দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

খোঁজ পাওয়া গেল প্লাস্টিক দানব বিনাশকারী ব্যাকটেরিয়ার।


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:১৫ইঅক্টোবর:–বর্তমান বিশ্বে প্লাস্টিক এক ভয়ংকর আতঙ্কের নাম। এই প্লাস্টিক বন্ধ করতে এক দিকে দেশীয় ও আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করতে হয়, আবার ভারতের বণিকি স্বার্থে যে প্লাস্টিক বর্জন করতে আইন করেও আইন তুলে নিতে হয় সেই প্লাস্টিক আতঙ্ক কিছুটা হলেও হয়তো লঘু হতে পারে এই আবিষ্কারের ফলে। আর তার সমস্ত কৃতিত্ব ভারতীয় গবেষকদের!

হ্যাঁ সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার শিব নাদন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অধ্যাপিকা রিচা প্রিয়দর্শিনীর নেতৃত্বে আবিষ্কার করলেন এমন দুটি ব্যাকটেরিয়া যা আছে প্রকৃতিতেই , এবং যারা অন্যান্য পচনশীল বস্তুর মতোই প্লাস্টিককেও গলিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে। এই বিশেষ দুটি ব্যাকটেরিয়া হলো- ১) “এগজিগুয়োবায়ো ব্যাকটেরিয়াম সিবিরিকাম স্ট্রেন ডি আর ১১” এবং ২)”এগজিগুয়োবায়ো ব্যাকটেরিয়াম আনডি স্ট্রেন ডি আর ১৪” । গবেষকদের মতে প্লাস্টিক থেকে যে পলিস্টাইরিন তৈরি হয় তা সহজে পচনশীল নয়। তা মাটিতে মেশে না। ফলে মাটি জল সব জায়গায় বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করে। মাটির মধ্যে জলের আদান প্রদান রোধ করে জীব জগতের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। ভারি আণবিক ওজনের পলিস্টাইরিনের রাসায়নিক শৃঙ্খল এতটাই দীর্ঘ যে তা সহজে ভাঙে না । ফলে পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

নয়ডার গবেষকরা অতি সাধারণ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত একটি প্লাস্টিক কাঁটা চামচ সঠিক ভাবে পচে গলে মাটির সাথে মিশতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে চারশো বছর! এই তথ্য সমগ্র বিশ্ববাসীকে প্রতিদিনের প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে।শিব নাদন গবেষকদের দাবি, সম্প্রতি খোঁজ পাওয়া ব্যাকটেরিয়া দুটি অনায়াসে এই পলিস্টাইরিন পচিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে সক্ষম। এই গবেষণা টিম ভারতীয় পরিসংখ্যাতত্ত্ব ধরে দেখিয়েছেন, প্রতি বছর এদেশে ১ কোটি ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। “অল ইন্ডিয়া প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের” হিসাবে ভারতের শিল্পাঞ্চল থেকে বছরে ১কোটি ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন অপচনশীল পলিস্টাইরিন তৈরি হয় যা প্রতি মুহূর্তে ভারতের বাস্তুতন্ত্র কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে । শিব নাদন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ তথ্য “রয়াল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি (আর এস সি) অ্যাডভান্স” নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ন্যাচারাল সায়েন্সের জীব বিজ্ঞান বিভাগের গবেষিকা রিচা প্রিয়দর্শিনী জানিয়েছেন “আমাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য থেকে স্পষ্ট, প্লাস্টিকের রাসায়নিক গঠন ভাঙতে সক্ষম এগজিগুয়োবায়ো ব্যাকটেরিয়াম। ফলে প্লাস্টিক থেকে পরিবেশ দূষণ রুখতে ভবিষ্যতে এদের ব্যবহার করা যেতেই পারে।”

প্রিয়দর্শীনি আরো জানিয়েছেন ,জলা জমিতেই এই ব্যাকটেরিয়া বেশি পাওয়া যায়। এই সূত্র ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রূপমঞ্জরী ঘোষ জানিয়েছেন ক্যাম্পাসের জলা জমিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই গবেষকরা হাতে নাতে সুফল লাভ করেছেন। তাদের আবিষ্কার এককথায় যুগান্তকারী। মানুষ একই সঙ্গে সৃষ্টিশীল আবার ধ্বংসপ্রবণও। নিজের প্রয়োজনে মানুষ প্লাস্টিক তৈরি করে জীবনকে প্লাস্টিক অনুগামী করতে করতে এমন এক ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েছে যে মানুষকেই আবার প্লাস্টিক রোধ করতে সোচ্চার হতে হয়েছে। আশার কথা হলো মানুষের শুভবুদ্ধিই সেই প্লাস্টিক মারন থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পেয়েছে। তবে মানুষের ঊর্দ্ধে প্রকৃতি, এই সত্য আবার প্রমাণিত হলো!

কোনো যন্ত্র বা রাসায়নিক থেকে প্লাস্টিক জাত পলিস্টাইরিন ধ্বংসের সূত্র মেলেনি। প্রকৃতি থেকেই প্রকৃতির সুরক্ষার পথ মানুষ খুঁজে বার করেছে। আগামী দিনে জীব জগতের আনুবিক্ষনিক জীব থেকেই প্লাস্টিকের মত বিধ্বংসী বর্জ্যের মোকাবিলা হবে বলে আশা করা যায়। তবে মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। সরকারি, বেসরকারি ব্যক্তিগত ভাবে সমগ্র বিশ্ববাসীকে প্লাস্টিক ব্যবহারের বিধিনিয়ম মেনে প্লাস্টিক ব্যবহার করলে পলিস্টাইরিন তৈরি কম হবে তবেই এগজিগুয়োবায়ো ব্যাকটেরিয়ামের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে। নিঃসন্দেহে বিশ্ব দরবারে প্লাস্টিক খাদক ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কারে ভারতীয় গবেষনার এই সাফল্য গর্বের বিষয়!!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।