কলমের খোঁচা

হিন্দি ও ইংরেজী ভাষার আধিপত্যে বাংলা ব্রাত্য


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:২৩শে ফেব্রুয়ারি:– ২১ ফেব্রুয়ারী মহাসমারোহে আবেগতারিত হয়ে বাংলাভাষার শহীদদের স্মরণ করলেও ধনীক শ্রেণী ,মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তদের জীবনচর্যায় বাংলা ভাষার চর্চা ম্রিয়মান ।তাই ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা ,”বাংলাটা ঠিক আসে না “খুবই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু আমাদের গর্বের সমৃদ্ধশালী ,ঐতিহ্যবাহী ভাষার এই বেহাল দশা কেন?
মোগলদের হাত ধরে আমাদের দেশে উর্দু ভাষার প্রবেশ। উর্দু ভাষার কোন জাতি, ধর্মের ভাষা ছিলো না। সেইসময় বিভিন্ন জনপদের সংমিশ্রণে উর্দু ভাষা সমৃদ্ধশালী হয়েছে।
ঔপনিবেশিক শাসনে ১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ প্রশাসক সুকৌশলে উর্দু ভাষাকে মুসলমানের ভাষায় পরিণত করে। তখন হিন্দুদের বলেও কোনো ভাষা ছিলো না। বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত ছিলো। ব্রিটিশ শাসক “ভাগ করো, শাসন করো”এই নীতিকে বাস্তবায়ন করার জন্য উর্দু থেকে আরবী, ফার্সি বাদ দিয়ে কিছু সংস্কৃত সংকেত প্রবেশ করিয়ে একটি নতুন ভাষার”হিন্দি “র জন্ম দেয় ।তারপর থেকে এটি হয় হিন্দুদের ভাষা।
উত্তর ঔপনিবেশ শাসনে হিন্দি, উর্দু কে রাষ্ট্র ভাষা করে দুই শাসক। পাকিস্তানের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলো বাঙালি সমাজ। রক্ত দিয়ে তারা “মা “ভাষাকে মর্যাদার আসনে বসায়।আজও পাকিস্তানে বিভিন্ন ভাষার ওপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণ চলছে।

ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয় ও পুঁজি আনুকূল্যে আমরা মাতৃ ভাষাকে ভুলতে বসেছি। সংস্কৃতির ওপর এই আক্রমণ উত্তরসূরিদের মনন নষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষও হ’তে দিচ্ছে। ভাবতে হবে, উত্তরসূরিরা হিন্দি গান ভালোবাসে। কারণ প্রচুর পরিমাণ পুঁজি ব্যবহার করে এই জেনারেশনের মনোগ্রাহী করে এই গানগুলি তৈরী করা হয়। বিভিন্ন উৎসবে বাংলা গান শোনাই যায় না। কিছুদিন আগে শাসক সুরে হিন্দি ভাষা চাপানোর সুর ধ্বনিত হচ্ছিল। বাঙালিরা নির্বিকার। নিজেরাই নিজেদের ভাষাকে খুন করছে বাঙালি। তাই ভাবার সময় এসেছে। বিশ্বে র কাছে বাংলা ভাষা সমাদৃত, অথচ দেশে ভাষা- মায়ের কদর হচ্ছে না।

আজও ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরোতে পারি নি ,তাই ভাবি আর যাই হোক ছেলেমেয়েদের ইংরেজীটা শিখলেই হলো ,সাথে ম্যাথ ।ব্যস। ফলত তাদের শিকড়হীন করে দিচ্ছে আজকের সমাজ, মানসিকতা।
সব উন্নত জাতি আগে নিজের ভাষাকে আগলায়, তারপর অন্যভাষা শেখে। বাঙালিরা উল্টো করছে। ভাবনা প্রয়োজন, পেছনের দিকে হাঁটা হচ্ছে না তো!!
তাই শুধু একদিন নয় প্রত্যেকদিন ভাষাকে ভালোবেসে পাঠ করতে হবে, তার শ্রীবৃদ্ধির পথে এগোতে হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।