মিঠুন ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ২৩ ফেব্রুয়ারি: শাইনিং ইন্ডিয়া আর সাফারিং ইন্ডিয়া বিভেদটা ক্রমশ প্রকাশ্য আসছে। রাষ্ট্রশক্তিকে কে বোঝাবে দেয়াল তুলে দিলেই বঞ্চিত মানুষগুলো সঞ্চিত অর্থের মালিক হয়ে যায় না। টেবিলের ভাঙা পায়া লুকোতে ভালো পর্দা দিলেই টেবিলটা শক্তিশালী হয় না। বিশ্বের মোট ক্ষুধার্ত শিশুর ৪৩.৫ শতাংশ এদেশে। বিশ্বের মোট অপুষ্টির শিকার গর্ভবতী মায়েদের ৫২% এদেশে। ন্যূনতম মজুরির শ্রমিক সংখ্যা বিশ্বের ৬২ শতাংশ এদেশে। গত ৪৫ বছরে বেকারত্বের দিক দিয়ে আজকের দিনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
দেশের মোট সম্পদের ৭৩% প্রথম সারির দশজন শিল্পপতির হাতে। আদালতে ঝুলে থাকা পেন্ডিং মামলা নিষ্পত্তি করতে হলে আগামী ৩০০ বছর লাগবে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ক্রমাগত কমেই যাচ্ছে, উচ্চ শিক্ষিত বেকারের হার সারা বিশ্বের মধ্যে এক নম্বরে ভারতের নাম। সাধারণ বেকারদের জীবন যন্ত্রণার কথা আজ সারা পৃথিবীতে আলোচিত। অর্থনীতির এমন অবস্থা যে, সমস্ত রাষ্ট্রায়াত্ত সম্পত্তি গুলোর বিলগ্নীকরণ অথবা বেসরকারিকরণ করতে হচ্ছে।
যে আমেরিকার সৃষ্টি সারা বিশ্বের সন্ত্রাস, তার প্রেসিডেন্টকে ৩ ঘন্টা ঘোরানোর জন্য জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অভাবী মানুষগুলোর পেটের খিদে যেন বাইরে না দেখা যায় তার জন্য সরকারি কোষাগারের কয়েকশো কোটি টাকা দিয়ে পাঁচিল তুলে দেওয়া হলো। অথচ সে টাকায় অনায়াসে মানুষগুলোর পাকা বাড়ি করে দেওয়া যেত। উৎপাদন শিল্প আজ তলানিতে, অটোমোবাইলস, রেডিমেড গার্মেন্টস, আইটি সেক্টর, ট্রেডিং বিজনেস সমস্তটা ধুঁকতে ধুঁকতে প্রায় কোমায় চলে গিয়েছে। অবিলম্বে সুচিকিৎসা না হলে দেশের অর্থনীতি মারা যাবে।
ঠিক এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে ধর্ম খাওয়ানো হচ্ছে, কাশ্মীরের ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। দেশভক্তির কোরামিন দিয়েও যখন কাজ হচ্ছে না তখন রাষ্ট্রশক্তিকে সরাসরি হত্যা কিংবা কারাগারের অস্ত্র ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানুষকে মানুষের সাথে বিভাজিত করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে কখনো জাতের নামে, কখনো ধর্মের নামে, কখনো বর্ণের নামে। নানা সম্প্রদায় নানান ভাষার এই বৈচিত্র্যময় বহুত্ববাদী ভারতবর্ষকে টুকরো টুকরো করে কোথাও শাইনিং ইন্ডিয়া দেখানো হচ্ছে কোথাও সাফারিং ইন্ডিয়া ছেঁড়া কাপড়ে ক্ষুধার্ত পেটে নিজের আব্রু বাচানোর শেষ চেষ্টায় লড়াই করে চলছে।