দেশ

পোশাক দেখে ট্রেনে উঠতে বাধা ৮২ বছরের বৃদ্ধকে


মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ৮ জুলাই: উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া রেল স্টেশনে ঘটে গেল এক নিন্দাজনক ঘটনা। অশীতিপর বৃদ্ধ রাম অবধ দাস নামে এক ব্যক্তি কানপুর- নিউ দিল্লি শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনের কনফার্ম টিকিট হাতে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে এসেও ট্রেনে সওয়ার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেন না! তাঁর অপরাধ তিনি ঐ অভিজাত ট্রেনে চড়ার মত যথেষ্ট অভিজাত পোষাকে ছিলেন না। শতাব্দী বা রাজধানী এক্সপ্রেসের মত অভিজাত ট্রেনের যাত্রী হতে গেলে উপযুক্ত টিকিট নয়, উপযুক্ত পোষাক আবশ্যক! এই ঘটনার সাক্ষী রইল একুশ শতকের আধুনিক ভারতের এটাওয়া রেল স্টেশনে থাকা বহু মানুষ।

খবরে প্রকাশ ৮২ বছরের বৃদ্ধ পূজারী রাম অবধ দাস কানপুর থেকে দিল্লি গামী শতাব্দী এক্সেপ্রসে এটাওয়া থেকে গাজিয়াবাদ যাওয়ার জন্য এটাওয়া সেটশনে ট্রেনে উঠতে গেলে নির্দিষ্ট কোচের পুলিশ কর্মী এবং কোচ অ্যাটেনডেন্ট তাঁকে বাধা দেন। রেলকর্মীরা বৃদ্ধের টিকিট সনাক্ত না করেই তাঁকে বলেন তিনি ভুল ট্রেনে চাপছেন। তার লোকাল ট্রেন আরও কয়েক ঘন্টা পর কানপুর ছেড়ে এই স্টেশনে আসবে। বারবার বলা সত্ত্বেও তাকে আটকানো হয়। ইতিমধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিলে বৃদ্ধের যাত্রা ভঙ্গ হয়। স্তম্ভিত রাম অবধ বাবু স্টেশন মাস্টারকে গিয়ে সব জানালে স্টেশন মাস্টার তার টিকিট পরীক্ষা করে দেখেন, তার কাছে শতাব্দী এক্সপ্রেসের বৈধ টিকিট আছে। (নাম- রাম অবধ দাস, বয়স- ৮২ যাত্রা পথ – এটাওয়া থেকে গাজিয়াবাদ, পি.এন.আর. নং ২১৬৪৩৭১৫৫৬, কোচ নং সি২, সিট নং – ৭১) সব দেখে স্টেশন মাস্টার তাঁকে উত্তর মধ্য রেলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন। অভিযোগ পেয়েই উত্তর মধ্য রেলের জনসংযোগ আধিকারিক অজিত কুমার সিং ঘটনার সত্যতা যাচাই করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে বলে পুরোহিত কে আশ্বস্ত করেন। বরাবঁকির বাসিন্দা রাম অবধ দাসের এক শিষ্যা সুজাতা সিং জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুরোহিত বাবা তাঁর আটোয়ার বাড়ী থেকেই পুজো করে ফিরছিলেন। ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্তম্ভিত বৃদ্ধ রাম অবধ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন- “মনে হচ্ছে আমরা ব্রিটিশ যুগে বাস করছি। যথাযথ টিকিট থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অন্য ধরনের পোশাকের জন্য আমাকে ট্রেনে উঠতে দেওয়া হলো না!” বাস্তবিকই ইংরেজ আমলে রেলে চাপা নিয়ে ভারতীয়দের প্রতি এ ধরনের অমানবিক আচরণের অনেক প্রমাণিত কাহিনী আছে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর দুই দশক উত্তীর্ণ ডিজিটাল ভারতে এ হেন ঘটনা যথার্থই ধিক্কার জনক। শুধুমাত্র পোষাকের আভিজাত্য দিয়ে মানুষকে বিচার কোনো ভাবেই মানা যায় না! ভিখারির নোংরা বেশে নয়, যোগী আদিত্য নাথের খোদ উত্তরপ্রদেশে ‘রাম অবধ’ নামের এক পূজারী পুরোহিতকে সরকারি কর্মচারী কর্তৃক হেনস্থা যথার্থই বিজেপির রাম রাজ্যের উপর প্রশ্ন চিহ্ন টেনে দেয়!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।