জেলা

মনুবাদ দর্শনে বিজেপি’র দলিতপ্রেম- সোনার পাথরবাটি!


নিজস্ব প্রতিবেদন: দেবু রায়:চিন্তন নিউজ:৫ই নভেম্বর:– বিজেপির দলিতপ্ৰেম, কতটা  মেকি আর কতটা  নাটুকে, আরএসএস এর দর্শন  হলো  বিজেপি র দর্শন . আর আরএসএস হলো মনুর  দর্শনে  বিশ্বাসী। তারা চায়  দেশটা চলুক মনুর লেখা  আইন অনুযায়ী। আচ্ছা যদি  দেশে  মনুর  আইন  চালু  করতে  পারে, তাহলে দলিতদের কী অবস্থান  হবে  সমাজে? তার একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা  যাক—

আরএসএস ভারতের বর্তমান  সংবিধানকে কোনো দিনই মান্যতা দেয়নি, তাদের কোনো দিনই সংবিধানের  প্রতি আনুগত্য  ছিলো  না. সেটা আমরা গোলওকারের লেখা “the banch of thought “বইটিতে  আমাদের সংবিধান সম্পর্কে বলা  হয়েছে ! “আমাদের সংবিধান স্রেফ কিছু  পশ্চিমী  দেশের  সংবিধান  থেকে  তুলে আনা বিভিন্ন ধারার  এক কিম্ভুত কিমাকার ও নানান  ধরনের  উপাদানের এক সংমিশ্রণ মাত্র এটা একত্রিকরণ  ছাড়া  আর কিছু  নয়। আর এর মধ্যে  এমন কোনো জিনিস  নেই যাকে আমাদের নিজস্ব  বলা  যায়. আমাদের জাতীয় উদেশ্য কী? সেই বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। “
আসলে বিজেপি চায়  দেশে  মনু  আইন  চালু  করতে, যেখানে  (মনু  আইন )মহিলা  এবং শুদ্র দের অস্পৃশ্য বলে  বর্ণনা  করে  অনেক নিচে দেখানো  হয়েছে সংবিধান যে দিন ভারতে চূড়ান্ত রূপ দেয়া হয়, তার পরে ১৯৪৯ এর ৩০শে নভেম্বর আরএসএস তাঁদের মুখপত্র -“অর্গানাইজার” (organiser) “সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে  উল্লেখ কর “আমাদের প্রাচীন ভারতে  যে চমৎকার  সংবিধানিক  বিকাশ হয়েছিলো  তার কোনো উল্লেখ নেই, দেখায়  ও মেনে নেয়, অথচ  আমাদের সংবিধান প্রনেতা পন্ডিতদের কাছে  তার কোনো মূল্য  নেই।

