বিশেষ প্রতিবেদন: মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:১১ই সেপ্টেম্বর:– সেল, সেল, সেল… ভারতে সেল চলছে! দেশের বর্তমান শাসক রা হয়ে উঠেছেন যেন কোনো বিপনন সংস্থা। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট করার জন্য সস্তা কোম্পানী গুলি যেমন একটার সঙ্গে আর একটা ফ্রি সেল দেয়, ঠিক সেই পদ্ধতিতে ভারতের রাষ্ট্র নেতৃত্ব দেশের তাবড় তাবড় সম্পত্তি বিলগ্নীকরণের নামে বিক্রির নেশায় মেতেছে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইনে আগামী চার বছরে দেশের মোট ২৫টি বিমানবন্দর বিক্রি করে দেশের হাতে আসবে ৩৬৬০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই মোদী ঘনিষ্ট আদানী গোষ্ঠীর হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে আমেদাবাদ, গুয়াহাটি, লক্ষ্ণৌ, ম্যাঙ্গালোর, জয়পুর, তিরুবানন্দপুরের মতো ব্যস্ত শহরের ছ’ টি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর।
শ্রীমতী সীতারামনের ঘোষণা অনুযায়ী আরও তেরো টি বিমানবন্দর বিক্রির জন্য প্রস্তুত। মজার কথা হলো এবার এই তোরোটি বিমানবন্দর পৃথক পৃথক ভাবে নিলাম ডেকে বিক্রি নয়! এবার ক্রয়কারী সংস্থার জন্য সুবর্ণ সুযোগ; একটি বিমানবন্দর ক্রয়ের সঙ্গেই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মিলবে আরও একটি, কোথাও বা দুটি বিমানবন্দর। বর্তমানে বিক্রির তালিকাভুক্ত তোরো টির মধ্যে ছ’টি বিশেষ লাভজনক বিমানবন্দর হলো, ভুবনেশ্বর, বারানসী, অমৃতসর, ইন্দোর, রায়পুর এবং ত্রিচি। আর এই ছ’টির সাথে ফ্রি মিলবে যথাক্রমে- ভুবনেশ্বর+ঝার্সুগুদা, বারানসী +কুশীনগর, অমৃতসর+ কাংরা ও গোয়া, ইন্দোর+ জব্বলপুর, রায়পুর+ জলগাঁও, ত্রিচি+সালেম।
গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, অক্টোবরের মধ্যেই এই বিক্রি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে। মন্ত্রকের অভিমত হলো করোনার কারণে বন্দর পরিবহনে বিপুল পরিমাণ লোকসান ঘটেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেটে গেলেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরলে বিমানবন্দর গুলি সম্পূর্ণ চালু হবে এবং বিমান পরিষেবাও যথেষ্ট লাভজনক হবে। অচিরেই ৮০শতাংশ যাত্রী পরিবহণ হবে বলেও সরকার মনে করে। তবে আপাতত বিমানবন্দর বিক্রির মাধ্যমে দেশের হাতে নগদ অর্থ আমদানির জন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারের আরও বক্তব্য কর্পোরেট সংস্থা গুলি বিমানবন্দর ক্রয়ের জন্য যথেষ্ট উৎসাহ প্রকাশ করেছে।
মোদী মন্ত্রক যে যুক্তি খাড়া করে ভুবনেশ্বর, অমৃতসর, ত্রিচি ইত্যাদির মত করোনা আবহেও লাভকারী বিমানবন্দর বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে দেশের মঙ্গলের কথা মাথায় রেখে নয়। মোদী সরকার শিল্প সংস্থা থেকে পরিবহণ সমস্ত জাতীয় সম্পত্তি বিলগ্নীকরণের নামে দেশকে বেসরকারী হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে বদ্ধপরিকর। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কেবলমাত্র নিজেদের লাভের জন্য ভারতবাসীর জীবনে যে অনিশ্চয়তা, পরনির্ভরতা চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করেছে তা ভারতবাসীর জাতীয়জীবনে এক অশনি সংকেত।