রঘুনাথ ভট্টাচার্য্য:চিন্তন নিউজ:২৩শে ফেব্রুয়ারি:–সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, তাতে বিচার ব্যবস্থার ভূমিকায় কিছু বৈচিত্রের আবির্ভাব অস্বীকার করা যায় না।কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নাগরিকের প্রতিবাদ প্রকাশ ও সংশোধনী আবেদন পেশের আশ্রয়স্থল হ’ল আদালত। সেই আদালতের সম্পর্কে জনমনে প্রশ্নের অবতারণা এক অশনিসংকেত ঘোষণা করে।
ইদানিং , একাধিক মামলায় শীর্ষ আদালতের ভূমিকায় সাধারন্যে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা কতটা কার্য্যকরী সেই বিষয়ে। জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করা, রামমন্দিরের জমি বা টেলিকম সংস্থাগুলির বকেয়া, সিঙ্গুর গাড়ী কারখানার জন্য অধিকৃত জমি ফেরৎ ,ইত্যাদি নানা মামলায় শীর্ষ আদালতের রায় নিয়ে জনমানসে প্রতিক্রিয়া খুব সুখের নয়।
এই পটভূমিকায়, শনিবার সুপ্রিমকোর্টে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক বিচার বিষয়ক এক সম্মেলনে ‘ বিচারব্যবস্থা এবং পরিবর্তনশীল বিশ্ব ‘ শীর্ষক এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ভাষণের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে গিয়ে বক্তা বিচারপতির সরকার প্রধানের সম্পর্কে উক্তি ও অভিব্যক্তির ব্যতিক্রমি চরিত্র আইনজ্ঞদের বৃত্তের সীমা ছাড়িয়ে জনসাধারণের মধ্যে একটা তির্য্যক উপলব্ধি সৃস্টি করল বলে খবর।
অতীতে, তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রশংসা করায় শীর্ষ আদালতের এক বিচারপতিকে আইনজ্ঞ মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী সাধারন নির্বাচনে জয়ী হলে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি
পি এন ভগবতী তাকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি লেখেন, যা আইনজ্ঞদের সমালোচনার সম্মুখীন হয় এবং তখন আইনজ্ঞদের মন্তব্য ছিল এই যে, বিচারব্যবস্থা নিজেকে সরকারের সঙ্গী হিসাবে তুলে ধরতে পারে না।
ঘটনা হল , উল্লিখিত বক্তা বিচারপতির মন্তব্য ছিল প্রধানমন্ত্রী বিশ্বস্তরের দ্রষ্টা। তিনি ‘ ভার্সেটাইল জিনিয়াস,তিনি বিশ্ববাস্তবতা নজরে রেখে স্থানীয় স্তরে করনীয় স্থির করেন’। প্রায় ১৫০০ অচল আইন বাতিল করে দেওয়ার জন্য বিচারপতি প্রধানমন্ত্রী ও সভায় উপস্থিত
টেলিকম মন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন । উল্লেখযোগ্য, কিছু দিন আগেই এই টেলিকম দপ্তরের একটি চিঠির বিষয়ে আদালতের মন্তব্য ছিল যে সেটা ‘ ‘আদালত অবমাননাকর’।
খবরে প্রকাশ, বিভিন্ন আইনজ্ঞ মহলে বলা হচ্ছে ,এটা ‘ বিরলপ্রায়’ ঘটনা,যার ফলে, সরকারের ভূমিকা বিচারের ক্ষেত্রে আদালতের নিরপেক্ষতা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে নি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যে বলা হয়েছে যে, অনেক শঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করেবিচারব্যবস্থার রায়েই আস্থারেখেছেন দেশের মানুষ।
এই ব্যতিক্রমি ঘটনায় অনেক প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিত্বই যার পর নাই ক্ষুব্ধ। তাঁদের মন্তব্য সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে। দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তথা আইন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ পি শাহ সংবাদ মাধ্যমে জানান , একজন কর্মরত বিচারপতির এমন ভূমিকা অবাঞ্ছিত, বেমানান ও অপ্রয়োজনীয়। বিচারব্যবস্থার স্বাধীন অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় তৈরি হতে পারে। আরেক প্রাক্তন বিচারপতি আর এস সোধি বলেন, এরূপ ঘটনায় বিচারব্যবস্থার অবস্থান সম্পর্কে ভুল বার্তা যাওয়া সম্ভব।আইনের শাসন অনুযায়ী অন্য যে কোনও নাগরিকের মত সরকার আদালতের কাছে সমান। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর পিঠ চাপড়ানো কোনো কর্মরত বিচারপতিকে সাজে না। তীব্র শ্লেষ জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পি বি সাওয়ান্ত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত দ্রষ্টা বলাটা এবৎসরের সেরা রসিকতা। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের তির্য্যক মন্তব্য সম্যকভাবে অনুধাবনীয়। তাঁর ব্যক্ত প্রশ্ন,কেন সুপ্রীমকোর্ট আপনার অধিকার রক্ষা করছে না, তা নিয়ে কি আর কোনো বিস্ময়ের অবকাশ আছে ?
সংবাদে আরও জানা যায় যে, যে সভায় একজন প্রবীন বিচারক প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার অপর এক সদস্যসম্পর্কে উল্লিখিত ভূয়সী প্রশংসা করছিলেন সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি উভয়েই পাশাপাশি বসেছিলেন। এই কারনেই সম্ভবতঃ এই ঘটনাকে বিরল প্রায় বলে বর্ননা করা হচ্ছে।