মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ৭ জুন: লোকসভা নির্বাচন, এমন কি মন্ত্রিসভা গঠনের পরও এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল বিজেপির বন্ধুত্ব ক্রমশঃ এমন ভয়ংকর শত্রুতা রেষারেষিতে পৌঁছেছে যাতে বাংলার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই যুযুধান দুই শিবির যে নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতেছে তা ধিক্কার জনক। উভয়ের কদর্য ভাষা যে শুধু বঙ্গ সংস্কৃতিকে কলুষিত করছে তা নয়, ভোট পরবর্তী হিংসা মারামারিতে রাজ্যবাসী বিপর্যস্ত।
গতকাল বারাসত বাসী প্রত্যক্ষ করল এক কালো রাত! বৃহস্পতিবার রাত থেকে বারাসতের দ্বীজহরিদাস কলোনিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক সন্ত্রাস। জানা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী ও সমর্থক ঘরছাড়া।তাদের অভিযোগ বিজেপির অত্যাচারের ভয়ে তারা এলাকা ছাড়া। অপর দিকে বিজেপির বক্তব্য ভোটের আগে থেকেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্মীরা এলাকায় লুঠ ও গুন্ডারাজ চালাচ্ছিল। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ দ্বীজহরি কলোনির মানুষ বিজেপিকে ভোট দেয়, ফলে এলাকায় তৃণমূলের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ভোটের ফলে ভীত ঐ তৃণমূল কর্মীরা নিজেরাই এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। এখন নির্বাচন পর্ব মিটে গেলে স্থানীয় কাউন্সিলর বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঐ ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে গেলে পুলিশ সহ তৃণমূল কর্মীরা গণপ্রতিরোধের মুখে পরে। স্থানীয় মানুষই পুলিশের উপর হামলা চালায় বলে বিজেপির দাবি।
নেপথ্যে মূল কারন যাই হোক, বৃহস্পতিবার রাত থেকে দ্বীজহরি দাস কলোনি সন্ত্রাস কবলিত।পুলিশ জনতা খন্ড যুদ্ধে উত্তপ্ত অঞ্চল। লাগাতার জনতার ইঁটবৃষ্টি, পাল্টা পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ, বেশ কয়েকটি বোমাও ফাটানো হয়। বেশ কয়েক জন গুরুতর আহত যার মধ্যে পুলিশ ও আছে। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং নামানো হয়েছে RAF। এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে; চলছে চিরুনি তল্লাশি, গোটা এলাকা পুরুষ শূন্য!
গোটা ঘটনায় তৃণমূল এবং বিজেপি তাদের স্বভাবসিদ্ধ সুরে একে অপরের উপর দায় চাপালেও প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ যদি ক্ষোভেই পুলিশের উপর চড়াও হয় তবে তাদের হাতে এত অস্ত্র এত বোমা এল কোথা থেকে? এর পিছনে কি তাহলে বড় কোনো রাজনৈতিক যোগ আছে? রাতভর ব্যাপক বোমাবাজি লাঠিচার্জ কখনোই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে না! নির্বাচন পরবর্তী দলগত এই হিংসার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তৃণমূল বিজেপির বাংলার ক্ষমতা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে তাদের পারস্পরিক হানাহানিতে বাংলার রাজনীতি রক্তাক্ত, বঙ্গ সংস্কৃতি ভূলুন্ঠিত! বাংলার মানুষ এই অশান্তি থেকে, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। অবিলম্বে এই সংঘর্ষের সমাধান হওয়া জরুরী।