রাজ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

ধ্বংস করা হলো রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ : নির্বিকার প্রশাসন


স্বাতী শীল, চিন্তন নিউজ, ৫ নভেম্বর : শেষ পর্যন্ত পরিবেশবিদদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। ছট পুজোর একদিন পরেই রবীন্দ্র সরোবরের জলে ভাসতে দেখা গেল মরা মাছ, মরা কচ্ছপ। তছনছ হলো সরোবরের পদ্মবন। আদালতের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যেভাবে ছট পুজোর নামে তান্ডব চলল তাতে জীব বৈচিত্রের উপর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেছেন পরিবেশ প্রেমীরা। পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী নব দত্ত বলেছেন, “ভোটের কথা মাথায় রেখে পরিবেশের বিষয়টিকে নিয়ে ভাবলই না কোন কোন রাজনৈতিক দল। সরকারে রয়েছে তৃণমূল। আদালতের নির্দেশ পালন করার ক্ষেত্রে সরকার যে কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকাই পালন করল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।”

সোমবার সকালেই রবীন্দ্র সরোবরের বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন স্থানে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। ভেসে ওঠে একটি বড়সড় কচ্ছপও।চোখে পড়ে লাঠির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ পদ্মবন।পরিবেশবিদদের দাবি, আগের থেকে রবীন্দ্র সরোবর বেশ ভালোই হয়েছিল। কিন্তু পুজোর নামে সরোবরের জলে নেমে জলে তেল ঘি সহ পূজোর সামগ্রী যেভাবে মেশানো হয়েছে তাতে এরপর জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকাটাই দুষ্কর। ছট পুজোর পর রবীন্দ্রসরোবরের জল ঠিক কতটা দূষিত হয়েছে, তা জানার জন্য এই দিন নমুনা সংগ্রহ করেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পরীক্ষার পরেই জানা যাবে জলজ প্রাণীদের জন্য ঠিক কতটা বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে কলকাতার ফুসফুস রবীন্দ্র সরোবর।

ছট পুজো উপলক্ষে এরকম কিছু একটা ঘটতে পারে আশঙ্কা করেই রবীন্দ্র সরোবরে গেটগুলিতে আদালতের নির্দেশে তালা ঝুলানো হয়েছিল। কিন্তু তালা ভেঙে কার্যত সরোবরের ভেতরে ঢুকে পড়ে কিছু যুবক। এরপর ছট পুজো শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে মানুষের ভিড় উপচে পড়তে থাকে রবীন্দ্র সরোবরে।

তালা ভেঙ্গে পুণ্যার্থীদের সরোবরে প্রবেশ করা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন পরিবেশবিদ সুমিতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সোমবার বলেন, “আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও কিভাবে তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করল একদল যুবক? পুলিশ প্রশাসন কোথায় ছিল? এখন দূষণের জেরে যেভাবে জলজ প্রাণীদের মৃত্যু হলো তার দায় কে নেবে”?

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তও পুজোর আড়ালে প্রচ্ছন্ন রাজনীতিকে নির্দেশ করে বলেছেন যে, এটা আসলে ছট পুজো নয়, ভোট পুজো। রবীন্দ্র সরোবরের স্বাস্থ্য আগের থেকে অনেক ভাল হয়েছিল। কিন্তু এবার যা হল, তা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন যে, তথ্য ও ছবিসহ বিষয়টি জাতীয় পরিবেশ আদালতে জানানো হবে। বিষয়টি এখন পূজার গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজনীতির আঙিনায় পৌঁছে গেছে।

পরিবেশবিদ নবদত্ত র গলাতেও একই সুর শোনা গেছে। এই দিন তিনি বলেন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে কিছু বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে সমগ্র জীব বৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটে গেল।একাধিক জলজ প্রাণী মারা গেল। যদিও আদালতের নির্দেশকে কার্যকর করতে গত ২০ সেপ্টেম্বর একটি বৈঠক হয়, যেখানে বিহারি সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় ক্লাব, পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশবিদও উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আসল সময়েই পুলিশ প্রশাসন উধাও। যখন তালা ভেঙে ভেতরে মানুষের ভিড় বাড়ছে, সেই সময়ে কেএমডিএ-র কয়েকজন আধিকারিকের সাথে হাজির থাকতে দেখা যায় কর্পোরেশনের কয়েকজন আধিকারিককেও। তবে, তাদের কাউকেই এদিন বাধা দিতে দেখা যায়নি।

পরিবেশবিদ নব দত্তের মতে, “বিষয়টি এখন আর শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনীতির বিষয় হয়ে উঠেছে”। তিনি আরো বলেন, “শুধু ফুল বা প্লাস্টিক তুলে ফেললেই হবে না। সরোবরের জলে যথেচ্ছ তেল ঘি মিশে যাওয়ায় জলের স্বাভাবিক বৈচিত্র্যই পরিবর্তিত হয়ে গেছে, এর খেসারত তো দিতেই হবে। আর মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই রেখেছিলেন যে, আমি কি লাঠি গুলি চালাবো?ফলে এটিও যে যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ, এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।” পরিবেশ নিয়ে সরকার কবে সত্যি সত্যি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে , মানুষ সেটা নিয়েই চিন্তিত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।