুরোপুরি পরিকল্পনা করেই এই সার্বজনীন শিক্ষাকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিনের সেই সংবাদ মাধ্যমই আজ টিউটোরিয়াল শিক্ষায় বিনিয়োগ করেছে। অবৈতনিক সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা টিকে থাকলে, তাদের ডিজিটাল অনলাই টিউটোরিয়াল ব্যবসা চলা সম্ভব নয়। তাই অবৈতনিক সরকারি সার্বজনীন শিক্ষা বিলোপ করাটা দরকার। সুকৌশলে ছুটির পর ছুটি দিয়ে একদিকে যেমন ব্যবস্থাটাকে পঙ্গু করা হচ্ছে। তেমনই সুকৌশলে শিক্ষক সমাজের ওপর বসে বসে মাইনে নেওয়ার ক্ষোভ জনমানসে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষাকে বেসরকারিকরণ করতে গণপ্রতিরোধ না গড়ে ওঠে। ভাবুন একবার। ওরা শুধু ঘুষ খায় না। ঘুষ আপনাকেও দেয়। মাসে মাত্র ৫০০ টাকার ঘুষ দিয়ে , আপনার থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে আপনার গোটা জীবনটা। প্রতিরোধ জিনিসটা তো একবার করতে হবে। সামগ্রিক প্রতিরোধ। রাস্তায় নেমে স্তব্ধ করে দিতে হবে ওদের চালানো সিস্টেমটাকে। টেনে নামাতে হবে ক্ষমতার অলিন্দ থেকে। এলাকায় এলাকায় অট্টালিকা বানানো সমাজসেবীদের রাস্তায় নামিয়ে জিগ্যেস করতে হবে, কোথায় গেল আমার সন্তানের রোজগার? কোথায় গেল আমার সন্তানের অবৈতনিক শিক্ষা? কোথায় গেল আমার জমিতে ফলা ফসলের দাম? একবার, মাত্র একবার চোখে চোখ রেখে প্রতিরোধটা করতে হবে। অক্টোপাসের একটা শুঁড়ে আঘাত করলে, রক্তচোষা গোটা অক্টোপাস সিস্টেমটা ধরফরিয়ে উঠবে। গঙ্গাপাড়ের নবান্ন থেকে যমুনা পারের সাউথ ব্লক অফিস, সবটাই এক সিস্টেমে চলছে। এই সিস্টেমটাকে চুরমার করতে একবার ফিরে আসুক সেই হার্মাদরা, যারা রেড ভলেন্টিয়ার হয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।