দেশ বিদেশ

বড়াপাসরাস টেগোরাই’ আবিষ্কারে বাঙালী বিজ্ঞানীদের ‘রবীন্দ্র প্রেম’।


‘কল্পনা গুপ্ত, নিউজ চিন্তন – ইতনা বড়া প্যর ম্যায়নে কভি নেহি দেখা সাহাব! – কুলীরা সবিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠলো। এত বড় বড় পা ওরা জীবনে দেখেনি।

ভারতের মধ্যপ্রদেশে ডাইনোসরসীয় কালে ডাইনোসরদের রাক্ষুসে দাপট যে ছিলো তার নিদর্শন মিলেছে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার মধ্যে দিয়ে। সে এক সময়ের কথা। ইউরোপীয় আল্পসের জুরা মাউন্টেন থেকে জুরাসিক নামের উদ্ভব। এই জুরাসিক উপযুগে শুরু হয়েছিলো ল্যান্ডমাস প্যাঞ্জিয়ার ভাঙ্গন, যার উত্তরের অংশের নাম লরেসিয়া এবং দক্ষিণ অংশের নাম গন্ডোয়ানা। এই সময়েই থেরোপড ডাইনোসরের থেকে প্রথম পাখির উদ্ভব হয়। টিকটিকি, সমুদ্রে কুমীর ও নানান প্রকার সাপের আবির্ভাব হয় বলে এই সময়টিকে বলে সরীসৃপের যুগ।

ভূতাত্ত্বিক সময় সারণী অনুযায়ী প্যালিওজোয়িক যুগ হলো প্রাচীন জীবনের, মেসোজোয়িক মধ্যবর্তী জীবনের, কেনোজয়িক হলো নবীন জীবনের বিভাগ।

২০০৭ সালে মধ্যপ্রদেশের ধার জেলার কুকশীবাগ অঞ্চলে প্রায় ১৪৪ থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের ১০০টি তৃণভোজী ডাইনোসরের ডিমের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল। প্রায় ৮ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের হাড়, কুমিরের বিশালাকার চোয়াল ইত্যাদি মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিল।

যাই হোক,নিবন্ধের নামকরণ যাকে নিয়ে তাঁর প্রসঙ্গে যেতে গেলে আমাদের তো ফসিল প্রসঙ্গে যেতেই হয়। ১৯৫৮ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ পামেলা রবিনসনের সঙ্গে রবীন্দ্র স্নেহধন্য প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের সাক্ষাৎ ঘটে। প্রশান্তচন্দ্রের অনুরোধে জীবাশ্ম গবেষণার কর্মক্ষেত্র হিসাবে চিনের পরিবর্তে ভারতে এসে ইন্ডিয়ান স্টাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে অতিথি বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করার জন্য তিনি সম্মত হন। পামেলার সাহায্যে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হলো আই এস আই য়ের শাখা হিসাবে জিওলজিকাল সার্ভে ইউনিট। এই কাজে যুক্ত হলেন গণিতজ্ঞ টি এস কুট্টি, প্রাণীবিদ এস এল জৈন ও বাঙালি ভূবিদ তপন রায়চৌধুরী।

১৯৬১ সাল, এর ঠিক ১০০ বছর আগে জন্মেছিলেন বাঙালির মুখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জব্বলপুরে প্রাণহিতা-গোদাবরী অববাহিকায় খনন কার্য চালিয়ে তৃণভোজী সরোপড ডাইনোসরের বিশালাকার জীবাশ্ম আবিষ্কার হলো ওই ১৯৬১ সালে উক্ত বিজ্ঞানীদের দ্বারা। কর্মরত শ্রমিকেরা ‘বড় পা, বড় পা’ বলে চিৎকার জুড়ে ছিলো। সরোপড প্রজাতির ডাইনোসরদের স্তম্ভের মত পা ছিলো বৈশিষ্ট্যময়। Early Jurassic সময়ের এই প্রজাতির ডাইনোসরদের পা ছিলো বিশাল। এদেরই নাম দেওয়া হলো বরাপাসরাস। এহেন আবিষ্কারের আনন্দে আত্মহারা বিজ্ঞানীর দল ওই লম্বা গলা ও দীর্ঘ লেজসমেত সরোপডের জীবাশ্মটির নামকরণ করলেন ‘টেগোরাই’। কারণ সেই বছর ছিল কবিগুরুর জন্মশতবর্ষ। বিজ্ঞানীরা তাঁদের সাফল্যকে সম্মানীয় করে রাখলেন এইভাবেই।

বিভাগীয় ভাস্কর প্রণবকুমার মজুমদার ১৮ মিটার লম্বা এই ডাইনসরের কংকাল জীবাশ্মের সাথে পাওয়া তিনশোটা টুকরো জুড়্ব তৈরি করেন যেটি আই আদ আইয়ের জিওলজিকাল মিঊজিয়ামে আজও আছে।

১৯৭০ সালে ‘বরাপাসরাস টেগোরাই’ নিয়ে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্রটি প্রকাশে উদ্যোগী ছিলেন দুই বিজ্ঞানী- তপন রায়চৌধুরী ও শংকর চট্টোপাধ্যায়। গবেষণাপত্রটির নাম ছিলো – The Sauropod Dinosour from the Lower Jurassic Kota Formation of India. ভূবিজ্ঞানী শংকর চট্টোপাধ্যায় ও ধীরাজ কুমার রুদ্রের আবিস্কারে প্রকাশিত হয় মধ্যভারতের প্রাচীন ভূমিতে উল্কাপাত এবং অগ্ন্যুৎপাতের কারণেই ভারতবর্ষ থেকে অবলুপ্ত হয়ে যায় ডাইনোসর।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।