দেশ বিদেশ

শিশু শ্রম এক অভিশাপ, প্রতিরোধে সরকার উদাসীন


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:১২ই জুন:- ভারতে শিশুশ্রম যেন এক অভিশাপ। বিশ্বে শিশুশ্রমের নিরিখে ১ নম্বরে আমার দেশ স্বাধীনতা লাভের ৭৩ বছর পরেও। গত আদমশুমারি অনুযায়ী ১কোটির বেশি শিশুশ্রমিক ভারতে। প্রকৃত সংখ্যা বর্তমানে এর থেকে অনেক বেশি। ৫–১৪ বছরের মধ্যে শিশুরাই মূলত এই আওতায় পড়ে। দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষার অভাবই এর প্রকৃত কারণ।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বড়োই অভাব। উদার অর্থনীতি ক্রমশ সঙ্কুচিত করছে সরকারী ক্ষেত্র, বেসরকারী ক্ষেত্রে চলছে অবাধ ছাঁটাই, বাড়ছে বেকারত্ব। এর প্রভাবে গরীব আরও গরীব হচ্ছে এবং ঐ পরিবারের অভিভাবকরা বাধ্য হচ্ছেন শিশুদের পরের বাড়িতে, চায়ের দোকানে, ছোট ছোট কলকারখানায় বা ধাবাতে কাজে পাঠাতে।

ভারতে শিশু শ্রমিকের এক বড় অংশ আসে দলিত , তপশিলী জাতি- উপজাতি, অনগ্ৰসর শ্রেণী থেকে। এদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, ১০–১৫ ঘন্টা কাজ করানো হয় ন্যুনতম মজুরি কোথাও বা কেবলমাত্র থাকা খাওয়ার বিনিময়ে। পিতার মহাজনী ঋণ শোধ করতে গিয়ে বেগার খাটার উদাহরণও দেখা যায়। নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে বাধ্য করা হয় অন্যের বাড়ির বিনা মাইনের কাজের লোক হয় শ্রম দান করতে। বাস্তুহারা সম্প্রদায়ের শিশুরাও পরিস্থিতির শিকার হয়।

শিশুশ্রমের পাশাপাশি শিশুদের ওপরে চলে যৌনপীড়ন, শারীরিক নির্যাতন। কোনো এক সরকারী আমলা তার কাজের মেয়েকে ফ্ল্যাটে বন্দী করে বেড়াতে চলে গেছেন কিংবা বিধায়কের স্ত্রী নাবালিকার গায়ে গরম খুন্তির ছেঁকা দিয়েছেন ঠিকমতো কাজ না করার অপরাধে। পুলিশ কেস হয়, বিচার হয় না অপরাধীদের।

বিশ্ব শ্রম সংস্থা ২০০২ সালের ১২ জুন নির্ধারিত করেছেন শিশুশ্রম বিরোধী দিবস হিসেবে। শ্রমমন্ত্রক তো কিছু বিজ্ঞপ্তি জারি করেই খালাস। শিশুশ্রম দূরীকরণে সবচেয়ে বেশি দরকার হল রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ। কোনো রাজনৈতিক দলই সেভাবে এগিয়ে আসেনি এই সমস্যা নিবারণে। বিশেষ একটি কোনো দিন পালন করে এই সমস্যা সমাধান কোনোভাবেই সম্ভব নয়, আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সরকার যদি দায়ভার গ্ৰহণ ও বহন করে উন্নত দেশগুলোর মত তবেই এই দেশে সম্ভব শিশুশ্রম বন্ধ করা, নচেৎ প্রতিবছরই কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে পালন হবে সাড়ম্বরে দিনটি। কাজের কাজ কিছুই হবে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।