কলমের খোঁচা রাজনৈতিক

বিহার ভোট ও মোদী ম্যাজিক (প্রাথমিক পর্যালোচনা)


শ্যামল চ্যাটার্জি:নিজস্ব প্রতিবেদন:- চিন্তন নিউজ:- ১৩ নভেম্বর ২০২০,টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শেষ হল বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। সারা দেশের চোখ ছিল এই নির্বাচনের দিকে। অবশেষে কান ঘেষে কিংবা কথায় আছে বরাত জোরে জে ডি ইউ – বি জে পি জোট সরকার গড়তে চলেছে। অনেকে মোদী ইমেজকে টিকিয়ে রাখতে এই জয়কে বলছেন মোদী-ম্যাজিক। ম্যাজিক হলে স্যুইপ হতো। ওয়াশ আউট হয়ে যেত জে ডি ইউ জোট। কিন্তু তা তো হয়নি। নির্বাচনের ফলের দিকে তাকানো যাক। তেজস্বী যাদবের আর জে ডি শুধুমাত্র আসন সংখ্যায় নয়, শতাংশের হিসেবেও আর জে ডি দুই প্রতিপক্ষ বিজেপি ও জে ডি ইউ-কে টেক্কা দিয়েছে। গোটা তিনেকে আসনে জয়ের মার্জিন ১০০-র নীচে। আর ১০০ আসনে জয়ের মার্জিন হাজারের কাছাকাছি। মার্জিন যাই হোক জয় জয়ই। কিন্তু পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভোটের সংখ্যার হিসেবটা খুব জরুরী। এর হিসেব নিকেষ চতজলদি সম্ভব নয়।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে বিহার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচার বিশ্লেষণ করা শুরু হয়ে গেছে। অদ্ভুতুড়ে কিছু যুক্তিকে খাড়া করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে যে যুক্তিগুলি প্রাথমিকভাবে এসেছে তার দিকে একটু চোখ রাখা যাক।

প্রথমেই আনা হয়েছে কে প্রধান শত্রূ? বি জে পি না তৃণমূল কংগ্রেস? রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে একে অপরের পরিপূরক। তৃণমূল কংগ্রেস বা বি জে পিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে এটা অনেকটা হেড আই উইন, টেল ইউ লুজের মতো। ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত যদি কেন্দ্র সরকার কাজের হিসেব দেখলেই বোঝা যাবে এই সরকার কতটা জনগনের? আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে সমস্যার সমাধান না করে অনুদান দিয়ে মানুষের সমস্যাকে ধামা চাপা দিয়ে পপুলারিজিম পলিটক্সকে আনা হচ্ছে। এই কাজ আমাদের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকার উভয়েই করছে। এই দুই দলের বিভিন্ন জনসভা বা অন্য কোন জায়গায় বিবৃতিতে অনুদানে কে কত এগিয়ে তার বিবরণ থাকে। একেবারে বিজ্ঞাপনী প্রচার। তাদের বক্তব্যে থাকে না কোথায় কত কর্মসংস্থান হলো?

কোভিড সময়ের দিকে তাকানো যাক। অনেকেই বলেছেন যে অপরিকল্পিত লকডাউন। কিন্তু মানুষকে অসুবিধে ফেলার জন্যই এটা খুবই সুপরিকল্পিতভাবে এই লকডাউন। সৃষ্টি করা হলো এক অতিরঞ্জিত কোভিড ভীতি। ২৪ মার্চই সংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ হারায় ১২ কোটি মানুষ। কোভিডকে হাতিয়ার করে অবাধ

বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। পালটে দেওয়া হয়েছে শ্রম আইন। কোথাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে মজুরী। কোথাও কাজের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে অনেক কাজ হলেও নির্মান কাজ হয় না। আনা হয়েছে কৃষকবিরোধী কৃষি বিল। সারা বিশ্ব জুড়েই কর্পোরেট হাউস কোভিডকে হাতিয়ার করে তাদের আখের গোছানো কাজ করছে। আমাদের দেশও তার বাইরে নয়। খুব পরিকল্পিতভাবে কোভিডকে কেন্দ্র করে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করা হয়েছে, যাতে কোভিড নিয়ে আতঙ্কটা খুব গভীরে যায়। মানুষ যাতে প্রতিবাদে না সামিল হয় তার জন্য ক্রমশই লকডাউনের বিধিনিষেধ কড়া করা হয়েছে। শিথিলও করা হচ্ছে ধাপে ধাপে। কোভিড বিতর্ক এই প্রতিবেদনে যাচ্ছি না। যাইহোক প্রসঙ্গে আসা যাক।

আরেকটি ব্যাপারকে আনা হচ্ছে। তা হলো মিম-কে। বিহার ভোটে এই মুসলীম মৌলবাদী সংঠনটি ৫টি আসন পেয়েছে, ১.২৪% ভোট পেয়েছে। আর এই সংগঠনের জন্যই নাকি বিহারে জে ডি ইউ জোট জিততে পেরেছ। কিন্তু বিহারের ভোটে নোটায় ভোট পড়েছে ১.৬৮%। কিন্তু এই পরিসংখ্যানকে আসন সংখ্যার হেরফেরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কারণ নোটা অপছন্দের ভোট। কিন্তু ভোট, এই পরিসংখ্যানও হেরফের ঘটাতেই পারে। এই মিম-কে সামনে আনা আরেক মারাত্মক ব্যাপার। সাম্প্রদায়িক উত্তাপকে বাড়ানো হচ্ছে। আমরা সবাই জানি ও বিশ্বাস করি সাম্প্রদায়িকতা মেহনতি মানুষের মধ্যে বিভেদ করার বড় হাতিয়ার। এই সমস্ত কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

আমাদের রাজ্যের দিকে তাকানো যাক। বর্তমান সরকারের বর্তমানে নাজেহাল অবস্থা। তা শুধু অন্তর্দলীয় নয়, সরকারি ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। শুধুমাত্র জনগনকে বিভ্রান্ত করার বি জে পি আর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়। গত লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে বি জে পিকে চেয়েছিল। কিন্তু সার্বিকভাবে মানুষ বুঝতে পেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস আর বি জে পি একই মুদ্রার দুই পিঠ। অপর দিকে গত লোকসভায় চরম বিপর্যয়ের পর বামপন্থীরা কোন হতাশায় না গিয়ে নিজেদের নতুন করে প্রস্তুত করেছে। লকডাউনে তার প্রমান রেখেছে। মানুষ নতুন করে বামপন্থীদের উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে। তাই, এই সময় বিহারের নির্বাচনের সঠিক মূল্যায়নকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আলদা চরিত্র আছে। প্রত্যেক রাজ্যের আলদা আলদা সামাজিক বিন্যাস আছে। সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করতে হবে। সেই পরিপেক্ষিতে বিহারের সাথে পশ্চিমবঙ্গে তফাৎ আছে।

বর্তমান অবস্থায় সংসদীয় ব্যবস্থার গুরুত্ব আছে। তাই নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেই হবে। কিন্তু শ্রেনীগত দৃষ্টিভঙ্গীতে বিচার করতে হবে। বি জে পি প্রধান শত্রু। তাই, অনেকেই বলছেন বি জে পি বিরোধিতার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে হাত মেলাতে হবে। কিন্তু কোন সূত্রানুসারে সেটাই পরিষ্কার নয়। আসলে কোন সুনির্দিষ্ট যুক্তি নেই। এই তত্ত্বটা তৃণমূল কংগ্রেস আর বি জে পিকে রক্ষার জন্য। তাই, রাজ্যের বামপন্থীদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।