কিংশুক ভট্টাচার্য:বাঁকুড়া:চিন্তন নিউজ: ৭আগষ্ট:- বাঁকুড়া শহরে বিকেলে প্রাক্তন সাংসদ ও রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন য়ন্ত্রী প্রিয় জননেতা আজীবন মেহনতি মানুষের সংগ্রামী সাথী সর্বভারতীয় সিআইটিইউ নেতৃত্ব শ্যামল চক্রবর্তীর স্মরনে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মিছিলে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন ছাড়াও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা ও অনেক সাধারন মানুষ পা মেলান। সিপিআইএম জেলা কমিটির সদস্য প্রভাত কুসুম রায়, অশোক ব্যানার্জি ও প্রদীপ পান্ডা সহ একঝাঁক যুব কমরেড ইনটারন্যাশনাল গাইতে গাইতে মিছিলের সামনে থেকে অংশ গ্রহন করেন। এঁদের পেছনে বাম নেতৃবৃন্দসহ সিপিআইএম রাজ্যকমিটি সদস্য অভয় মুখার্জির নেতৃত্বে মুল মিছিল গোটা বাঁকুড়া বাজার পরিক্রমা করেন।
বেলিয়াতোড়ে মুল বাজারে সিপিআইএম জেলা সদস্য তথা বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক দীর্ঘ মৌন মিছিল পরিক্রমা করে। পথের দুধারে বহু মানুষ প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাঁকুড়া জেলার উত্তর অংশে গঙ্গাজলঘাটি র অমরকাননে প্রয়াত প্রিয় জননেতার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জ্ঞাপন করে এক দীর্ঘ শোক মিছিল সংগঠিত হয়। এই শোক মিছিলে অন্যতম নেত্রী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা রাজ্য সম্পাদিকা মন্ডলীর সদস্য তথা সিপিআইএম বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্যা সুদীপা ব্যানার্জি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন এরিয়া কমিটি ও শাখা কমিটি গুলির উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোকমিছিল সংগঠিত হয়।
ডিওয়াইএফআই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড অভয় মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্য যুব জেলা নেতৃত্ববৃন্দের উপস্থিতিতে জেলার বিষ্ণুপুরে যুব আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে বামুনবাঁধ এলাকায় বিষ্ণুপুর হাসপাতালে রক্তের অভাব মেটাতে জীবনের জন্য রক্তদানের আহ্বান জানিয়ে একটি রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়। এই শিবিরে মোট ষাট জন যুব কর্মী রক্তদান করেন। আরও বেশ কিছু ইচ্ছুক রক্তদাতাকে সরকারি রক্ত সংগ্রাহকদের অসামর্থ্যের কারনে ফিরে যেতে হয়। এই কর্মসূচি চলাকালীন সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে যুব সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন। ডিওয়াইএফআই সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখার্জি। তিনি। তথ্য সহকারে দাবী করেন বর্তমান সময়ে যখন রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার মানুষের বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বদলে দেশের সম্পদ বিক্রি ও দেশের কোষাগার খালি করে কর্পোরেটদের উপঢৌকন দিতে ব্যাস্ত। ঠিক তখন যুব সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের সংক্রমণের আশঙ্কাকে তুচ্ছ করে লাগাতার মানুষের প্রয়োজনে যেমন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন, তেমনি গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ, ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়ার সামগ্রী প্রদান, রান্না করা খাবার দুস্থ মানুষের মধ্যে বিলি করার কাজও যেমন করছেন তেমনি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য দের উৎসাহিত করতে তাঁদের সম্বর্ধনা জানানোর কর্মসূচী পালন করছেন। পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সবকয়টি দুর্নীতি ও জনবিরোধী নীতি ও কাজের বিরুদ্ধে লাগাতার সংঘর্ষ জারি রেখে মানুষকে সচেতন করে তোলা ও সংগঠিত করার প্রচেষ্টা চালু রেখেছেন। তিনি সদ্য ঘোষিত শিক্ষানীতি র তীব্র নিন্দা করেছেন। কাশ্মীর প্রসঙ্গে সেখানকের পন্ডিতদের কেন্দ্রের ৩৭০ধারা বিলোপের সমালোচনার প্রতি সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আলোচনা প্রসঙ্গে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে হিটলারের নয়া সংস্করণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন “বর্তমান কেন্দ্র সরকারের নীতি হলো হিটলারের তত্বের রূপায়ন। মানুষের বেঁচে থাকাটা এতোদুর কঠিন করে দাও যাতে মানুষ জীবিকার খোঁজে ব্যস্ত হয়ে এই সমস্যার কারনের খোঁজ করতে ভুলে যায়”।
অপরদিকে বিষ্ণুপুর পৌরসভায় দুই শতাধিক মজদুর, যাঁরা অস্থায়ী মজদুর হিসাবে স্বীকৃত। এদের না আছে কোন হাজিরা খাতা না আছে কোন পিএফ অথবা পেনসনের ব্যবস্থা। সরকার ঘোষিত নূন্যতম মজুরীর থেকে অনেক কম মাত্র একশত পঞ্চাশ টাকা রোজ মজুরি তে এঁরা বিগত প্রায় পঁচিশ বছর যাবৎ পৌরসভায় কাজ করে আসছেন কেউ কেউ আরো বেশিদিন যাবৎ। অথচ পুরো বিষ্ণুপুর শহর পরিস্কার করার দায়িত্ব পালন করেন এঁরা। করোনা মহামারী র দরুন লকডাউনে এদের সরকারি ভাবে কোন সাহায্য নেই কেবল ওই গায়ের সামান্য জামা ছাড়া। এই অবস্থায় এরা ওই সামান্য মজুরি ও গত তিনমাস ধরে পাচ্ছে না। চেয়ারম্যান কে বলতে গেলে তিনি অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে চলেছেন। তিনি এই শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোতো দূরঅস্ত উপরন্তু দাবী জানালে কাজ থেকে বসিয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছেন। এর ফলে মজদুর রা সপরিবারে অনাহারের কবলে পড়ে ধৈর্য্যের শেষ প্রান্তে এসে দলমত নির্বিশেষে কোন পতাকা ছাড়াই আজকে কাজ বন্ধ করে পৌরসভা থেকে মিছিল করে এসে বিষ্ণুপুর মহকুমা শাসকের কাছে ডেপুটেশন দেন। ডেপুটেশন শেষে মজদুরদের পক্ষ থেকে সমবেত ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে “আপাতত আগামী কাল পৌর এলাকায় পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ থাকবে এবং তারমধ্যে মজুরি না পেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ বন্ধ থাকবে এবং তার ফলে নাগরিকদের যাবতীয় অসুবিধের জন্য রাজ্য ও পৌর প্রশাসন সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী থাকবে।