স্বাধীন ভারতে  মনু  আইন চালু করার  জন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে  আসছে আরএসএস।
সাভারকারের মতে   “আমাদের হিন্দু জাতির কাছে বেদের পরেই  সবচেয়ে বড়ো ধর্ম  গ্রন্থ হলো মনু স্মৃতি !প্রাচীন কাল থেকেই এই মনু স্মৃতি হলো  আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সামাজিক প্রথা , চিন্তা ভাবনা ও কার্যকলাপের  ভিত্তিতে পরিণত  হয়েছে। শত শত  বছর ধরেই  এই গ্রন্থটি আমাদের দেশের আধ্যাত্বিক এবং  দৈব যাত্রা পথের  সারসংকলন করেছে! এমনকী আজও  কোটি কোটি হিন্দু তাঁদের জীবনে  ও কাজকর্মে যে -সব  নিয়ম  -নীতি মেনে আসছে সেই গুলোর ভিত্তি হলো  এই মনু  স্মৃতি!বর্তমানে  মনু স্মৃতি হলো  মনু  আইন! “
সুতরাং মনু  আইনের  মধ্যে  দিয়ে কী ধরণের  সভ্যতা  বা সংস্কৃতি গড়ে  তুলতে  হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। আর তাতে নিম্নবর্ণের মানুষ, মহিলাদের সামাজিক অবস্থান  কী হবে  সেই বিষয়ে মনু  কী কী বিধান  দিয়েছেন সেই দিকে একটু নজর  দেওয়া যাক, এই আইনের  কিছু  অংশর দিকে নজর  দিলেই, স্পষ্ট বোঝা  যাবে যে কতটা  ভয়ঙ্কর  অবস্থা অপেক্ষা করছে  আমাদের জন্য আগামী দিনে?
দলিত  বা অস্পৃশ্যদের বিষয়ে মনুর  আইন .
1)জগতের  সৃষ্টি ও তার সমবৃদ্ধির  জন্য bromha (পুরান অনুযায়ী যাকে বলা  হয়  সৃষ্টি কর্তা ), নিজের মূখ  বাহু, উরু, ও পা  যুগল  থেকে  সৃষ্টি করেন সমাজের  জন্য চারটি  জাতি, ব্রহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, আর শুদ্র. (অনুচ্ছেদ 1/31 )
2)শুদ্রদের জন্য একটি মাত্র পেশাই নির্দিষ্ট করেছেন  ঈশ্বর টা হলো  বাকি তিন বর্ণের সেবা করা   (অনুচ্ছেদ 1/91)!
যদি  কোনো শুদ্র অন্য কোনো বর্ণের জাত কে কোনো কটু  কথা  বলে , সে  ক্ষেত্রে তার জিভ কেটে নেবার বিধান  দেওয়া হয়েছে. কারন  শুদ্র হলো  হীন কুলোদ্ভোব (অনুচ্ছেদ 8/270 )!
3)যদি  কোনো শুদ্র উচ্চ জাতের নাম অথবা জাতের নামে কিছু  বলে  বা জাতের নাম উল্লেখ করে সে ক্ষেত্রে ঐ  শুদ্র কে, তার হাতের দশ  আঙ্গুল সমান  একটা দীর্ঘ লোহার রডকে উত্তপ্ত করে  তার মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে, এটাই তার শাস্তি (অনুচ্ছেদ 8/271 )!
4)যদি  কোনো শুদ্র জাত কোনো ব্রাহ্মন কে তার কর্তব্য বা কাজের সমালোচনা  করে  অথবা জ্ঞান দিতে যায়, সে ক্ষেত্রে স্বস্তি স্বরূপ তার কানে ও মুখে  ফুটন্ত গরম  তেল ঢেলে  দিয়ে শাস্তি দিতে হবে রাজা কে (অনুচ্ছেদ 8/272 ) !
5)নিম্ন (শুদ্র বা অধুনা  দলিত )বর্ণের মানুষ যে অঙ্গ দিয়ে তার থেকে  উচ্চত্তর বর্ণের মানুষ কে আঘাত  করবে, তৎক্ষণাৎ  তার (শুদ্রর )সেই অঙ্গ টি কেটে ফেলার নিধান দিয়েছেন  মনু , এর সমস্ত শাস্তি কে বাস্তবায়িত করতে  হবে রাজা কে অর্থাত রাষ্ট্র কে যিনি চালান অর্থাত রাজা কে. (অনুচ্ছেদ 8/279 )!
6)শুদ্র যে হাত দিয়ে লাঠি  তুলবে উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে তার (শুদ্র বা নিম্ন বর্ণের মানুষ )হাত কেটে তাকে শাস্তি দিতে হবে  (অনুচ্ছেদ 8/280 ) !
7)নিম্ন বর্ণের কোনো মানুষ  উচ্চবর্ণের কোনো মানুষের  সাথে  একই আসনে চাইলে  তার তার নিতম্ব এ ছ্যাকা  দিয়ে তাকে নির্বাসিত করতে  হবে . আর এই নির্দেশ দেবেন রাজা স্বয়ং (অনুচ্ছেদ 8/281) !
  তাহলেই  বুঝতে  পারছেন  হিন্দুত্ববাদীরা কী ভাবে দেশ টাকে চালাতে  চায়.  রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল  করার  জন্য বিজেপির নেতারা ভোটের আগে কোনো দলিত  বা আদিবাসী রমণীর পা ধুয়ে  দেবে, অথবা  কোনো আদিবাসী বাড়ীতে মধ্যাহ্ন  ভোজন  সারবে আর সেটা ফলাও  করে  টিভি, কাগজে  খবর  হবে রাজ্যের সব  টিভি তে এই নিয়ে ঘন্টা  খানেক  কলতলার  ঝগড়া  হবে . সে খানে  বিশেষ ভাবে অজ্ঞ রাও আসবে, বড়ো  বড়ো বক্তৃতাও হবে দিনের পর দিন, আপনাকে বুঝানো হবে  বিজেপি কতটা  মানবিক , কতটা  দলিত বা নিম্ন বর্ণের প্রতি প্রেম, আপনার মাথা  একেবারে ওয়াশ করে  দেয়া হবে  আর আপনি ভুলে যাবেন তাহলে রোহিত ভেমুলার মতোন  নিম্ন বর্ণের মেধাবী  ছাত্র কে কেন  মরতে হয়েছিলো , কেন  হথরাস  এর ঘটনা আমাদের দেখতে  হয়েছিলো?. কেন  আজও পশ্চিম ভারতে , মধ্য  ভারতে. উত্তর ভারতে উচ্চ বর্ণের মানুষ  যে রাস্তা দিয়ে যাবে সেই পথ  দিয়ে কোনো নিম্ন বর্ণের মানুষের  যাবার অধিকার  নেই? আপনি ভুলে যাবেন কেন যে কল  থেকে উচ্চবর্ণের লোকেরা খাবার  জল সংগ্রহ করে , সেই খান  থেকে  মেন খাবার  জল  সংগ্রহ  করার  অধিকার নিম্ন বর্ণের নেই?
আপনাকে হিন্দু, পাকিস্তান, বাংলা দেশ  দিয়ে মাতিয়ে রাখবে  কারন  ব্রিটিশ চলে  গেছে কিন্তু তাঁদের জারজ  সন্তান মিডিয়ারা তো আজও বেঁচে আছে  নিজেদের দেহকে বিক্রী করে সংবাদ  পরিবেশন এর জন্য.
  ভাবুন, ভাবুন ভাবা প্রাক্টিস করুন  নাহলে আগামী দিনে কেউ কিন্তু নিরাপদ  নই।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।