সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:২৩শে ফেব্রুয়ারি:–মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন জীবিকা সেবক দেরএই দূর্মূল্যের বাজারে মানুষ এর বেঁচে থাকা যেখানে দায় সেখানে প্রায় তিন বছর ধরে বেতন মিলছে না জীবিকা সেবক দের।। মাত্র ৭৫০০/ বেতন তাও মিলছে না।। নিদারুণ আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়ে রাজ্যের তৃনমুল সরকারের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন পরিবার ও সন্তান সহ।। এরা এর আগে অন্তত ১০ বার গেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে এবং ২০ বার গেছেন পঞ্চায়েত দপ্তরে।। কোন লাভ হয়নি। গত ৯ই সেপ্টেম্বর এনাদের দুই প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তারপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি টেলিফোন করে এনাদের জানিয়ে দেন বকেয়া বেতন মিলবে না।। তিনি আরও জানিয়েছেন যে পঞ্চায়েত দপ্তরে নাকি একটা আলাদা একটা দপ্তর তৈরি করা হবে আর সেখানে এই জীবিকা সেবক দের নিয়োগ করা হবে।। এত অমানবিক রাজ্য সরকার যে তারপর পাঁচ মাস কেটে গেছে কিচ্ছু সুরাহা হয়নি উপরন্তু পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি জানিয়েছেন যে এদের বেতন দেওয়া দিল্লির ব্যাপার।। দিল্লির সরকার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি টাকা দেন তাহলে কাজ হবে না হলে কিছু করার নেই।। এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে জীবিকা সেবক রা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরে ইমেলে জানিয়েছেন এই ৯১৮ জন জীবিকা সেবক দের হয় বাঁচানোর বন্দোবস্ত করা হোক না হলে তাদের পরিবার সমেত ৭ দিনের মধ্যে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর আবেদন মঞ্জুর করুক।।
সুত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে এই জীবিকা সেবক রা সরকারের মৌখিক আশ্বাসে কাজ করছিলেন।।আশা ছিল সময়মতো বেতন মিলবে আর সেই আশায় পঞ্চায়েত এর বিভিন্ন স্তরে কাজ করতেন।।। যে প্রকল্প এ তাঁরা কাজ করছিলেন সেটা একটা কেন্দ্রীয় প্রকল্প আর সেটি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়।। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে বারবার তাদের দূর্দশার কথা জানিয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস ছিল যে অন্যান্য প্রকল্পের কাজে নিয়োগ করা হবে আর তিনি সেটা ঘোষণাও করেছিলেন।। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু সুরাহা করেন নি।। করে নি পঞ্চায়েত দপ্তর ও।। দিনের পর দিন না খেতে পাওয়া মানুষ গুলো ভুগছেন অপুষ্টি তে।। চিকিৎসা করাবেন এমন অবস্থাও নয়।। অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগের শিকার হয়ে ইতিমধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।।
বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ২০০৯ সালে ১১৫০ জন কে পঞ্চায়েত এর বিভিন্ন কাজে সহায়তা করার জন্য নেওয়া হয়।। কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের চুক্তিতে কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল বি আরজেএফ প্রকল্পে।। পশ্চিম বাংলার প্রায় ১৩টি জেলায় এদের কাজ ছিল কৃষি ভিত্তিক প্রকল্প গুলো গ্রামীণ এলাকার কৃষকদের বোঝানো এবং তাদের কাজে সহায়তা প্রদান করা।। একশো দিনের কাজের দেখাশোনা করা, বিভিন্ন কাজের তথ্য অনুসন্ধান করে কম্পিউটার এ সেগুলোর হিসেব রাখা, বিধবা ও বার্ধক্য ভাতার হিসেব রাখা এক কথায় গ্রাম বাংলার উন্নয়নের যাবতীয় কাজ তাদের দায়িত্বে ছিল।। এছাড়া তাদের জনগননা ও নির্বাচনের কাজ তাদের করতে হতো।। প্রথমে তাদের বেতন ছিল ৪০০০ টাকা পরে তা বেড়ে হয় ৭৫০০ টাকা।। কিন্তু ২০১৫ সালে কোন লিখিত চিঠি না দিয়ে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।। শেষ পর্যন্ত প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।। তারপর কিছুদিন বেতন পেলেও ২০১৭ সালের মে মাস থেকে সমস্ত বেতন বন্ধ হয়ে যায়।।
এরপর একটি প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন জীবিকা সেবকদের রেগা বা অন্য কোন প্রকল্পের কাজে নিয়োগ করা হবে।। কিন্তু কথাই সার কাজের কাজ কিছুই হয়নি।।।। নিজেদের জীবনের অবস্থা জানাতে তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন প্রতিবাদ করেছেন।। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।। এরপর বিধাননগরে অনশন ও আন্দোলন করতে গেলে রাজ্যসরকারের পুলিশ তাদের বাধা দেয়।। বামফ্রন্টের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বেশ কয়েকবার এদের দূর্দশার কথা জানিয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।। কিন্তু তাদের কষ্টের অবসান হয়নি।। উপায়ান্তর না দেখে এবার সরাসরি তারা স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন জানান।।।