দেশ

রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার উৎখাতের জন্য বিজেপির নির্লজ্জ দালালি-–—


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:১২ই জুলাই:- রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার উৎখাতের জন্য বিজেপির নির্লজ্জ দালালি রাজ্য রাজনীতিতে এক কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করেছে। কংগ্রেস বিধায়কদের কেনাবেচা করে সরকার গড়তে মরিয়া বিজেপি। ১০-১৫ কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে কংগ্রেস বিধায়কদের। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন কংগ্রেস সরকারকে পরাস্ত করতে বিজেপি ‘বাজার থেকে ছাগলের মত’ কেনার চেষ্টা করছে বিধায়কদের। বিজেপি নেতারা তাঁর সরকারকে উৎখাত করতে ১০-১৫ কোটির ডোল নিয়ে হাজির হয়েছে কংগ্রেস বিধায়কদের দরজায়।

কংগ্রেস বিধায়কদের ঘুষ দিয়ে রাজ্য সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করার জন্য ইতিমধ্যেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে রাজস্থান পুলিশের বিশেষ অপারেশন গ্ৰুপ মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্ত এবং গ্ৰেপ্তার করা ব্যক্তিদের মোবাইল ট্র্যাকিং এর ভিত্তিতে এফ আই আর এ বলা হয়েছে, ১৯ জুন রাজ্যসভা নির্বাচনের আগে থেকেই সরকার ফেলার চেষ্টা চলছে। “বিজেপি নেতারা এমন সময়ে রাজস্থান সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিলেন যখন পুরো প্রশাসন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যস্ত ছিল।” গতকাল ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে গেহলট জানান, “আমাদের সকলের যখন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ ছিল তখন মন্ত্রী, বিধায়ক ও নেতাদের সরকার বাঁচানোর দিকে নজর দিতে হয়েছিল।”তিনি আরও বলেন রাজস্থানে ঘোড়া কেনাবেচার কোনো ঐতিহ্য নেই তবে বিজেপি নেতারা রাজনীতির আঙিনায় এক নতুন নজির সৃষ্টি করলেন কংগ্রেস বিধায়কদের ১০-১৫ কোটি টাকার লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে।

বিজেপি নেতারা নির্লজ্জতার চরম সীমা অতিক্রম করেছেন। ছাগলের মত বিধায়ক কেনাবেচা করে রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন ,”বিজেপি গুজরাটে সাতটি কংগ্রেস বিধায়ককে কিনে রাজ্যসভার দুটি আসন জিততে সক্ষম হয়েছে। এটাই তাদের পরম্পরা এবং চরিত্র। কিন্তু রাজস্থানে তাদের একই রকম গেমের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়ে দুটি আসন জিতেছি তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি। তবে তারা নির্লজ্জ ও এখনও তাদের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি দাবি করেন তাঁর সরকার পূর্ণ মেয়াদ উত্তীর্ণ করবে, কোনো প্রলোভন বা চাপের কাছে কখনোই নতি স্বীকার করবে না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও তীব্র আক্রমণ করেন গেহলট। ” মোদী এবং অমিত শাহ আমার সরকারকে সহ্য করতে পারেন না। রাজ্যের যে বিজেপি নেতারা বিধায়কদের কেনার চেষ্টা করছেন তাঁদের প্ররোচিত করছেন ওনারা।” গেহলট দাবী করেন ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিজেপি অন্যরকম ছিল। ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির অহংকার প্রকাশ্যে এসেছে। তারা মানুষকে ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করছে এবং গণতন্ত্র হত্যা করছে। তাদের চিন্তাভাবনায় ফ্যাসিবাদের চেহারা প্রকট হচ্ছে।

বিজেপি নেতারা অবশ্য বলেন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস রাজ্যসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিবাদ আড়াল করার ঢাল হিসেবে বিজেপির বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ তোলে। রাজস্থানের বিজেপি সভাপতি সতীশ পুনিয়া বলেন,” এটা কংগ্রেসের নিজস্ব লড়াই। গোষ্ঠীদ্বন্দ আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী পুরো কৌশলটি তৈরী করেন।” সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী এমন কোনো বিশ্বাস ঘাতকের নাম বলেননি যিনি দল পরিবর্তন করতে মদত পাচ্ছেন। তিনি কেবলমাত্র বিজেপিকে বলির পাঁঠা করে কংগ্রেস পার্টির মধ্যেকার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ আড়াল করার চেষ্টা করেছেন যা অনুচিত।

ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে পুনিয়া বলছিলেন, “বিজেপি বিধায়ক ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করে গেহলট রাজনৈতিক শালীনতার সীমা অতিক্রম করেছেন। তিনি নিজের দলের বিধায়কদের ছাগল হিসাবে অভিহিত করেছিলেন এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি নেতাদের নির্লজ্জ বলে উল্লেখ করেন। রাজস্থানের রাজনীতিতে এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা।”

পুনিয়া আরও বলেন, “গেহলট মোদী ও শাহকে আক্রমণ করে জাতীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছেন।” মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট পুনিয়ার এই অভিযোগ খন্ডন করে বলেন যে বিজেপি রাজস্থানে একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। সতীশ পুনিয়া, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বসুন্ধরা রাজের মত নেতাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদের জন্য রাজ্যে এক্সিকিউটিভ গঠন করতে পারেনি। প্রসঙ্গত রাজস্থানে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা গোলাপ চাঁদ কাটারিয়া।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।