কলমের খোঁচা

জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি:


তিলক ঘোষ: চিন্তন নিউজ:০১/০৭/২০২২– ভারতবর্ষের চিকিৎসা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়। চিকিৎসাক্ষেত্রে ধন্বন্তরি এই মহান চিকিৎসক ১৮৮২-এর ১লা জুলাই বিহার রাজ্যের পাটনার বাঁকিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রকাশ চন্দ্র রায় ও মাতা ছিলেন অঘোরকামিনী দেবী। পাটনাতেই তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। সসম্মানে এফ.এ. এবং গণিতে সাম্মানিক সহ বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রচন্ড অর্থাভাবের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে ১৯০৬-এ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এল এম এস এবং দু’বছর পর মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে এম ডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে মাত্র ১২০০ টাকা নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়ে মাত্র দু’বছরের মধ্যে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত সম্মান এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস প্রায় একসাথে অর্জন করেন। ১৯১২ থেকে ১৯১৯ কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে অ্যানাটমি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি ডাক্তারি প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সদস্য, রয়্যাল সোসাইটি অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন ও আমেরিকান সোসাইটি অফ চেস্ট ফিজিশিয়ানের ফেলো নির্বাচিত হন।

তাঁর রোগীদের তালিকায় ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মহাত্মা গান্ধী, মৌলানা আজাদ, জওহরলাল ও তাঁর কন্যা ইন্দিরা প্রমুখ। দেশবন্ধুর রাজনীতিতে আসেন বিধান চন্দ্র। ১৯৩১-এ গান্ধীজির ডাকে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগদান করে কারাবরণ করেন। স্বাধীনোত্তর ভারতে জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিত্বে ১৯৪৮ সালের ১৪ই জানুয়ারি থেকে মৃত্যুকাল অবধি ১৪ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। লক্ষাধিক উদ্বাস্তুদের বাসস্থানের জন্য গড়ে তুললেন সল্টলেক, লেক টাউন, কল্যাণী উপনগরী প্রভৃতি। বেকারদের জন্য কর্মনিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শিল্পের জন্য প্রতিষ্ঠা হল দুর্গাপুর ইস্পাতনগরী, চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানা। দার্জিলিং-এ দেশের মধ্যে প্রথম পর্বতারোহণ শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হল। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রচুর উন্নতি করেন তিনি, তাই তাঁকে “পশ্চিমবঙ্গের রূপকার” বলা হয়।

১৯৪৩-৪৪ বিধান চন্দ্র রায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, পুরুলিয়া, রহড়া, নরেন্দ্রপুরে আশ্রমিক পরিবেশে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। ১৯৬১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান “ভারতরত্নে” ভূষিত হন। ১৯৬২এর ১লা জুলাই মৃত্যু বরণ করেন তিনি। বরণীয় এই ব্যক্তিটির জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে। চিকিৎসাক্ষেত্রে তাঁর অবিস্মরণীয় কৃতিত্বের জন্য এই দিনটি “চিকিৎসক দিবস” হিসেবে পালিত হয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।