দেশ রাজনৈতিক

শতবর্ষের শেষ লগ্নে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি–আশিস কুমার দাস;


চিন্তন নিউজ;২০শে অক্টোবর:- ভারতের বুকে ব্রিটিশ শাসনের একেবারে শুরু থেকেই ভারত ভূখন্ডের বিভিন্ন অংশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের প্রতিফলন হিসাবে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। কৃষক বিদ্রোহ, উপজাতি বিদ্রোহ (যেমন সাঁওতাল বিদ্রোহ) গড়ে উঠতে থাকে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ সশস্ত্র উপায়ে হিংস্রতার সাথে এই বিদ্রোহগুলিকে দমন করে। সাময়িক ভাবে এই বিদ্রোহ দমনে করা হ’লেও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের, প্রতিফলন হিসাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগ্রাম গড়ে উঠতে থাকে।এই ধারাতেই ১৮৫৭-১৮৫৯ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ , যেটাকে সিপাহী বিদ্রোহ বলে অভিহিত করা হয়। এই বিদ্রোহকে কার্ল মার্কস ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলে আখ্যা দেন।

পরবর্তী কালে ভারতবাসীর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামগুলি দমন করার জন্য সশস্ত্র পথ ছাড়াও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির কৌশল অবলম্বন করে। জাতপাতের বিভেদ তৈরি করার ষড়যন্ত্র করে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে ও আংশিক ভাবে সফলও হয়, যার বিষময় ফল আজও আমরা ভোগ করছি। দেশবাসীর এই সংগ্রামের ধারায় ভারতের বুকে শ্রমিক-কৃষক সহ মেহনতি মানুষের সংগ্রাম গড়ে উঠল। এই সময়ে ১৯১৭ সালে রুশ দেশে ধনিক-বণিক-জমিদারদের তথা জার শাসনের অবসান ঘটিয়ে জন্ম নিয়েছিল পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। জার আমলের মানুষগুলোর যুগ যুগ ধরে চলে আসা পায়ের বেড়ি খুলে গেল এবং তার প্রবাহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে।সেই বার্তা হিন্দুকু্শ পর্বতমালা পেরিয়ে পৌঁছল ভারতবর্ষে।১৯২০ সালে গঠিত হলো সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি।১৯২০ সালের ১৭ই অক্টোবর রাশিয়ার তাসখন্দে প্রবাসী বিপ্লবীদের উদ্যোগে জন্ম নিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

তৃতীয় আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসের পরেই সিপিআই গঠিত হয়েছিল। প্রথম সভায় উপস্থিত ছিলেন মানবেন্দ্র নাথ রায়,  ইভলিন ট্রেন্ট রায়  (মানবেন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী), অবনী মুখোপাধ্যায়, রোজা ফিটিনগফ (অবনী মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী), মহম্মদ আলি (আহমেদ হাসান), মহম্মদ শাফিক সিদ্দিকি প্রমুখ। মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এম এন রায়। পার্টির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই ভারতবর্ষের বড় বড় শহর বিশেষ ভাবে কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বাই, লাহোর সহ বিভিন্ন শহরে যোগাযোগ কেন্দ্র খুলে পার্টির কার্যধারা পরিচালনা শুরু করা হয়। ভারতীয় সমাজের মৌলিক সামাজিক রুপান্তরের জন্য সংগ্রামকে ‘ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বরাজ’ লক্ষ্য হিসাবে ঘোষণা করা হলো। জন্মলগ্নের এক বছরের মধ্যেই ১৯২১সালে জাতীয় কংগ্রেসের ৩৬ তম অধিবেশনেই এম এন রায় এবং অবনী মুখার্জির স্বাক্ষর সংবলিত পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে একটি ইস্তেহার প্রকাশিত হয়। পরের বছর ১৯২২ সালে কংগ্রেসের গয়া অধিবেশনে সিপিআই পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে প্রস্তাব উত্থাপন করেন হযরত মোহানী ও স্বামী কুমারানন্দ। তারপর বহু চড়াই -উৎরাই,বাঁক-মোড়ের পথ বেয়ে আজ কমিউনিস্ট পার্টি শত বছরের শেষ লগ্নে। হযরত মোহানীর উচ্চারিত প্রথম শ্লোগান “ইনকিলাব-জিন্দাবাদ” যেটা আজও ভারতের মেহনতি মানুষের মুখে মুখে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।