চৈতালী নন্দী:চিন্তন নিউজ: ১৮ই অক্টোবর:–ভারতীয় ঐতিহাসিকদের বিজেপির আলোকে নতুন করে ইতিহাস লেখার ডাক: অমিত শাহের।।ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মনে করেন ভারতীয় ইতিহাস রচনার মধ্যে অনেক গলদ ,অনেক ভ্রান্তি রয়ে গেছে।ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন করে ইতিহাস রচনার সময় এসেছে।তিনি ঐতিহাসিকদের এই নতুন ইতিহাস লিখতে আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বারানসীতে অবস্থিত ভারতীয় হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুদিন ব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন অমিত শাহ।তাঁর মতে বীর সাভারকর না থাকলে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে গন্য না করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বলেই গন্য করা হোতো।তাঁর মতে সাভারকরের উদ্যোগেই এই বিদ্রোহ প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বীকৃতি লাভ করেছে।
কিন্তু আসল ঘটনা ভিন্ন।সাভারকর প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশদের সহায়ক হিসেবে ই কাজ করে গেছেন।এছাড়াও ভারত ভাগের পিছনেও ব্রিটিশদের পক্ষে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ছিল।নিজের গ্রেফতারির বা মুক্তির বিনিময়ে তিনি ব্রিটিশদের মুচলেকা দেন সহযোগিতা করার জন্যে।
দুদিন আগে বিজেপি প্রকাশিত নির্বাচনী ইস্তেহারে বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদানের দাবী জানায় মহারাষ্ট্র বিজেপি। এর পরেই দেশজুড়ে বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। বিরোধীরা তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এর নিন্দা করা হয় এবং কটাক্ষ করে বলা হয় এবার একমাত্র ভগবানই দেশকে রক্ষা করতে পারে। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতী এর তীব্র সমালোচনা করে টুইট করেন।বলেন ,ধর্ষণ কে যে যুদ্ধের হাতিয়ার বলে মনে করতো সে পাবে ভারতরত্ন! এরও একধাপ এগিয়ে এ আই এমআইএম প্রধান আসাদউদ্দীন ওয়েইসি বলেন যে,শুধুমাত্র সাভারকর নয় বিজেপি গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকেও ভারতরত্ন দেবার দাবী জানাক।
প্রকৃতপক্ষে ইতিহাস বিকৃতি এক বিপজ্জনক প্রবনতা।বর্তমানেও ভারতের যে লিখিত ইতিহাস রয়েছে তাও যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একপেশে নয় একথা আমরা বলতে পারিনা।কিন্তু বিজেপির মতো একটা সাম্প্রদায়িক দল যখন এই কাজ করার চেষ্টা করে,তা ভারতীয় ইতিহাস ও ভারতীয় সংস্কৃতির উপর আঘাত বলেই গন্য হওয়া উচিত। কারন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বিজেপির নেতা মন্ত্রীদের যেসব আচরণ ও মন্তব্য আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তাতে তাঁদের শিক্ষার মান সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ থেকে যাচ্ছে। ইতিহাস লিখতে গিয়ে তা,শিব গড়তে বাঁদর হবেনা তো! এর সঙ্গেই শঙ্কা জাগে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ইতিহাস শিক্ষা নিয়েও।