দেশ

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সবক্ষেত্রেই ভারতীয় অর্থনীতিকে আলোর দিশা দেখাতে ব‍্যার্থ হয়েছে।


চৈতালী নন্দী:চিন্তন নিউজ:২০শে অক্টোবর:–বিশ্বব‍্যাঙ্ক থেকে ভারতীয় রিজার্ভ ব‍্যাঙ্ক,সবার হিসেবই ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির পতন রুখতে ব‍্যার্থ।।শিল্প থেকে কৃষি, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সবক্ষেত্রেই ভারতীয় অর্থনীতিকে আলোর দিশা দেখাতে ব‍্যার্থ হয়েছে।কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এইবছর বিপুল সংখ‍্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এই পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। মানুষ দ্বিতীয় বার মোদী সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিল এই আশা নিয়ে যে, ভারতের আর্থিক বিকাশ উল্লেখযোগ্য মোড় নেবে।কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ভারতের রিজার্ভ ব‍্যাঙ্ক থেকে বিশ্বব‍্যাঙ্ক ,ভারতীয়  আর্থিক বিকাশ নিয়ে যে হিসেব পেশ করছে তা একেবারেই আশাব‍্যাঞ্জক নয়,বরং তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

দেশের আর্থিক বৃদ্ধির যে চিত্রটা উঠে এসেছে তা পুরোপুরি নিম্নমুখী।বিগত নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস আগেও যে সব বড় বড় আর্থিক বা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মোদী সরকারের হাতে এদেশের আর্থিক উন্নয়ন এর গতি নিয়ে প্রবল আশাবাদী ছিল তারাই এখন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে উল্টো সুরে গাইতে শুরু করেছে।চলতি আর্থিক বছরের শুরুতে গত এপ্রিল মাসে বিশ্বব‍্যাঙ্ক ঘোষণা করেছিল ,শেষ দু’বছরের খরা কাটিয়ে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ৭.৫%। কিন্তু মাত্র ছ’মাসের ব‍্যাবধানে সেই হিসাব তারা নামিয়ে আনতে বাধ‍্য হয় ৬% এ।

একা বিশ্বব‍্যাঙ্কই নয় এই তালিকায় রয়েছে, আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার(আইএমএফ) ,এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব‍্যাঙ্ক(এডিবি) ,ভারতীয় রিজার্ভ ব‍্যাঙ্ক থেকে শুরু করে মুডিজ ইনভেস্টর সার্ভিস, ফিচ রেটিংস,স্ট‍্যান্ডার্ড এন্ড পুওরস  এর মতো বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলি।এরা সকলেই প্রথম লপ্তে করা আর্থিক বৃদ্ধি র পূর্বাভাস থেকে সরে এসে ,ভারতের অকষ্মাৎ আর্থিক নিম্নগতির ঘোষণা করে সম্প্রতি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বিশ্বব‍্যাঙ্ক গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করে যে, ১৯/২০ আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার হবে ৭.৪% ,পরে তা কমতে কমতে এসে দাঁড়ায় ৬.১%।প্রসঙ্গত এর কিছু দিন আগেই গত ২৬ শে আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার রিজার্ভ ব‍্যাঙ্কের তহবিল থেকে পৌনে দু’ লক্ষ কোটি টাকা তাদের নিজেদের তহবিলে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা দেশের বিপজ্জনক পরিস্থিতি ছাড়া নেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা।


   এরপর প্রায় প্রত‍্যেক বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ই  দেশের আর্থিক পরিস্থিতি দেখে তাদের পূর্বঘোষিত হিসাবে নিম্নমুখী পরিবর্তন আনতে বাধ‍্য হয়।প্রথমবারে মোদী ক্ষমতায় আসার সময়  যে বৃদ্ধির হার ছিল  ৮.২% এবছর মোদির শপথ নেবার প্রাক্কালে তা দাঁড়ায় ৫.২% । যা গত ছ বছরের মধ‍্যে সবচেয়ে কম।এই আর্থিক বৃদ্ধির সূচকের নিম্নমুখী প্রবনতা মোদী সরকারের প্রতি মানুষের মনে নৈরাশ‍্য সৃষ্টি করে।

নোটবন্দীর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সহ বর্তমান নোবেলজয়ী অভিজিত বিনায়ক মুখার্জি এবং রিজার্ভ ব‍্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরও সরকারের এই সিদ্ধান্তে অশনিসংকেত দেখেছিলেন।আচমকা সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ ভারতীয় অর্থনীতিকে জোর ধাক্কা দেয়। এছাড়া এর সঙ্গে কালোটাকা উদ্ধারের অলীক কল্পনা ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কে সন্দিহান করে তোলে।যদিও সরকার পক্ষের অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্বব‍্যাঙ্ক এর বিরোধিতা করে এরপরে ২০১৭ র ১ লা জুলাই চালু হয় জিএসটি বা পণ‍্য পরিষেবা কর।সঠিক পরিকাঠামো না থাকার ফলে সরকারের এই অপ‍রিণামদর্শী পদক্ষেপ ভারতীয় অর্থনীতির কোমর ভেঙে দেয়।


আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখানো মোদী ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ভারতীয় স্বপ্নের পালাবদল ঘটান দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়না।কৃষি শিল্পের নিম্নগতি ,কাজ হারানো মানুষের স্বপ্নভঙ্গ  দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে, যা সবসময় শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের মাধ‍্যমে জিডিপি বৃদ্ধির হিসেবের গরমিল  থেকে বোঝা সম্ভব নয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।