প্রতিবেদনে দেবু রায়: চিন্তন নিউজ:২২ জুন,২০২২: — “অগ্নিপথ”প্রকল্প বেশ কিছু প্রশ্ন কে সামনে তুলে ধরলো:-
১) ৪বছরের জন্য নিযুক্ত এই জওয়ানরা যারা নিজেদের যৌবন,শারীরিক ক্ষমতা,মেধা দেশের জন্যে ব্যয় করলেন এবং চাকরি চ্যুত হবার পর পেলেন না পেনশন, গ্র্যাচুইটি বা কোনো হেল্থ ইন্সিওরেন্স (health insurence) তাহলে তাদের বাকি জীবন কিভাবে কাটবে? হ্যা সরকার বলেছেন এদের আধা সামরিক বাহিনী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ,কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়২০২২সালে যেখানে মোদী সরকার দুর্বল অর্থনীতির জন্যে অস্থায়ী সেনা নিয়োগ করছেন বা বিভিন্ন চাকরি সংকোচনের পথ বেছে নিয়েছেন সেখানে ৪বছর বাদে এই সেনাদের জন্য চাকরি আদৌ থাকবে তো,?
মোদী সরকারের”অগ্নিপথ প্রকল্প” নিয়ে গোটা দেশ এখন তোলপাড়।এই প্রকল্প অনুসারে ভারতবর্ষের১৭থেকে২৩ বছরের যুবকরা১২শ্রেণী পাস করার পর মেধা ও মেডিক্যাল টেস্টের ভিত্তিতে ৪বছরের জন্যে সেনা বাহিনীতে নিযুক্ত হতে পারবে এবং এরা”অগ্নিবীর”নামে পরিচিতি পাবেন।৪বছর পূর্ণ হলে এদের মধ্যে ২৫% স্থায়ী চাকরি করার সুযোগ পাবেন আর বাকি ৭৫%জওয়ান কিছু এককালীন টাকা আর আশ্বাস নিয়ে চাকরি চ্যুত হবেন।
২)এই সব জওয়ানরা তাদের জীবনের একটা মুখ্য সময় ব্যয় করলেন বন্দুক হাতে দেশ কে রক্ষা করার জন্যে সুযোগ পেলেন না চাকরি পাবার জন্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা রপ্ত করার,শিক্ষা গত যোগ্যতার দিক থেকেও এরা পিছিয়ে রইলেন ,তাহলে এতো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও কি চাকরির দ্বার এদের জন্যে খোলা থাকবে?কৌশল গত দিক থেকে দক্ষ এই সেনাদের উগ্রপন্থী (terrorist) হবার সম্ভাবনাই বেশি থেকে যায়না কি?কারণ।হতে বন্দুক আর পেটে খিদে সর্বোপরি উগ্রপন্থী হলে অগাধ টাকার হাতছানি _এইসব এড়ানো এদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।এবার হিসাব করুন প্রতি বছর ৭৫% সেনা চাকরি চ্যুত হয়ে যদি টেরোরিস্ট গ্যাং এ যোগ দেয় তাহলে সমাজ কি পরিমাণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।
৩)মানুষ যখন মাসিক বেতনে জীবন চালাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন জীবন যাত্রার একটা মান চলে আসে,হঠাৎ করে যদি সেই বেতন হাতছাড়া হয়ে যায় তখন জীবনে যে দৈন্যতা নেমে আসে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন ,ফলে এই জওয়ানরা অনেকেই সুইসাইড এর পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে।তাহলে ৪বছর বাদে কি আমরা সৈনিক দের সুইসাইড কাউন্ট করতে থাকবো।
৪)সাময়িক ভাবে নিযুক্ত সেনাদের মধ্যে সেই আনুগত্য ও দেশ ভক্তি থাকেনা যা দেশকে এবং দেশ বাসীকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট।ইতিহাস কিন্তু আমাদের বারবার দেখিয়েছে অস্থায়ী ভাড়াটে সেনাদের দিয়ে দেশ রক্ষা করা যায়না,আর টা যদি যেত তবে প্রাচীন বহু সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ত না।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জী আমাদের দেশে ইয়ুথ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি। এদের স্কিল লেভেল বাড়ান, শিক্ষা সম্প্রসারণের দিকে নজর দিন,সরকারি চাকরি তৈরি করুন,উল্টোপাল্টা যোজনা দিয়ে মানুষের চোখে ধুলো দেওয়া বন্ধ করুন।ইউ কে, ইউএস এ কে অনুসরণ করা বন্ধ করুন ,আমাদের দেশের কাঠামো আর উন্নতশিল দেশের গঠন এক নয় তাই সব ব্যবস্থা সব দেশে খাপ খায় না।অবিলম্বে বাতিল করুন এই প্রকল্প,না হলে যে আগুন সারা দেশে জ্বলে উঠেছে তার মূল্য নিদারুণ ভাবে চুকাতে হবে।
আরো প্রশ্ন থেকে যায়..স্থায়ী বাহিনীর কার্যকারিতা আর অস্থায়ী বাহিনীর কার্যকারিতা সমান হবে তো? শৃঙ্খলাপরায়ণতা যা সৈন্যদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু বলে গণ্য হয় সেটা ধরে রাখার সমস্যা দেখা দেবে নাতো? এই সব প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর আমাদের জানা দরকার।মোদী সরকারের সেনা বাহিনীর আধুনিকীকরণ বা মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্ট (Make In India Project) কোনো টাই কিন্তু অস্থায়ী সেনা নিয়োগের মধ্য দিয়ে রূপায়িত হতে পারেনা।
আর এরই সাথে কিছু প্রশ্ন অবশ্যই তুলে ধরার প্রয়োজন যারা অগ্নিপথ প্রকল্পর সমর্থনে মাঠে নেমে পড়েছেন তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন।
1)আপনারা কেন রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট গুলো ত্যাগ করছেন না, ইংরেজি তে একটা কথা আছে চ্যারিটি বিগিনস্ এ্যাট হোম ( charity begans at home)। আপনারা পেনশন না নিয়ে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন কেন করছেন না।
অর্থাৎ নিজেরা সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করবো আর দেশের যে গরিব ছেলে গুলো একটা ভবিষ্যত সুরক্ষার স্বপ্ন নিয়ে সেনা বাহিনী তে যোগদান করবে তাঁদের কোনো অধিকার নেই আপনাদের মতোন সুযোগ সুবিধা পাবার, বাহ্ রে বিজ্ঞ মানুষ ।
২)অনেক সেনা অফিসার আছেন যারা বাহিনী থেকেও পেনশন পাচ্ছেন আবার মন্ত্রী বাএমপি বা এমএলএ বা সরকারী কোনো না কোনো সংস্থায় নিযুক্ত হয়ে সেখান থেকেও কামাই করছেন কেন ?. দয়া করে এই গুলো বন্ধ করে, তারপরে ভাষণ দিন।
৩)সরকার বলছে যে ৭৫%চার বছর পরে রিটায়ারমেন্ট করবেন তাঁদের তাঁদের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে মাত্র ১০%আবার কোথাও তার চেয়েও কম । কি নিশ্চয়টা আছে?. এটা যে ব্ল্যাক মানি আনা বা পনোর লক্ষর মতোন আর একটা জুমলা হবেনা তার নিশ্চয়তা কোথায় ? আসলে সরকার বিজেপির একটা চাল ছলনা দিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর।