কলমের খোঁচা

ক্ষুদিরাম বসুর আত্ম বলিদান দিবস উদযাপনে, কিশোর সুভাষ এর নেতৃত্বে অনশন পালনের কিছু কথা


রত্না দাস: চিন্তন নিউজ:১২ই আগস্ট:- ১৯০৮ সালের ১১ই মুজফরপুর জেলে ফাঁসি হয় বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর। সেই সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন কনিষ্ঠতম বিপ্লবী যিনি ফাঁসিতে প্রাণ দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় বাংলাতে বিশাল আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল। ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির ঘটনাকে নিয়ে তখন রচিত হয়েছিল অজস্র কবিগান, টুসুগান, ভাদু গান, লোকগান এবং নানারকম পটচিত্র। আবার একরকম স্বদেশী ধুতিও পাওয়া যেত যার পারে লেখা থাকতো ‘ একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।’ বাঁকুড়ার পীতাম্বর দাসের রচিত এই গান-তারই প্রথম চরণ। এই গান শোনেনি এমন বাঙালি বিরল।

১৯১০সালের মার্চ মাসে এই ধুতি বিক্রি বন্ধ করলো ব্রিটিশরা।ক্ষুদিরাম বসুর আত্ম বলিদান দিবসে এই সময় বাংলার ঘরে ঘরে উনুন জ্বলত না অর্থাৎ পালন করা হতো অরন্ধন দিবস এবং ঘরে ঘরে থাকতো ক্ষুদিরামের ছবি। এই ব্যাপারটা ব্রিটিশদের নজরে আসে। ক্ষুদিরাম বসুর ফটো যাতে বাংলার মানুষের কাছে না পৌঁছাতে পারে তার জন্য সচেষ্ট হলো তারা। সেই সময়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কিশোর ছাত্র। তিনি তখন কটকের কাঠাজুড়ি নদীর তীরে র‍্যাভেন্শ কলিজিয়েট স্কুলের ছাত্র। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বেণীমাধব দাস। দেশপ্রেম ও শিক্ষকতায় ছিল তাঁর নিবেদিত প্রাণ। অসংখ্য দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী তৈরি হয়েছিল তাঁর হাতে। তার ব্যক্তিত্ব ও স্বদেশচেতনা ছোট সুভাষের মনে ছাপ ফেলেছিল। প্রধান শিক্ষকও সুভাষকে চিনতে ভুল করেননি বুঝেছিলেন এর ভিতর আগুন আছে। প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের সমাজসেবার কাজে অংশগ্রহণ করতেও উৎসাহ দিতেন।

ছাত্র অবস্থাতেই সুভাষচন্দ্রর মনে স্বদেশচেতনার ভাব জাগ্রত হয়।১৯১১সালের ১১ই অগাস্ট তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা ঠিক করলেন শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর তৃতীয় শহীদ দিবস পালন করবেন। সেই সময়ে ক্ষুদিরাম বসুর ছবি পাওয়া ছিল দুষ্কর। নেতাজি পুরোনো খবরের কাগজ থেকে বার করেছিলেন ক্ষুদিরাম বসুর ছবি। তারপর তার সাথে বোর্ড জুড়ে তিনি ছবিটিতে মাল্যদানের উপযোগী বানান। তিনি ছাত্রদের কাছে উপবাস করে দিনটি পালন করার প্রস্তাব দেন। সকলেই তার প্রস্তাবে সায় দেয়। ঠিক হলো ঐদিন স্কুলের হোস্টেলে উনুন জ্বলবে না।হলোও তাই। সেদিন হোস্টেলে উনুন জ্বলেনি। সকলেই উপবাস করে রইলেন এটি ছিল নেতাজীর প্রথম নেতৃত্ব দানের ঘটনা। প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস নীরবে সকলকে উৎসাহ দিতে লাগলেন এবং এই কাজের জন্য মনে মনে তিনি গর্বিত হলেন।

যথারীতি এই সংবাদ পৌঁছালো ব্রিটিশ সরকারের কাছে। ম্যাজিস্ট্রেট অনুসন্ধান করলেন। বেণীমাধব দাসকে বদলি করে দেওয়া হলো কৃষ্ণনগরে। কটক থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিলেন তিনি। সেদিন তাকে বিদায় জানাতে দলে দলে ছাত্ররা ভিড় করে এসেছিল কটক স্টেশনে। নেতাজি তার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকর গলায় ফুলের মালা পরিয়ে পায়েরধূলা নেন। তিনিও তাঁর প্রিয় ছাত্র সুভাষকে আশীর্বাদ করেন, ‘ তুমি যেন একজন মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠতে পারো।’ তিনি ট্রেনে উঠে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়লে ছাত্ররাও সকলে হাতজোড় করে তাকে নমস্কার জানালো সজল নয়নে। এরপরেও কিন্তু সুভাষ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ শেষ হয়ে যায়নি বেণীমাধব দাসের। চিঠি বিনিময় চলত। এমনকি দেশ ত্যাগের সময় প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস এর আশীর্বাদ চেয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। পরবর্তীতে যিনি হয়ে উঠেছিলেন নেতাজী।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।