বিদেশ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

এস্থার দুফোলো- বর্তমান বিশ্বের নারী সমাজের ইথার তরঙ্গ


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:১৮ই অক্টোবর:–এস্থার দুফোলো এখন বিশ্ব জুড়ে একটি পরিচিত নাম। সম্প্রতি প্রকাশিত নোবেল পুরস্কার ২০১৯ এর অর্থনীতিতে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় মাইকেল ক্রেমার সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে নোবেল বিজয়ী এস্থার দুফোলো।

বিষয়- “বিশ্ব-দারিদ্র্যের মোচনে পরীক্ষা মূলক অর্থনীতি চর্চা।” সর্বকনিষ্ঠ নোবেল জয়ী এস্থার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এম আই টি) এর অধ্যাপিকা। ফ্রান্সের মেয়ে বর্তমানে আমেরিকার বাসিন্দা এবং এবছরের অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী দলের বিশেষ ব্যক্তিত্ব অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়ের স্ত্রী। নোবেল জয়ী এই মহীয়সী রমনী সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য বলে দেয় এস্থার প্রকৃতই এক বিশেষ প্রতিভার অধিকারী।

অনেক বছর আগে পশ্চিম বাংলার বাম জমানায় অপারেশন বর্গা নিয়ে অর্থনীতির গবেষক অধ্যাপক মৈত্রীশ ঘটক যে গবেষণাপত্র লেখেন অনেকের মতোই এম আই টির একজন ছাত্রী হিসেবেই এস্থার সেই গবেষণা পত্র টি গভীর মনোযোগ দিয়ে বিশ্লেষণ করে তার উপর কয়েকটি মন্তব্য লেখেন। ডঃ ঘটক সুদীর্ঘ পড়াশোনা করে তার গবেষণা পত্র প্রকাশ করেও এমন কমেন্টস পড়ে তিনি বিস্মিত হন! তিনি বুঝেছিলেন মন্তব্যকারিনী বিশেষ প্রতিভার অধিকারী। মৈত্রীশ ঘটকের সেই অনুমান নির্ভুল এটা প্রমাণিত। ৪৬ বছর বয়সী এ যাবৎ সর্ব কনিষ্ঠ নোবেল জয়ী এস্থার এর আগে অনূর্দ্ধ চল্লিশ “জনবেটস ক্লার্ক মডেল” বিশেষ সম্মান পুরস্কার লাভ করেন! “ফরেন পলিসি” নামক পত্রিকার শীর্ষ ১০০ জন চিন্তাশীলদের তালিকার একজন এস্থার। বহু পুরস্কার ও সম্মান প্রাপক এই মেয়ে ছাত্রজীবন থেকেই ক্ষুরধার বুদ্ধি, বিরল মেধা, অসাধারণ নিষ্ঠা, দুর্দমনীয় পরিশ্রম ক্ষমতার জন্য তার ঘনিষ্ঠজন এবং বন্ধু বান্ধবদের কাছে অসামান্য সম্মানেরঅধিকারী।

এবার আসা যাক তার কর্ম দক্ষতার বিষয়ে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে এস্থার ভারতে আসেন ভারতের গ্রামাঞ্চলে হাতে কলমে কাজ করে ভারতীয় অর্থনীতি কে নিজের চোখে জানতে। তিনি পশ্চিম বঙ্গের বীরভূমের পঞ্চায়েত স্তরে কাজ করতে এসে অতি সাধারণ হোটেলের মলিন চাদর বিছানায় এসি বিহীন ঘরে প্রচন্ড গরমে অনায়াসে কাটিয়েছেন দিনের পর দিন। একই ভাবে রাজস্থানের উদয়পুরে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে কাজ করেছেন। তাঁর প্রধান আকর্ষণ ছিল ভারতীয় নারী। দারিদ্র্য আর সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে লড়াই করে ভারতীয় মহিলারা কিভাবে কাজ করেন তা দেখে তিনি ও তাঁর সহ লেখক রাঘবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পঞ্চায়েতে মহিলা প্রধানদের সিদ্ধান্ত -ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। রান্ডমাইজ্ড কন্ট্রোল ট্রায়াল প্রতিষ্ঠায় এস্থার- রাঘবেন্দ্রের কাজ নিঃসন্দেহে একটি দিক নির্ণায়ক। এস্থার সারা পৃথিবী জুড়ে কাজ করলেও তার সেরা কাজের বেশিরভাগটা জুড়ে ছিল গ্রামীণ ভারত! সঙ্গী রাঘবেন্দ্র তাঁর অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, এস্থার এক বর্ণ বাংলা জানতেন না, কিন্তু এমন মুগ্ধ হয়ে মানুষের কথা শুনতেন যে মানুষ ভাবতো এস্থার তাদেরই একজন, সে তাদের কষ্ট দূর করতে এসেছে! রাঘবেন্দ্র নিজে বলেছেন, ” আমাকে মুগ্ধ করতো এস্থারের সততা, নেতৃত্ব দানের দক্ষতা, পরিশ্রম করার ক্ষমতা। যখনই তাঁর মনে হত তথ্যে কোনো ত্রুটি আছে প্রচুর অর্থ এবং পরিশ্রম অপচয় হবে জেনেও তৎক্ষনাৎ তা বাতিল করে নতুন করে তথ্য সংগ্রহ করতে দ্বিধা করতেন না”। মৈত্রীশ ঘটক ও সুন্দর উপমা দিয়ে এস্থারের কাজের প্রশংসা করে বলেছেন, “তাঁর রান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি আগে ছিল পায়ে হাঁটা পথ প্রবল পরিশ্রমে এস্থার সেখানে তৈরি করেছেন হাইওয়ে।তাই হয়তো এত তাড়াতাড়ি “আর সি টি” একটা পদ্ধতি হিসেবে মান্যতা পেল!”দুই সন্তানের জননী এস্থার সবশেষে একজন নারী! তাই নোবেল পাওয়ার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া,* আরও বেশি নারী উৎসাহিত হোক কাজ করতে, আর আরও বেশি পুরুষ তাদের সম্মান দিক, যা প্রতি টি মানুষের প্রাপ্য!* এস্থারের এই প্রতিক্রিয়া প্রচ্ছন্ন ভাবে তাঁর কর্ম সঙ্গী ও জীবন সঙ্গী পুরুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং সমগ্র বিশ্বের নারী সমাজের প্রতি দুর্দমনীয় উদ্দীপনা সঞ্চারী বার্তা বহন করে। চিন্তায়, চেতনায়, সততায়, নিষ্ঠায়, কর্মদক্ষতায়, সর্বোপরি মেধায় এস্থার এক বিরল প্রতিভা! সবাই এস্থার হতে না পারলেও নারী দিগন্ত উন্মোচনে তাঁর জীবন ও কর্ম ভাবনা গোটা বিশ্বে ইথার তরঙ্গের মতো ব্যপ্ত হোক!! আধুনিক বিশ্বের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর প্রত্যেকটি নারীকে আপন ভাগ্য জয় করতে উন্মাদনা, উদ্দীপনা, মনোবল সঞ্চারের নাম হোক #এস্থার দুফোলো#।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।