রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ২৫ আগষ্ট: দু’টি ঘটনায় নাগরিক বিবেক স্তব্ধ করে দিয়েছে। ১) সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরী কাশ্মীরের অসুস্থ নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সরকারি প্রতিরোধে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও বিফল হয় যখন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি সহ স্বীকৃত বিরোধী দলের বারোজন নেতাকে শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।
অভূতপূর্ব এ ঘটনায় সমস্ত শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক যার পর নাই বিস্মিত, স্তব্ধ। ৫ই আগস্টের পর থেকে গৃহবন্দি অসুস্থ তারিগামির কোনো খোঁজ নেই বলে সংবাদে প্রকাশ। সীতারাম ইয়েচুরি বাধ্য হয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হতে অসুস্থ তারিগামির সন্ধানে। সংবিধানের ৩২ নং ধারায় তাঁর এই আবেদন। সংবিধানের ২১ নং ধারায় বর্ণিত জীবন ও ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘিত। এর প্রতিকারের জন্য তিনি হেবিয়াস কর্পাস ধারায় মামলা করেছেন। ২৬শে আগস্ট এই মামলার শুনানি।
২) “দেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রাপ্য সম্মান দিতে গ্রাহ্য না করে তার উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে” – অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স ইউনিয়ন এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ২২ তম সম্মেলনের উদ্বোধন করে দেশের বিশিষ্ট বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, দেশের সমস্ত নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামো আজ সমূহ বিপদের মধ্যে রয়েছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা আজ আক্রান্ত। দেশের সংবিধানও আজ তার নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পারছে না।
বিস্তৃত ব্যখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন যে, বাইরের চাপে নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষতা ও অবাধ নির্বাচনের প্রশ্নে সদস্যরা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে অটল থাকতে ব্যর্থ, সিবিআই – ইডির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তাদের নিরপেক্ষতা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিজস্ব ক্ষমতা খর্ব করে একরৈখিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ করা হয়েছে।
বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করার অভিযোগের উদাহরণ স্বরূপ তিনি ‘রাফালে’ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে জানান এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা। তিনি
বলেন, শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন ঐ বিমান কেনার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য ও নথি মুখবন্ধ খামে আদালতেজমা দিতে। সরকার মুখবন্ধ খামেই নথি জমা দিয়েছিল। কিন্তু আদালত খাম খুলে দেখে কোনো নথিতেই কারোর সই নেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় দেশের শীর্ষ আদালতও এই বিচ্যুতির ব্যাপারে কোনও
কড়া ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পরিবর্তে সিবিআই প্রধানকে অপসারিত করে পছন্দসই অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দুর্নীতির বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিড়লা ও সাহারা গোষ্ঠীর ১১৫ কোটি টাকা বিজেপির নির্বাচনী তহবিলে ব্যবহার হয়। তার সমস্ত নথি আছে। ওই টাকার মধ্যে ৪০ কোটি টাকা নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচন কাজে ব্যবহার করা হয়। তার বিস্তৃত হিসাব ও তথ্য সব রয়েছে। আয়কর দপ্তর সম্পূর্ণ তথ্য অবগত। কিন্তু মাননীয় বিচারপতি অরুণ মিশ্রের আদালতে এই নির্বাচনী দুর্নীতির মামলা উঠলে নথি ও তথ্য হারিয়ে যাওয়ার কারণে তা খারিজ হয়ে যায়।
প্রশান্ত ভূষণ এই বার্তা দেন যে, বিচার প্রার্থীদের কাছে ন্যায়বিচার পৌঁছে দিতে রাস্তায় নামা ছাড়া গত্যন্তর রইল না।