দেশ রাজ্য

অল ইন্ডিয়া পিপলস ফোরাম আয়োজিত সভায় কান্নন গোপীনাথন‌ এন আর সি নিয়ে বক্তব্য রাখলেন।


মল্লিকা গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:১৭ই নভেম্বর:-বিরসা মুন্ডা জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে কলকাতা ভূপেশ গুপ্ত ভবনে অল ইন্ডিয়া পিপলস ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় কান্নন গোপীনাথন। বিষয়- এন আর সি বিপর্যয় ও মোকাবিলা!

বর্তমান ভারতের একটি আতঙ্কিত শব্দ এন আর সি। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে এন আর সি মানে অস্তিত্বের সংকট!বর্তমান কেন্দ্র সরকার জাতীয় পঞ্জিকরনের নামে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে গিয়ে মানুষকে যে হয়রানি আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে সে বিষয়ে পদত্যাগী অফিসার কান্নন গোপীনাথন তার বক্তব্যে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন এন আর সি প্রসঙ্গে প্রথম প্রশ্ন, কে অনুপ্রবেশকারী এবং কিভাবে সেটা নির্নিত হবে? এবং দ্বিতীয় প্রশ্ন, সরকার যে সব ডকুমেন্টের ভিত্তিতে স্থির করছে একজন ভারতীয় উদ্বাস্তু কিনা বা যার ডকুমেন্ট নেই তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে কি না?

কান্নন বলেন, যথাযথ প্রামান্য কাগজ অনেকের কাছেই থাকবে না। এই না থাকার অনেক কারন যেমন, এ দেশে জন্মানো এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি জীবনের প্রান্তসীমায় এসে কতকগুলো কাগজ তাঁর বা তাঁর পরিবার দেশের নাগরিক কিনা প্রমাণ করবে অর্থাৎ ঐ কাগজ বলবে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে না থাকতে দেওয়া হবে! তাই এমন অনেকেই সেই তুলট কাগজ গুলি সংরক্ষণ করেই রাখেননি! অনেক প্রান্তিক মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিক, আর সেই সব মানুষে যারা বারবার খরা, বন্যা, ভয়ংকর ঝড়বৃষ্টি ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে কোনো রকমে টিকে আছে তাদের কাছে ডকুমেন্ট থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া দেশের অগণিত মানুষ অশিক্ষিত তারা তো এই ডকুমেন্টের মূল্যই বোঝে না! আবার অনেকের ডকুমেন্ট জোগাড় হওয়ার পর ও বিভিন্ন ক্ল্যারিক্যাল ভুলভ্রান্তিতে মানুষ বিপদে পড়ছে। এন আর সি তে এইসব মানুষ দের অযথা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

গোপীনাথন বলেন, স্বাধীনতার পর অনেক বিতর্কের শেষে সংবিধান প্রণেতারা সংবিধানে লিখিত ভাবে বলেছেন যারা এদেশে জন্মেছে তারা প্রত্যেকে ভারতের নাগরিক। বর্তমান সরকার সংবিধানকেও বদলে ফেলার চেষ্টা করছে! নাগরিকত্ব অনেকগুলি অধিকারের সমষ্টি, এন আর সি অসংখ্য মানুষকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা মাত্র।তাঁর মতে এন আর সি মূলত গরীব বিরোধী প্রকল্প। পছন্দসই কাগজ পত্রের অভাব আর মুসলমান হলেই সে উদ্বাস্তু! এন আর সি একই সঙ্গে গরিব ও মুসলিম বিরোধী পরিকল্পনা! তাছাড়া যে আসাম দিয়ে এন আর সি শুরু হয় সেখানে ছ’ বছর সময় নেওয়া হয়েছিল তা এখনও সম্পূর্ণ হয় নি। সারা দেশে এখনও পঁচিশ ত্রিশ বছর সময় নিলেও এই সমস্যার সমাধান হবে না অথচ দেশের মানুষ এন আর সি আতঙ্কে ভুগতে থাকবে।

কান্নন এন আর সি বিষয়ে বলতে গিয়ে নোটবন্দী এবং কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও তুলে ধরেন! তিনি বলেন কালো টাকা বিলোপের নামে নোটবন্দীর ফলে গরিব মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করেছে কিন্তু কালো টাকা বিলোপ হয় নি! আবার ৩৭০ ধারা বিলোপ করতে গিয়ে সরকার গনতন্ত্র কে অস্বীকার করে বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার, কাশ্মীরে ইনটারনেট পরিষেবা কেটে দিয়ে যে অন্যায় করেছে মানুষ তার বিরুদ্ধে একটি প্রশ্ন ও তোলেনি, এমন কি সরকারি মিডিয়া মিষ্টি বিতরণের ছবি দেখিয়ে মানুষ কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে! আর এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই তিনি তার ঐ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন তাঁর পদত্যাগের কারণ সরকারের উপর অহেতুক রাগ নয়!

গোপিনাথনের জোরালো বক্তব্য গনতন্ত্রের মূল শর্ত মতামত প্রকাশ। কাশ্মীরে মানুষের সেই বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে! আর এখন সরকার জনগণের জন্মগত অধিকার কুক্ষিগত করতে চাইছে! এই অফিসার জনগন কে উদ্বোধিত করে বলেন, কৃষকদের প্রবল প্রতিবাদের মুখে সরকারের “জমি অধিগ্রহণ আইন” লঘু করার প্রচেষ্টা যেমন রোখা সম্ভব হয়েছিল তেমনি এন আর সি ইস্যু কেও জোরালো আন্দোলনের দ্বারা রদ করা সম্ভব।

কলকাতা হলে কান্নন গোপীনাথনের জোরালো বক্তব্য মানুষের চেতনায় নাড়া দিলে এখনও সময় আছে, দেশের মানুষের স্বার্থে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণকে ও থামিয়ে দেওয়া সম্ভব! তাতে ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে কোটি কোটি টাকা অপব্যয় রোধ করা যায়। গোপীনাথনের আদর্শে পরামর্শে মানুষ একজোট হয়ে কেন্দ্রের অনৈতিক অমানবিক এন আর সি নামক কাঁটাতারের বেড়া ভাঙতে পারলে অসহায় মানুষের আতঙ্ক ও দূরীভূত হয়!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।